আপনি পড়ছেন

দীর্ঘ এক মাসের সফর শেষে হাজিরা দেশে ফিরছেন। কাবার মেহমানের মর্যাদা সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, হাজি যখন হজ শেষ করে, তখন সে পুরোপুরি নিষ্পাপ শিশুর মত হয়ে যায়। শিশুর যেমন গোনাহ নেই। একজন হাজিরও কোনো গোনাহ নেই। আরেক হাদিসে হুজুর (সা.) বলেছেন, কবুল হজের বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। এই জান্নাতি মানুষগুলোকে যখন তোমরা দেখবে, তাদের সঙ্গে মুসাফাহা করবে। তাদেরকে বলবে, তোমাদের জন্য দোয়া করতে। কারণ হাজিদের হাতে কাবার স্পর্শ, মুখে কবুলিয়াতের জাদু লেগে থাকে। তারা যা স্পর্শ করবে, যে দোয়া করবে তাই কবুল হয়ে যাবে। মিশকাতুল মাসাবিহ। 

hajj 2019

হাজি মানেই অনন্য মানুষ। অন্যভাবে বলা যায়, দুনিয়ার বুকে ভাসমান জান্নাতি মানুষ। কারণ হাজিই একমাত্র মানুষ, যিনি ইহরামের কাপড় গায়ে জড়িয়ে প্রভুকে বলে এসেছেন, লাব্বাইক। লাব্বাইক মানে হাজির। জীবনের সবক্ষেত্রে প্রভুকে হাজির জানার, হাজির মানার এক আশ্চর্য মন্ত্র লাব্বাইক।

যিনি প্রভুকে হাজির জানতে পারেন, তার পক্ষে কখনোই গোনাহে জড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এই গোনাহীন জীবনের পথ চলা শুরু হয় হজের মাধ্যমে। আর তাই হজের পুরষ্কার জান্নাত ঘোষণা করেছেন নবিজি (সা.)।

হজ মানে গোনাহীন জীবনযাপন করা। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি- মানুষ গোনাহ করে মাফ নেয়ার জন্য হজে যায়, হজ থেকে এসে আরো বড় বড় গোনাহ করে।

একজন পীর সাহেব তার বাইতুল্লাহ মুসাফির মুরিদদের উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন, দেখো, তোমাদের দেশে মানুষ হজের উল্টো অর্থ করে নিয়েছে। ফলে কেউ যদি হজের আগে চোর থাকে, হজ করে এসে ডাকাত হয়। আবার হজে গিয়ে সব গোনাহ মাফ করিয়ে নেয়।

হে বাইতুল্লাহর মুসাফিররা! মনে রেখো, কাবার অলি-গলি ঘুরলেই হজ হয় না। হজ হলো ‘আর গোনাহ করব না’ এ শপথ করা। হজ শব্দের মানেই হচ্ছে শপথ করা, পণ করা, ইচ্ছে করা।

হজ শেষে যখন মুরিদরা ফিরে আসল, তখন আবার পীর সাহেব বললেন, বাবারা! দীর্ঘ সফর শেষে তোমরা দেশে ফিরেছো। তোমাদের শরীরে এখনো কাবার গন্ধ লেগে আছে। চোখে মুখে এহরামের শুভ্রতা চিক চিক করছে। এতদিন তোমরা প্রতীকী হজ করে এসেছো। এখন শুরু হলো আসল হজ। বাকি জীবনও যদি, শরীরে কাবার গন্ধ আর চোখে মুখে এহরামের শুভ্রতা ধরে রাখতে পারো, জীবনের সব ক্ষেত্রে এহরামের মত সাদা-নির্ভেজাল-দুনীতিমুক্ত থাকতে পারো, তাহলে মৃত্যুর সময় আল্লাহপাক তোমাকে ডেকে বলবেন- লাব্বাইক। সারাটি জীবন তুই আমাকে লাব্বাইক বলেছিস। এখন থেকে অনন্ত সফরে আমি মাওলা তোকে লাব্বাইক বলব। লা খাওফুন আলাইহিম ওয়ালাহুম ইয়াহজানুন! তোর কোনো ভয় নেই, কোনো চিন্তাও নেই।

আফসোস! এখনকার হাজিদের মধ্যে এহরামের শুভ্রতা ধরে রাখার কোনো সাধনা লক্ষ্য করা যায় না। হজ যে করে আর যে হজ করেনি, এ দু’জনের জীবনযাপনে কোনো পার্থক্য থাকে না। বরং দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য, যে হজ করেনি তার হৃদয়ে যতটুকু আল্লাহর ভয় আছে, কাবা ঘুরে আসা মানুষের মনে এর চেয়েও অনেক অনেক কম আল্লাহর ভয় কাজ করে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে।

তাছাড়া হজ কী, কীভাবে জীবনজুড়ে এহরামের শুভ্রতা ধরে রাখা যায়- এসব বলার মত মুর্শিদ এখন আর ক’জন আছে? তাইতো জাতির ভাগ্যে এমন গভীর অন্ধকার নেমে এসেছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর