আপনি পড়ছেন

নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গারা ক্রমশ দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকিতে পরিণত হচ্ছে। কক্সবাজারের উপকূলীয় শরণার্থী শিবিরগুলোতে বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। ইয়াবা, মানব পাচার ও হাটবাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের অভ্যন্তরে একাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বাড়ছে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা। চলছে অস্ত্রের মহড়াও। বাড়ছে খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক চোরাচালানসহ নানা অপরাধও।

rohingya crisis 1

দিন যত যাচ্ছে ততই অবনতির দিকে যাচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা শিবিরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। মানবতার কারণে যাদের আশ্রয় দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা, সেসব রোহিঙ্গারাই এখন তাদের কাছে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইয়াবা পাচার, ডাকাতি-চুরি ও হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে গত দুই বছরে চার শতাধিকের বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলার আসামি হাজারো রোহিঙ্গা। এমন পরিস্থিতিতে পরবর্তী দিনগুলো নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয়রা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছরে রোহিঙ্গা শিবিরে নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন রোহিঙ্গা। এছাড়া ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আরও ৩২ রোহিঙ্গা নিহতের কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের প্রবেশের পর ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, চুরি, মাদক ও মানবপাচারসহ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৭১টি। যার মধ্যে মাদক মামলা ২০৮, হত্যা মামলা ৪৩ ও নারী সংক্রান্ত মামলা ৩১টি। এসব মামলায় আসামি ১০৮৮ রোহিঙ্গা। তাই এদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, দিন দিন রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি তারা চুরি, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। শিবির থেকে বেরিয়ে স্থানীয়দের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটছে।

পুলিশসহ স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, টেকনাফ ও উখিয়ার শিবিরে সাতটি করে সন্ত্রাসী বাহিনী আছে। এর মধ্যে টেকনাফের ‘আবদুল হাকিম বাহিনী’ বেশি তৎপর। এই বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য যখন-তখন লোকজনকে অপহরণ করে। মুক্তিপণ না পেলে হত্যা করে লাশ গুম করে। ইয়াবা, মানবপাচারে যুক্ত থাকার পাশাপাশি এ বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গা নারীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটায়।

উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এদিকে দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর কারসাজিতে পরপর দুই বার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যেখানে রোহিঙ্গাদের এমন অপরাধ কর্মকাণ্ড ও সহিংস আচরণে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকেও ভাবিয়ে তুলেছে।

কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আয়াছুর রহমান জানান, রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয়রা নিহত হয়েছে রোহিঙ্গাদের হামলায়। রোহিঙ্গাদের হামলার শিকার হয়েছে স্থানীয় অধিবাসী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। স্থানীয় জনগণ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের আতঙ্কে ভুগছে। ভবিষ্যতে আরও কঠিন পরিস্থিতির শিকার হবেন স্থানীয়রা এমন আশংকা করছেন।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, আগে রোহিঙ্গারা খাবারসহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য দৌঁড়াদৌঁড়ি করতো। এখন তাদের খাবার ও সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য কোথাও দৌঁড়াতে হয়না। এনজিওরা তাদের ঘরে ঘরে সব প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছিয়ে দিচ্ছে। কোন কাজ ও সংসারের পিছুটান না থাকায় রোহিঙ্গারা নানা অপকর্মে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ইয়াবা রাজ্য বানিয়েছে। ধর্ষণ, খুন, হামলা তাদের নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে। তাদের কারণে স্থানীয়রা এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তা ঝুঁকি ও আতংকের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয়রা।

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ দমনে র‌্যাবের প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। পাশাপাশি মাদক পাচারে জড়িত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। র‌্যাবের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে। টহল জোরদার করেছে র‌্যাব।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেয়ার পর অবস্থান যতটা নীরব ছিল, এখন তেমনটি নেই। আগে তাদের চাহিদা ছিল খাদ্য এবং চিকিৎসার ওপর। এখন রেশনের খাবার খেয়ে আলস্যতার কারণে তাদের মাথায় দুষ্টবুদ্ধি কাজ করে প্রতিনিয়ত। তাছাড়া ক্যাম্পগুলোতে অর্ধেকেরও বেশি যুবক। ফলে অপরাধ প্রবণতা বাড়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে সংখ্যাগত দিক দিয়ে একটু খারাপের দিকেই যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নিয়মিত টহল ও অভিযান জোরদার করেছে পুলিশ। কঠোর অবস্থান ও নজরদারিতে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশাল এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পরবর্তী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার পর নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার, ত্রাণ সামগ্রী বণ্টন নিয়ে বিরোধ, পূর্ব-শত্রুতার জের, ইয়াবা কারবার, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে অপহরণ, খুন, ধর্ষণের মতো অনেক ঘটনা ঘটেছে।

তিনি আরো বলেন, মাদকের চালান দেশে অনুপ্রবেশকালে বিজিবি, পুলিশের সাথে বিভিন্ন সময় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় গত দুই বছরে উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে ৩২ জন রোহিঙ্গা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। তৎমধ্যে উখিয়ায় ২৪ জন, টেকনাফে ৮জন জন নিহত হয়।

সর্বশেষ গত ২৩ আগস্ট গভীর রাতে টেকনাফের জাদিমুরা পাহাড়ের পাদদেশে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যায় জড়িত দুই রোহিঙ্গা নিহতের কথা জানায় পুলিশ। নিহতরা হল- জাদিমুরা ক্যাম্পের বাসিন্দা মো: শাহ ও আবদুর শুক্কুর।

গত ২২ আগস্ট যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে (৩০) গুলি করে হত্যা করা হয়। তার বড় ভাই ওসমান গণি অভিযোগ করেন, একদল রোহিঙ্গা তার ভাইকে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং পাশের একটি পাহাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

ওমর ফারুক খুনের ঘটনায় শুক্রবার শতাধিক বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতা একটি রোহিঙ্গা শিবিরে হামলা চালিয়ে অস্থায়ী ঘরবাড়ি ও এনজিও অফিসগুলোতে ভাঙচুর করে। তারা টায়ার এবং প্লাস্টিকের বক্স জ্বালিয়ে টেকনাফ পৌরসভা থেকে লেদা পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়ক তিন ঘণ্টা অবরোধ করে। রোহিঙ্গা নেতা নূর মোহাম্মদের বাড়িও জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

পরে পুলিশ প্রশাসন হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেয়।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর চুক্তি সই করে। পরে দুই দেশ ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ নামে চুক্তি করে। ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ অনুযায়ী, প্রত্যাবাসন শুরুর দুই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

রোহিঙ্গাদের প্রথম দলের ফেরার কথা ছিল গত বছরের ১৫ নভেম্বর। কিন্তু রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ না থাকায় রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি না হওয়ায় এ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। দ্বিতীয়বারের মতো এমন পদক্ষেপ নেয়া হয় গত ২২ আগস্ট। কিন্তু ব্যাপক প্রস্তুতির পরও রোহিঙ্গাদের অনিচ্ছার কারণে সেটাও আটকে যায়। ইউএনবি।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.