আপনি পড়ছেন

নতুন মানেই আনন্দ। নতুন মানেই শক্তি। তাইতো ভোরের নতুন সূর্য দেখে আনন্দে হেসে ওঠে মন। দুঃখ-কষ্ট, হতাশা-জীর্ণতা মুছে দিতে প্রকৃতিতে এমন নতুনের সমাহার ঘটিয়েছেন মাবুদ রাব্বানা। কিন্তু সব নতুন আনন্দের নয়। কিছু নতুন ব্যথার। কিছু নতুন কষ্ট আর যন্ত্রণার। পুরোবিশ্ব যখন আনন্দের জোয়ারে ভেসে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় হেসে-খেলে। মুসলমানরা তখন হিজরি বর্ষকে বরণ করে নেয় ব্যথা ফুলের মালা গেঁথে। হ্যাপি নিউ ইয়ার বা শুভ নর্ববর্ষ নয়- মুসলমানের নতুন বছর শুরু হয় হায় হোসেন! হায় হোসেন! মাতম করে। 

muharram 1

তাইতো নতুন বছর এখন আর আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে না মুসলমানদের কাছে। কথা ছিলো, নতুন বছরের বাঁকা চাঁদ দেখে নতুন শক্তিতে জেগে ওঠবে মুসলমান। পুরনো দুঃখ ভুলে নতুনের আনন্দে হাসবে সবার প্রাণ। কিন্তু মহররমের চাঁদ যেন পুরনো ক্ষতে ব্যথার প্রলেপ বুলিয়ে দেয় নতুন করে। পুরো বছর কোনো রকম কেটে গেলেও মহররম এলেই আর নিজেকে মানাতে পারেন না হোসাইন প্রেমিক, কারবালা প্রেমিকরা।

সুফি কবি নজরুল ছিলেন হোসাইন প্রেমিকদের একজন। তাইতো মহররম এলেই হু হু করে কেঁদে ওঠে তার মন। কাঁদান বাংলার মানুষকেও। যাদের হৃদয় কাঁদে না হোসাইনের জন্য, তাদেরকেও তিনি ডেকে ডেকে বলেন, হে পাষাণ হৃদয়! কেঁদে হও ধন্য।

‘ওরে বাঙলার মুসলিম, তোরা কাঁদ!
এনেছে এজিদি বিদ্বেষ পুনঃমহর্রমের চাঁদ।
এক ধর্ম্ম ও এক জাতি তবু ক্ষুধিত সর্ব্বনেশে
তখতের লোভে এসেছে এজিদ কমবখতের বেশে!
এসেছে ‘সীমার’ এসেছে ‘কুফা’র বিশ্বাসঘাতকতা,
ত্যাগের ধর্মে এসেছে লোভের প্রবল নির্ম্মমতা,
মুসলিমে মুসলিমে আনিয়াছে বিদ্বেষের বিষাদ,
কাঁদে আসমান জমিন, কাঁদিছে মহর্রমের চাঁদ।

ফোরাতের তীরে কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইনকে শহীদ করার পর থেকেই মুসলিম বিশ্বে মহররম আর নতুনের আনন্দ নিয়ে আসে না। মহরম মানেই বেদনা। মহররম মানেই কান্না। মহররম এলেই প্রেমিক মনে বেদনার জোয়ার আসে। হৃদয়রাজ্যে মাতম গানের সুর বাজে- হায় হোসেন! হায় হোসেন! কবি ফররুখ বলেছেন, ফোরাতের তীর হয়ে আজো হোসাইন প্রেমিকরা কেঁদে চলছে বিশ্বের আনাচে-কানাচে। কেঁদেই তাদের সুখ। কান্নার জলে যেন মুছে দিতে চায় তারা জীবনের সব দুঃখ। কবির ভাষায়-

‘ফোরাতের তীরে তীরে কাঁদে আজও সংখ্যাহীন প্রাণ;
উদভ্রান্ত ঘূর্ণীর মত শান্তি চায় মাতমে-কান্নায়।
যেখানে মৃত্যুর মুখে তৃষ্ণাতপ্ত মরুর হাওয়ায়
জিগরের খুন দিল কারবালার বীর শহীদান।’

এভাবেই মহররমের কান্নায় হারিয়ে যায় হিজরি নববর্ষের আনন্দ। তাইতো বিশ্বজুড়ে হিজরি বর্ষ উদযাপনের কোন আয়োজন চোখে পড়ে না সেই কারবালার পর থেকেই। হিজরি বর্ষ এলেই মনে হয় নববর্ষ নয়, এসেছে নববেদনা পুরনো খামে নতুন করে। বিশ্বের আনাচে-কানাচে হোসাইন প্রেমিকরা বেদনা ফুলের মালা গাত্থে বসে যান মহররমের চাঁদ দেখেই। কবি নজরুল বড় সুন্দর করে বলেছেন সে কথা।

‘কত মহররম এলো, গেল চ’লে বহু কাল-
ভুলি নি গো আজো সেই শহীদের লহু লাল!
মুসলিম তোরা আজ ‘জয়নাল আবেদীন’,
‘ওয়া হোসেনা- ওয়া হোসেনা’ কেঁদে তাই যাবে দিন!’

তবে কান্নাই শেষ কথা নয়। বেদনাই সমাধান নয়। বেদনা একদিন বারুদের মত জলে ওঠবে। দুনিয়াজুড়ে এজিদি সাম্রাজ্য ভেসে যাবে হোসাইনি প্রেমিকদের চোখে জলে। বেদনার বারুদে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাবে তখতলোভী কমবখদের সাম্রাজ্য। তাইতো মহররমের মর্সিয়া গাওয়া শেষে হোসাইন প্রেমিকদের নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সবক দিয়েছেন সুফি কবি নজরুল।

‘ফিরে এলো আজ সেই মহররম মাহিনা,-
ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না।’

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর