সর্বনাশা পদ্মা ও যমুনায় ধ্বংস ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
মানিকগঞ্জের তিনটি উপজেলায় পদ্মা ও যমুনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিলীন হওয়া ওইসব বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম এখন পাশের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা বাজার অথবা বাড়িতে চালানো হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলার দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলা যমুনা নদী এবং হরিরামপুর উপজেলা পদ্মা নদী বেষ্টিত। পদ্মা ও যমুনার ভাঙনে প্রতিনিয়ত ওই তিন উপজেলার বহু বাড়িঘর, গাছপালা, ফসলী জমি বিলীন হয়ে যায়। পাশাপাশি নদী তীরবর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
জেলার দৌলতপুর উপজেলায় মোট ১০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে সাতটি বিদ্যালয় নদীগর্ভে চলে গেছে। বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- ৫৮নং চরকাটারি ডাক্তারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৫নং চরকাটারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬৪নং চরকাটারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫১নং মুসলিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১১নং আবুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১নং দক্ষিণ বাঘুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯৫নং চর গোবিন্দপুর রহিজ মোল্লার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ের পাঠদান এখন পাশ্ববর্তী বাড়ি, বাজার কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনোমতে চালানো হচ্ছে।
দৌলতপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, দৌলতপুরে এবারের বন্যায় আরও ১৯টি বিদ্যালয় আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেগুলোতে কোনোমতে পাঠদান করানো হচ্ছে। আর নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে আরও ১০টি বিদ্যালয়। এরই মধ্যে তিনটি টিনসেট বিদ্যালয় সরিয়ে পাশ্ববর্তী টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার চরে স্থাপন করা হয়েছে।
শিবালয় উপজেলায় মোট ৭৯টি বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে সম্প্রতি নদীতে বিলীন হয়েছে দুইটি। একটি হচ্ছে মধ্যনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অন্যটি চর আলোকদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
মধ্যনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কার্তিক চন্দ্র সরকার বলেন, তার বিদ্যালয়ে মোট ৩২০জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সম্প্রতি বন্যার শুরুতে বিদ্যালয়টি যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কমে গেছে। আপাতত পাশের বাজারে দুইটি ছাপড়া ঘর তৈরি করা হয়েছে। গাদাগাদি করে সেখানে ক্লাস নেয়া হচ্ছে।
চর আলোকদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের প্রধান মিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের দুটি টিনসেট ঘর ও একটি দ্বিতলা ভবন জুলাই মাসে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে অনিশ্চয়তায় পড়ে বিদ্যালয়ের ১১০ জন শিক্ষার্থী। বর্তমানে পাশের একটি মাদরাসায় বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
শিবালয় উপজেলার চর আলোকদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ মোল্লা বলেন, তার দুই সন্তান ওই বিদ্যালয়ে তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। বিদ্যালয়টি ভেঙে যাওয়ায় এখন একটি মাদরাসায় পাঠদান হচ্ছে। সেখানে গিয়ে পড়ালেখা করায় তাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। লেখাপড়াও ভালোভাবে হচ্ছে না।
হরিরামপুর উপজেলার সৈয়দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিয়াসাদ আলী বলেন, বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনটি গত ২৭ আগস্ট পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এবারের বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে পদ্মা নদীর ভাঙন তীব্র হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ২০০ মিটার দূরে থাকা নদী বিদ্যালয় ভবনের কাছে চলে আসে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভেঙে পড়ে বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনটি। ভাঙনের তীব্রতা দেখে আগেই শিক্ষার্থীদের পাশের একটি মাদরাসায় ক্লাস শুরু করানো হয়। বিদ্যালয়ের ১৫৩ জন শিক্ষার্থী থাকলেও বর্তমানে উপস্থিতির হার কমে গেছে। অর্ধেক শিক্ষার্থীও বিদ্যালয়ে আসছে না।
হরিরামপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন বলেন, সৈয়দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভাঙনের কবলে পড়ার আগেই উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছিল। তাদের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও বিদ্যালয় রক্ষায় ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ভাঙনরোধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, হরিরামপুর উপজেলায় রামকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপীনাথপুর ভাটিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুতালড়ি রামচন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাঠানকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এই চারটি বিদ্যালয়ে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। ভাঙনরোধে ব্যবস্থা না নিলে বিদ্যালয়গুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিলুফা রহমান বলেন, মানিকগঞ্জ জেলার বন্যা ও ভাঙনে তিনটি উপজেলায় ১০টি বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়েছে। এছাড়া ৩১টি বিদ্যালয় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীতে বিলীন হওয়া বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সাতটি ভবন ও বাকী তিনটি টিনসেট। নদীতে বিলীন হওয়া বিদ্যালয়গুলোর পাঠদান স্ব স্ব বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহায়তায় আপাতত পাশ্ববর্তী জায়গায় ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নদীতে বিলীন ও ক্ষতিগ্রস্থ বিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে কোনো ধরনের সহায়তা পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস বলেন, ভাঙনরোধে বরাবরই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এরপরও ভাঙনের কারণে যেসব বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়েছে সেগুলোর কয়েকটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে টিনসেট করে আপাতত পাঠদান করানো হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে নতুন জায়গা খোঁজা হচ্ছে। স্ব স্ব এলাকায় নদী থেকে দূরবর্তী স্থানে কয়েকটি জায়গা পাওয়া গেছে। সেগুলো স্থানীয়দের কাছ থেকে রেজিস্ট্রি করে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পরবর্তীতে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ফান্ড পাওয়া গেলে ভবন নির্মাণ করা হবে।
এদিকে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবে মওলা মো. মেহেদী হাসান বলেন, প্রতি বছরই ভাঙন রোধে পদ্মা ও যমুনা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষায় নদীতে জিও ব্যাগ ফেলা হয়। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না থাকায় পুরোপুরি কাজ করা যায় না। আগামীতে পদ্মা ও যমুনা নদীতে ভাঙনরোধে বড় ধরনের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সেটি বাস্তবায়ন হলে ভাঙনরোধে কার্যকর ভূমিকা নেয়া হবে। ইউএনবি।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.