গোয়েন্দা রিপোর্টে শোভন-রব্বানী কমিটির ৭২ জন অভিযুক্ত

ছাত্রলীগের বর্তমান ৩০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির ৭২ জনের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নানা রকম অভিযোগ উঠে এসেছে। এর মধ্যে বিবাহিত, মাদক ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, জামায়াতের পরিবারের সন্তান ও গোপনে শিবিরের রাজনীতি করেন এমন বেশ কয়েকজন কমিটিতে রয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে এমন অনেকেরও এই কমিটিতে ঠাঁই হয়েছে।

সদ্য পদত্যাগকারী ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর জেলা মাদারীপুর থেকেই কমিটিতে ঠাঁই হয়েছে ২২ জনের। ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সদস্যদের ব্যাপারে একটি গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ প্রতিবেদন এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এর আগে চলতি বছরের মে মাসে ৩০১ বিশিষ্ট ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি করেন সদ্য অপসারণ হওয়া ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সেক্রেটারি গোলাম রাব্বানী। তবে এই কমিটি ঘোষণা করার পর থেকেই কমিটির পদবঞ্চিত নেতারা অভিযোগ করে আসছিলেন কমিটিতে মাদক ব্যবসায়ী, বিবাহিত, অছাত্র, হত্যা মামলার আসামি, জামায়াত-শিবির পরিবারের সদস্য ও চাকরিজীবিরা স্থান পেয়েছেন। কমিটি ঘোষণার পর নানা রকম সমালোচনা তৈরি হয় সচেতন মহলে। এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পদবঞ্চিতরা আন্দোলনে নামলে একাধিকবার হামলার শিকার হন।

এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের মুখপাত্র রাকিব হোসেন বলেন, কমিটিতে যারা রয়েছেন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের মধ্যে ১০৫ জনের সংগঠনে থাকার যোগ্যতা নেই। স্বজনপ্রীতি, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত, বিবাহিত ও মাদকসেবিদের স্থান দেয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছেন সেখানের নেত্রীর কথা অমান্য করে বিতর্কিতদের স্থান দেয়া হয়েছে।

এদিকে ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে দেয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলা হয়, ছাত্রলীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম এনবিআরে চাকরি করছেন। সহসভাপতি তানজীল ভূঁইয়া তানভীরের বয়স ত্রিশের বেশি। আরেফিন সিদ্দিক সুজন মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তার বাবা মাদারীপুর জেলার পাঁচখোলা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির ছিলেন। প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত সোহান খান, কমিটির সহসভাপতি আতিকুর রহমান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি মাদকসক্ত, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত। শিক্ষককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার হয়েছেন আরেক সহসভাপতি বরকত হোসেন হাওলাদার।

মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত শাহরিয়ার কবির বিদ্যুত। কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ও মাদকাসক্ত আবু সালমান প্রধান শাওন, রাজনীতির মাঠে দেখা যায় না কমিটিতে সহসভাপতি স্থান পাওয়া ফুয়াদ রহমান খানকে। সুজন ভূঁইয়া অগ্রণী ব্যাংকে চাকরিরত, শহিদুল ইসলাম রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ও চাকরিজীবী। ছাত্রলীগের আগের কমিটিতে না থেকেও পদ পেয়েছেন তৌহিদুর রহমান পরশ, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী কামাল খান।

তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সন্তান, এস এম তৌফিকুল হাসান সাগরের বাবা যুদ্ধাপরাধী, তৌহিদুর রহমান হিমেল ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, মাহমুদুল হাসান জামায়াত পরিবারের সন্তান। রুহুল আমিন সাবেক ছাত্রদল নেতা ও বিবাহিত। মুনমুন নাহার বৈশাখী জামায়াত পরিবারের সন্তান ও বিবাহিতা। সৈয়দ আরিফ হোসেন পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে অগ্নিসংযোগে জড়িত, খালিদ হাসান নয়ন মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত ও বয়স ত্রিশোর্ধ্ব, আবু সাঈদ ছাত্রলীগ থেকে আজীবন বহিষ্কৃত, আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা রয়েছে (নম্বর ৪, ধারা-৩০২/৩৪)।

রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় তানজিদুল ইসলাম শিমুলও জায়গা পেয়েছেন ছাত্রলীগ কমিটিতে। বিবাহিত সোহানী হাসান তিথিও রয়েছেন। মাহমুদুল হাসান তুষার গোপনে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে অগ্নিসংযোগকারী। এস এম হাসান আতিক ৩৯তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত ও বিবাহিত, সুরঞ্জন ঘোষের বয়স ত্রিশের বেশি।

সহসভাপতি রাকিব উদ্দিন ঠিকাদারি ব্যবসা করছেন। ত্রিশের বেশি বয়স হওয়া সত্বেও কমিটিতে আছেন সোহেল রানা। তিনি আগের ছাত্রলীগ কমিটিতে কোনো পদে ছিলেন না। রাজনীতির মাঠে অনুপস্থিত আয়ানাল সর্দার। নিয়োগ-বাণিজ্য প্রতারণায় যুক্ত তরিকুল ইসলাম পেয়েছেন কমিটির সহসভাপতি পদ।

গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন- যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরী, শাকিল ভূঁইয়া, মোর্শেদুল হাসান রূপম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌস আলম, সহসম্পাদক জাফর আহমদ ইমন, শরিফুল ইসলাম কোতয়াল, সোহরাব হোসেন শাকিল, আসিফ রায়হান, তানভীর আব্দুল্লাহ, সামিয়া সরকার, ফারজানা ইয়াসমিন রাখি, তামান্না তাসনিম তমা, মেহেদী হাসান রাজু, রেজাউল করিম, আঞ্জুমানারা অনু, সহসম্পাদক শেখ আরজু, উপপ্রচার সম্পাদক রায়হান রনি, সিজাদ আরেফিন শাওন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আব্দুল্লাহ বিন মুন্সি।

এছাড়া উপগ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক সৌরভ নাথ, উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক আফরিন লাবণী, উপ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ফুয়াদ হাসান, ওয়াহিদুজ্জামান লিখন, উপ-পাঠাগার সম্পাদক রুশী চৌধুরী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাজ উদ্দিন, উপ-গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মনিরুজ্জামান তরুণ, উপ-ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সালেকুর রহমান শাকিল, উপ-স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিষয়ক সম্পাদক ডা. শাহজালাল, উপ-গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন জসীম, শুশোভন অর্ক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়বিষয়ক সম্পাদক আসিফ ইকবাল অনিক, উপ-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়বিষয়ক সম্পাদক মো. তুষার, রাকিবুল ইসলাম সাকিব, উপ-আপ্যায়ন সম্পাদক শাহরিয়ার মাহমুদ রাজু, উপ-মানব উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক হীরণ ভূঁইয়া, বেলাল হোসেন মুন্না, কৃষি শিক্ষা সম্পাদক মাকসুদুর রহমান মিঠু, উপ-প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক মেশকাত হোসেন এবং উপ-কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক অভিমিন্যু বিশ্বাস অভির বিরুদ্ধে নানারকম অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে এসছে এই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।