বিএনপি'র ক্যাডার ছিলেন যুবলীগ নেতা শামীম

অস্ত্রধারী ছয় বডিগার্ডসহ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) হাতে আটক হয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সমবায় সম্পাদক এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম। শুক্রবার রাজধানীর নিকেতনে শামীমের ব্যবসায়িক কার্যালয় থেকে তাকে আটক করা হয়।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় সমবায় সম্পাদক এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম

যুবলীগের এ নেতা রাজধানীর বাসাবো, সবুজবাগ ও মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবেও পরিচিত। সবসময় ঘোরাফেরা করেন ছয়জন অস্ত্রধারী দেহরক্ষীর প্রটোকল নিয়ে। যদিও তাদের এসব অস্ত্রের বৈধ লাইসেন্স রয়েছে কিনা তা সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি।

পাঁচ ফুটের সামান্য বেশি উচ্চতার ছোটখাট মানুষ হলেও শামীমের ক্ষমতার দাপট ছিল আকাশসম। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ গণপূর্ত ভবনের বেশিরভাগ ঠিকাদারি কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করেন শামীম। সারাদেশের বড় বড় কনস্ট্রাকশনের কাজও নিয়ন্ত্রন করেন তিনি। তার নির্বাচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কেউ সেসব কাজ করতে পারে না। যদি কেউ তাকে না জানিয়ে দরপত্র ক্রয় করেন তাহলে তার পরিণতি হয় ভয়ঙ্কর। অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানোর মতো কাজও তিনি করেন।

জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত শাসনামলেও গণপূর্ত ভবনে ঠিকাদারির কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন শামীম। বিএনপি নেতা আব্বাসের ক্যাডার ছিলেন তিনি। ওই সময় তার ভয়ে রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল শান্তিনগরের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়িয়েছেন। মির্জা আব্বাসের ডান হাত হিসেবেই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির পাশাপাশি নিয়ন্ত্রন নেন গণপূর্ত ভবনের ঠিকাদারি টেন্ডারের।

জি কে শামীম নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে এবং তিন ভাইয়ের মধ্যে মেঝো। তার বাবা হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার বড় ভাই গোলাম হাবিব নাসিম ঢাকায় জাতীয় পার্টির (জাপা) রাজনীতি করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রাইমারি এবং মাধ্যমিক পাস করার পর শামীম ও তার পরিবারকে আর গ্রামে দেখা যায়নি। গ্রাম থেকে চলে আসার পর ঢাকার সবুজবাগ ও বাসাবো এলাকায় বড় হন শামীম। গত জাতীয় নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণাও চালিয়েছিলেন তিনি।

বাসাবো ও এজিবি কলোনির কয়েকজন বাসিন্দা জানান, নারায়নগঞ্জের গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে মধ্য বাসাবো, এজিবি কলোনি এবং হাসপাতাল জোনে বসবাস শুরু করে শামীমের পরিবার। স্থানীয় ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করে শামীম। পরবর্তীতে মির্জা অব্বাসের ভাই মির্জা খোকন ও মির্জা কালুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় তার। তাদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে গণপূর্ত ভবনে ঠিকাদারি টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন শামীম। হয়ে ওঠেন বিশাল ক্ষমতাধারী।

ক্ষমতার বদৌলতে এক সময় বাগিয়ে নেন ঢাকা মহানগর যুবদলের সহ-সম্পাদকের পদ। বিএনপির আমলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শোভা পেত খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও মির্জা আব্বাসের ছবি সম্বলিত জি কে শামীমের ব্যানার-পোস্টার। এখন শোভা পায় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে জি কে শামীমের ব্যানার-পোস্টার।

জানা যায়, ২০০৮ সালে বিএনপি ক্ষমতা হারানোর পরও গণপূর্তে ভবনে ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে বহাল তবিয়তেই ছিলেন শামীম। পরবর্তীতে যোগ দেন ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমবায় সংগঠনের পদও পান তিনি। এরপরই আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

তবে যুবলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর জানায়, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির কোন পদে নাম নেই জি কে শামীমের। কেউ মুখে মুখে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা বলে থাকলে তার দায়ভার সংগঠন নেবে না।

এদিকে যুবলীগের শিক্ষা সম্পাদক মিজানুল ইসলাম মিজু জানান, জি কে শামীম নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক এস এম মেজবাহ হোসেনের মৃত্যুর পর শূণ্য পদটি শামীমকেই দেয়া হয়েছিল।