বাংলাদেশিদের মতোই শুল্ক বিহীনভাবে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুযোগ পেতে যাচ্ছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর এবং স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) চূড়ান্ত করেছে দুই দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে চুক্তিটি চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষর করা হবে বলে আশা করছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

chittagong sea portচট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করবে নয়াদিল্লি। এ ক্ষেত্রে কোন পণ্যের উপরেই তাদের শুল্ক প্রদান করতে হবে না। তবে কন্টেইনার প্রতি নির্ধারিত হারে বার্থিং চার্জ এবং হ্যান্ডেলিং ফি দিতে হবে। এছাড়া সমুদ্রবন্দর দুটি দিয়ে কোন ধরনের ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ বা অন্য কোন দেশে পাঠানো যাবে না। শুধুমাত্র ভারত থেকে বাংলাদেশ হয়ে আবার ভারতে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সমুদ্রবন্দর দুটি ব্যবহার করা যাবে।

এসওপি অনুসারে সমুদ্রবন্দর দুটি থেকে ভারত সীমান্ত পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি নৌ ও সড়ক যান ব্যবহার করতে হবে দেশটিকে। পাশাপাশি এসব যানবাহন ভাড়া ও বন্দরে কন্টেইনার চার্জ পরিশোধ করার জন্য বাংলাদেশে এজেন্ট অফিস খুলতে হবে তাদের।

এ বিষয়ে গত রোববার নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি আগেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে কী কী শর্তে তারা বন্দর দুটি ব্যবহার করবে তা নির্ধারণ না হওয়ায় এতদিন ধরে তারা এটি ব্যবহার করতে পারেনি। বর্তমানের এসওপি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ভেটিং এর জন্য তা আইনমন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে এসওপি স্বাক্ষরিত হলে বন্দর দুটি ব্যবহার শুরু করতে পারবে প্রতিবেশি দেশ ভারত।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এসওপিতে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারের কোন বাড়তি সুবিধা দেয়া হচ্ছে না ভারতকে। বন্দরে ভারতীয় মালবাহী জাহাজ ভেড়ানো বা পণ্য নামানোর ক্ষেত্রেও বিশেষ কোন ব্যবস্থা থাকছে না। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মতোই বন্দর ব্যবহার করবেন তারা। বাংলাদেশিদের মতোই জাহাজ থেকে কন্টেইনারগুলো নামানোর পর স্ক্যানিং করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কন্টেইনারগুলোতে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ এমন কোন পণ্য বা বস্তু পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা আটকে দেয়া হবে।

পাশাপাশি ভারত থেকে জাহাজে তোলার সময়ই কন্টেইনারগুলোতে ইলেক্ট্রনিক তালা (ই-লক) ও ইলেক্ট্রনিক সিল (ই-সিল) দিয়ে আটকে দেবে দেশটির বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারপর মোংলা বা চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে আসার পর সেই ই-সিল ও ই-লক খুলে নতুন করে আবার ই-লক ও ই-সিল দিয়ে কন্টেইনারগুলো আটকে দিবে সংশ্লিষ্ট বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারপর আবার ভারতীয় সীমান্তে ঢোকার সময় সেগুলো খুলে দেয়া হবে। এতে করে মাঝপথে কেউ কন্টেইনার থেকে মালামাল সরাতে পারবে না বা সরালেও সেটা সহজে ধরা পড়বে।

কর্মকর্তারা আরো জানান, বাহির থেকে আমদানি করা পণ্য খালাসের সময় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ওজন ও দরের ভিত্তিতে শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু ভারতীয়দের এ ধরনের কোন প্রকার শুল্ক প্রদান করতে হবে না। নির্ধারিত ফি দিয়েই তারা পণ্য পরিবহনের অনুমতি পাবে।

কর্মকর্তারা আরো জানান, দেশের বন্দর দুটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারতের কাছ থেকে তিন ধরনের ফি আদায় করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ট্রানজিট ফি, যা চুক্তির সময়ই নির্ধারিত হয়েছে। এর বাহিরে কন্টেইনার স্ক্যানিংসহ বিভিন্ন কাজের জন্য কাস্টমস ফি ও কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং ফি আদায়ের কথা এসওপিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বন্দর দুটি দিয়ে প্রতি টন পণ্য পরিবহন করতে বাংলাদেশের সড়ক বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ ও শুল্ক বিভাগকে মোট ১৯২ টাকা দিতে হবে ভারতীয় পণ্য পরিবহন প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে শুল্ক বিভাগকে ১৩০ টাকা, সড়ক বিভাগকে ৫২ টাকা এবং বিআইডব্লিউটিএ’কে দিতে হবে ১০ টাকা। এর বাহিরে পণ্যের নিরাপত্তা চাইলে ট্রানজিট পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রতি টনে আরো ৫০ টাকা করে এসকর্ট মাশুল গুনতে হবে। এরপর নির্ধারিত নৌ-রুট ও আটটি সড়কপথ ব্যবহার করে পণ্য নিতে পারবে ভারত।

মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিব জানান, তিন পৃষ্ঠা খসড়া এসওপি তৈরি করে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল ভারত। পরে বাংলাদেশ তা সংশোধন করে। দুই দেশই এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আরেকটি খসড়া তৈরি করা হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর তা আবার ভারত পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগেই তা দেশটির মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হবে বলে আশা করা যায়।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে ভারতের পণ্য সরবরাহের বিষয়ে গত বছরের ২৪ অক্টোবর দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লির এক পাঁচতারা হোটেলে চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন নৌপরিবহণ সচিব আবদুস সামাদ ও ভারতের জাহাজ মন্ত্রণালয়ের সচিব গোপাল কৃষ্ণ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.