নিয়ম ভেঙে ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে ৭ ব্যাংক

দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংক বর্তমানে কোন ধরনের আমানত পাচ্ছে না। ফলে চলছে নগদ টাকার তীব্র সংকট। বলা হচ্ছে, বিগত কয়েক মাসে বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড থেকে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি ধার করেছে দেশের ৭টি ব্যাংক ও ২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ উঠেছে, আমানতকারীদের না জানিয়ে আন্তঃব্যাংক এই ঋণ দেয়ায় ব্যাংকিং রীতি ভঙ্গ হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে আন্তঃব্যাংক ঋণের ফলে ইসলামী ব্যাংকের আমানতে অবনতি ঘটতে পারে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশের জাতীয় দৈনিক মানবজমিন।

সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি বলছে, ব্যাংকগুলোর টাকার লেনদেনে সংকট দেখা দেয়ায় আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার অর্থাৎ কলমানি মার্কেট থেকে তারা স্বল্পসময়ের জন্য ধার করে। টাকার সংকটে ব্যাংকগুলো ঋণ করে চলছে বলেও দাবি করা হয়। এছাড়াও বেশ কয়েকটি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআরআর (নগদ জমা) ও এসএলআর (বিধিবদ্ধ সঞ্চিতির হার) জমা রাখতে পারছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ২ বারে ১৫৭৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড ৩ বারে ঋণ নিয়েছে ২২১০ কোটি। অথচ ইউনিয়ন ব্যাংক সর্বোচ্চ ঋণ নিতে পারতো ১৬৫০ কোটি টাকা। 

এছাড়াও স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ১১৫০ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড ৭৫০ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ১৮০ কোটি, যমুনা ব্যাংক ২০০ কোটি এবং এবি ব্যাংক ঋণ নিয়েছে ২০ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ৮৪ কোটি ৫ লাখ এবং হজ ফাইনান্স কোম্পানি ৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের ৭ই ফেব্রুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের ২৭২তম বোর্ড সভায় অন্য ব্যাংকে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়ার বিষয়টি অনুমোদন হয়। তবে কোনভাবেই ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি অতিক্রম না করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ইতিমধ্যেই ওই নয় প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত ৪২৯ কোটি ৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে।

ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, বোর্ডে ঋণের দেয়ার পরিমাণ অনুমোদন হওয়ার পর বিষয়টি আমানতকারীদের জানানোর কথা। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক এ বিষয়ে কাউকে জানায়নি। যা আমানতকারীদের বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতারণা। এদিকে ব্যাংকগুলোর আমানতের ১৯ শতাংশ (সিআরআর ও এসএলআর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ব্যাংকগুলো নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধার করে চলতে হচ্ছে। 

এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিগত কয়েক মাস ধরেই সরকারের ঋণ নেয়ার প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছে। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থ সংকট বিদ্যমান রয়েছে বিষয়টি নিশ্চিত।

অগ্রণী ব্যাংকের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘অনেকেই সামর্থ্যের চাইকে বেশি ঋণ দিচ্ছেন। কিছু ব্যাংকে ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার চাইতেও উপরে চলে গেছে। ফলে টাকার সংকট দেখা দিচ্ছে।’

চলতি বছরের ছয় মাসের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাতে থাকা ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ২৯টিই মুনাফা অর্জন করেছে। তবে সবচেয়ে বেশি মুনাফা লাভ করেছে ইসলামী ব্যাংক। এ বছর জুন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের মোট মুনাফা ৩২৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। একই সঙ্গে সম্পদের দিক থেকে সবার ওপরে ইসলামী ব্যাংক।