আশা জাগিয়েও জিততে পারল না বাংলাদেশ

র‌্যাঙ্কিং, ইতিহাস, চেনা দুর্গে লড়াই কিংবা মুখোমুখি লড়াইয়ের ফল- কোনোকিছুতেই ভারতের সঙ্গে তুলনা চলে না বাংলাদেশের। কিন্তু ময়দানি যুদ্ধে এগুলো যেন শুধুই কাগজে-কলমের হিসেব-নিকেশ। আজ কলকাতার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে সেটাই বুঝিয়ে দিলেন জামাল ভূঁইয়ারা। শক্তি-সামর্থ্যে স্বাগতিকদের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

ভারতের দুর্গে দুর্দান্ত ফুটবলের পসরা সাজিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু শেষটা হলো আক্ষেপ জাগিয়ে। দাপুটে ফুটবল খেলেও পুরনো ‘রোগে’ আক্রান্ত হলেন জামালরা। অন্তিম সময়ের গোলে হলো সর্বনাশ। তাতে জয়বঞ্চিত বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচটা অমীমাংসিত থেকে গেল ১-১ গোলে।

দীর্ঘ আট বছর পর কলকতায় ফিরেছে ভারতীয় জাতীয় ফুটবল দল। এই ম্যাচ নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের রোমাঞ্চ ছিল বৃহস্পতির তুঙ্গে। স্বাগতিক দর্শকরা তো আছেনই, বাংলাদেশ থেকে উড়ে গেলেন অসংখ্য ফুটবল অনুরাগী। টিকিট যেন সোনার হরিণ হয়ে উঠল তাতে। হণ্যে টিকিট খুঁজতে গিয়ে হাতাহাতি-মারামারির ঘটনাও তো ঘটল কলকাতায়। ৬৫ হাজার আসন সীমাবদ্ধ স্টেডিয়ামেও টিকিট বিক্রি হলো কুড়ি হাজার বেশি!

বাংলাদেশি দর্শকদের হতাশ করেননি জামাল ভূঁইয়ারা। কিন্তু রেণু ছড়ানো ম্যাচে বাংলাদেশ প্রত্যাশার পারদটা চূড়ায় উঠিয়ে দিয়েছিল। প্রথমার্ধেই সাদের গোলে লিড নিয়ে সফরকারীরা বুঝিয়ে দিয়েছে কেন ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ভারতকে সতর্ক করেছিলেন তাদের ক্রোয়েশিয়ার কোচ গ্রিগর স্টিম্যাক। কাতারকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জয়ের অনিশ্চয়তায় ভোগানো বাংলাদেশ প্রমাণ দিল সুদিন ফেরানোর।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ন্যূনতম ব্যবধানে হার দিয়ে বাছাইপর্বের অভিজান শুরু করেছিল বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে ঘরের মাঠ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে কাতারের কাছে ২-০ গোলে। শেষ মুহূর্তে গোল হজম না করলে হারের ব্যবধানটা কমতে পারতো। ভারতে ম্যাচেও বাংলাদেশের শঙ্কা ছিল এই অন্তিম প্রহরের গোল হজম নিয়েই। আশঙ্কাটা বাস্তবে রূপ নিল যুবভারতী স্টেডিয়ামে। সাদের গোলে স্বপ্নের জয়ের অপেক্ষা থাকা বাংলাদেশ হজম করল গোল।

ম্যাচের বয়স তখন ৮৮ মিনিট। বাংলাদেশের জাল কাঁপিয়ে ভারতকে অন্তত কিছুটা স্বস্তি উপহার দিয়েছেন আদিল খান। এই গোলেই চূর্ণ হলো বাংলাদেশের স্বপ্ন। তবে জামালরা কলকাতার মাঠে যেভাবে রাজসিক ফুটবল খেলে ভারতকে রুখে দিয়েছেন সেটার বিশেষণ এক কথায় হতে পারে অবিশ্বাস্য। ৪১ মিনিটে জামালের ফ্রি-কিক থেকে মাথা ছুঁয়ে থাকা সাদউদ্দিন যেভাবে ভারতের জালে বল জড়ালেন সেটা অনেকদিনই চোখে লেগে থাকবে বাংলাদেশিদের।

বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার দুঃসাহস অবশ্য দেখায়নি বাংলাদেশ। ভালো ফুটবল খেলাই লক্ষ্য ছিল। কার্যত লক্ষ্যে কিছুটা হলেও পৌঁছাতে পারল ডেমি ডের দল। এই ড্রয়ে বাংলাদেশ পেল বাছাইপর্বে প্রথম এক পয়েন্ট। ভারতের অর্জন ২ পয়েন্ট। কয়েক সপ্তাহ আগে কাতারকে তাদেরই মাঠে গোলশূন্য ব্যবধানে রুখে দিয়ে চমকে দিয়েছিলেন সুনিল-আদিলরা। এবার ভারতীদেরই পাল্টা চমক দেখালেন জামাল-সাদরা। তাতে করে সুতোয় ঝুলে গেল ভারতীয়দের বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার স্বপ্নটা।