ডাঙ্গার ত্রাস যুবলীগ নেতা বাস করেন নৌকায়

বগুড়ায় এক যুবলীগ নেতাকে পাওয়া গেছে যিনি মূলত ডাঙ্গায় দাবিয়ে বেড়ান ডাঙ্গায় কিন্তু থাকেন জলে। একাধিক বাড়িঘর থাকলেও ওই যুবলীগ নেতা বসবাস করেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) নৌকায়। সেই নৌকায় নিরাপত্তার জন্য লাগানো হয়েছে একাধিক সিসি টিভি ক্যামেরা।

বগুড়ার এই যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে বিস্তার অভিযোগ। জানা গেছে, কৃষকের জমির ফসল লুট, নৌকায় ডাকাতি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা, জুয়ার আসর বসানো, যাত্রার নামে দেহব্যবসা, বিরোধপূর্ণ জমি নিজের নামে লিখে নেয়া, খুন, অপরাধী ও পলাতক আসামিদের আশ্রয় দেয়া ও প্রহসনমূলক বিচার-সালিশ করার অভিযোগ রয়েছে।

নিজস্ব গুণ্ডাবাহিনী পরিচালনা করা আলোচিত এই যুবলীগ নেতার নাম লুৎফর রহমান। স্থানীয়রা তাকে চেনে পাগলা ডাকাত নামে। তার বাড়ি
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর চরচালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের পূর্বপাড়ের বহুলাডাঙ্গা গ্রাম। তার বাবা মুছা শেখ ওরফে দালাল মুছা। তিন জেলার সীমান্ত এলাকার মধ্যে পড়েছে বহুলাডাঙ্গা গ্রাম। আর সেখানেই তার রাজত্ব। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি।

পাগলা ডাকাত থাকেন নদীর ওপর ভাসমান একটি নৌকায়। এটি সাধারণ কোন নৌকা নয়। এর চারপাশে থাই গ্লাস লাগানো, আছে এয়ারকন্ডিশন্ড (এসি)। বিলাসবহুল ওই নৌকায় টিভি-ফ্রিজ, সৌরবিদ্যুতসহ আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এই নৌকাটির দৈর্ঘ্য ৬০ ফুট, প্রস্থ ৮ ফুট।

বহুল আলোচিত এই পাগলা ডাকাতের বয়স ৪৫ বছর। তার নিজস্ব বাহিনীর নাম ‘পাগলা বাহিনী’। অবৈধ উপায়ে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। খুন, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক, অস্ত্র, লুটপাটসহ একাধিক মামলা রয়েছে তার নামে। ডাকাতি করে আনা ২০০ গরু ও ৩০০ মহিষের বিশাল খামার রয়েছে তার।

তার সম্পদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাগলা ডাকাত কয়েক কোটি টাকার মালিক। বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার তেকানী-চুকাইনগর এলাকার তালতলায় তিন বছর আগে তার স্ত্রী বুলবুলি খাতুনের নামে জমি কিনে বাড়ি করেছেন। এর বাজারমূল্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। নীলফামারী জেলা সদরের রামগঞ্জ এলাকায় চার বছর আগে একটি দ্বিতল বাড়ি কিনেছেন। ওই বাড়ির বাজারমূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। এ ছাড়া শতাধিক বিঘা জমি ও অর্ধশত পুকুরের মালিক তিনি।

স্থানীয় চালুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী জানান, পাগলা ডাকাতের কুকর্মেরে কথা সকলের জানা, কিন্তু কেউ মুখ খোলেন না।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লুৎফর রহমান ওরফে পাগলা। তিনি বলেন, সামনে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। প্রতিপক্ষ আমাকে নির্বাচনে পরাজিত করতে নানা অপবাদ ছড়াচ্ছে। নৌকার বিষয়ে তিনি বলেন, নদীতে বসবাস করতে গেলে অবশ্যই নৌকা লাগবে। শখ করে এমন নৌকা বানিয়েছি।

লুৎফর রহমান পাগলা ডাকাতের বিষয়ে সারিয়াকান্দি থানার ওসি আল আমিন বলেন, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। ওয়ারেন্টও আছে। তাকে গ্রেপ্তানে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানও নির্দেশ দিয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।