ভয় কাটিয়ে সেবায় ফিরতে চায় ৭৩৭ ম্যাক্স-৮

পাঁচ মাসের ব্যবধানে পরপর দুইবার বিধ্বস্ত হওয়ায় বোয়িং এর ৭৩৭ ম্যাক্স-৮ বিমানে করে ভ্রমণ করতে ভয় পাচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। তাই যাত্রীদের ভয় কাটাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উড়োজাহাজ নির্মানকারী এই প্রতিষ্ঠানটি। ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে যাত্রীদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি।

বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স-৮ বিমান

রোববার এক জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপি জানায়, ২০১৮ এবং চলতি বছরে বড় দুটি দুর্ঘটনায় ম্যাক্স-৮ ৭৩৭ এর প্রতি আস্থা কমে গেছে যাত্রীদের। বর্তমানে নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রীদের মধ্যে মাত্র ১৯ শতাংশ ফের এই বিমানটিতে উড়তে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অনিয়মিত যাত্রীদের ক্ষেত্রে তা মাত্র ১৪ শতাংশ।

জরিপে দেখা যায়, বিমানে ভ্রমণকারী অন্তত এক হাজার যাত্রী জানিয়েছেন, তারা প্রয়োজনে ৭৩৭ ম্যাক্স-৮ বিমানটি চেয়ে বেশি ভাড়া পরিশোধ করতে প্রস্তুত, তারপরও ওই বিমানটিতে ভ্রমণ করতে চান না।

অপরদিকে বিশ্ব ফ্লাইট নিয়ে জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ফেয়ার রিসার্চ গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হেনরি হারটেভেল্ট জানান, নিয়মিত উড়োজাহাজে করে ভ্রমণ করা ব্যাক্তিদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক এবং অনিয়মিত যাত্রীদের ক্ষেত্রে প্রায় ৫৫ শতাংশ ব্যাক্তি বোয়িং এর যাত্রাকে 'অনিরাপদ' বলে আখ্যা দিয়েছেন।

উদ্বোধনের দুই বছরের মধ্যে একবার এবং তিন বছরের মাথায় দ্বিতীয়বার দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ায় নিরাপত্তার সংশয় থেকে এই মডেলের বিমান চলাচল বাতিল করে অনেক দেশে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স-৮ মডেলের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয় বোয়িং। তবে যাত্রী সেবায় পুনরায় এই একই মডেলের বিমান চালুর ঘোষণা দিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।

বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স-৮ বিমান

তবে ঠিক কবে নাগাদ এটি চালু করা হবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ যাত্রী সেবায় পুনরায় ফিরে আসার আগে বোয়িংকে তাদের ৭৩৭ ম্যাক্স-৮ মডেলটির এমসিএএস সিস্টেমের পরিমার্জিত সংস্করণ জমা দিতে হবে। চলতি মাসের শেষের দিকে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যাত্রীদের আস্থা অর্জনে প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা দিয়েছে, যাত্রীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৭৩৭ ম্যাক্স-৮ বিমানটি উড্ডয়নের আগে কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায়। সেই ফ্লাইট নিরাপদে মাটিতে অবতরণের পরই সাধারণ যাত্রীদের নিয়ে আকাশে উড়াল দিবে বিমানটি।

ম্যাক্স-৮ ৭৩৭ মডেলের চিফ টেস্ট পাইলট জেনিফার হেন্ডারসন বলেন, বোয়িং এর ব্যবসার মূল ভিত্তিই হলো যাত্রীদের নিরাপত্তা প্রদান। তাই শতাধিক প্রকৌশলী নিরন্তর প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন যাতে এই মডেলের বিমান যাত্রীদের নিয়ে নিরাপদে উড়তে পারে।

প্রসঙ্গত, বোয়িং এর ম্যাক্স মডেলটি হচ্ছে উড়োজাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটির ৭৩৭ সিরিজের সর্বশেষ মডেল। যা ২০১৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন দেশে চলাচল শুরু করে। কিন্তু উদ্বোধনের দুই বছর পার না হতেই ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জাকার্তার কাছে জাভা সাগরে বিধ্বস্ত হয় এই মডেলের বিমান। লায়ন এয়ারের ওই বোয়িংটিতে থাকা মোট ১৮৯ জন যাত্রী সেই দুর্ঘটনায় নিহন হন।

এর ঠিক পাঁচ মাসের মাথায় চলতি বছরের ১০ মার্চ ইথিওপিয়ায় বিশফু শহরের কাছে বিধ্বস্ত হয় একই মডেলের আরেকটি বিমান। ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের ওই বিমানটিতে থাকা ১৫৭ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন।

পরপর দুইবার এমন দুর্ঘটনায় উদ্বেগ তৈরি হয় সারা বিশ্বজুড়ে। যদিও দুই দুর্ঘটনাই একই কারণে হয়েছে কিনা তা এখনো জানা যায়নি। তবে উড়োজাহাজ দুটিই নতুন ছিল এবং বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের স্বল্প সময়ের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়। এর ফলে চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং এয়ারলাইন্স বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স-৮ চলাচল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরই মডেলটি পরিচালনা বন্ধ করে দেয় মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।