আপনি পড়ছেন

অনেক স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন চাঁদপুরের বাবুল হোসেন। কিন্তু কাজের বৈধ অনুমোদন (আকামা) থাকা সত্ত্বেও গেল মাসে শূন্য হাতে, খালি পায়ে, কাজের পোশাক পরেই তাকে দেশে ফিরতে ‘বাধ্য করা হয়’। শুধু বাবুল একাই নন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি থেকে এরকম আরও অনেক বাংলাদেশি শ্রমিককে জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

saudi workers

প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে কাজ করা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর প্রায় ১৬ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিককে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গত পাঁচ বছরে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ৭৯ হাজার ১০৬।

দেশে ফেরা অনেক কর্মীর অভিযোগ, তাদের আকামা থাকা সত্ত্বেও তাদের ধরে সবজি, খেজুর ও পানি বিক্রিসহ ভিক্ষা করার মতো মিথ্যা অভিযোগ এনে দেশে পাঠানো হচ্ছে।

ব্র্যাক অভিবাসন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান জানান, শুধু চলতি মাসে সৌদি আরব থেকে ৫৩৪ বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফিরেছেন।

তিনি বলেন, সাধারণ ‘ফ্রি’ ভিসার নামে গিয়ে এক নিয়োগকর্তার বদলে আরেক জায়গায় কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়লে আগে ফেরত পাঠানো হতো। কিন্তু সম্প্রতি ফেরত আসা কর্মীদের অনেকেই বলছেন, তাদের কাছে বৈধ আকামা থাকা সত্ত্বেও জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসকে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান শরিফুল।

তিনি বলেন, কেন বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে সেই কারণটা বের করে করণীয় ঠিক করা উচিত যাতে নতুন করে যারা যেতে চাইছেন তারা বিপদে না পড়েন। আর ফ্রি ভিসায় গিয়ে কেউ যেন বিপদে না পড়েন, প্রত্যেকে গিয়ে যেন চাকরি পান রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সেটা নিশ্চিত করা উচিৎ।

সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বাবুলসহ ১৭৫ জন বাংলাদেশি কর্মীকে সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হয়।

ইউএনবিকে তিনি বলেন, তার কাছে সৌদি আরবে আরও ছয় মাস থাকার অনুমোদন ছিল, কিন্তু পুলিশ তাকে ফেরত পাঠিয়েছে।

আরেক কর্মী মুন্সিগঞ্জের মহিউদ্দিন জানান, গত ১০ বছর ধরে তিনি সৌদি আরবে কাজ করেছেন। আকামাসহ বৈধভাবেই ছিলেন। সম্প্রতি নামাজ পড়তে মসজিদে যাবার পথে সৌদি ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে। আকামা থাকার পরও আটকের কারণ জানতে চাইলে তাকে মারধর করা হয় ও দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

ফেরত আসা কয়েকজন কর্মী অভিযোগ করেছেন বৈধ আকামা থাকা সত্ত্বেও তাদের জোরপূর্বক ধরে জেলে কিছুদিন আটকে রেখে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। কফিল (মালিক) আকামা নতুন করে নবায়ন করেনি বা আকামা বাতিল করে তাদের দেশে পাঠানো হচ্ছে।

গত ৯ অক্টোবর ৯১ জন, ৮ অক্টোবর ১০৫ জন, ৪ অক্টোবর ১২০ জন এবং ৩ অক্টোবর ১৩০ জন বাংলাদেশি কর্মীকে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর সি‌লে‌টের আবু বক্করসহ শূন্য হাতে দেশে ফিরতে হয় ১৬০ জন বাংলাদেশি কর্মীকে।

আকামা থাকা সত্ত্বেও সেদেশের পুলিশ ধরে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে বলে জানান বক্কর।

চাঁদপুরের জামাল জানান, সাড়ে চার হাজার রিয়াল দিয়ে আকামা করার দুমাসের মাথায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পুলিশ ধরে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।

পটুয়াখালীর বায়জিদ, মানিকগঞ্জের আবু সাইদ, মাদারীপুরের নাসিম, কুমিল্লার জামাল, মুন্সিগঞ্জের মিজান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার টিপু সুলতান, মাদারীপুরের সিরাজ, কুষ্টিয়ার জহুরুলসহ ১৬০ বাংলাদেশির সবার এমন অভি‌যোগ।

এক্ষেত্রে সৌদিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের কোনো সহযোগিতা করেনি অভিযোগ করে কর্মীরা আরও বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখনই ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হ‌বে।

এদিকে দুটি নির্দিষ্ট কারণে সৌদি আরব থেকে শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশে অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) এর মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান।

তিনি বলেন, বৈধ অনুমতিপত্র নেই এমন শ্রমিকদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। এছাড়া অনেককে তাদের নির্ধারিত কাজের পাশাপাশি শাক-সবজি বিক্রি বা হকারের কাজ করার কারণে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

তবে বৈধ অনুমোদন থাকার পরেও অনেক শ্রমিককে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা স্বীকার করে শামীম বলেন, সৌদিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিৎ।

এদিকে সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা কর্মীদের সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিচালক (কর্মসংস্থান) ডিএম আতিকুর রহমান বলেন, ‘অনেক শ্রমিক দেশে ফিরে আসছেন। তবে আমি এখন সঠিক সংখ্যাটি বলতে পারছি না।’

বিএমইটি সূত্রে জানা গেছে, গত বছর প্রায় ২ লাখ ৫৭ হাজার ৩১৭ জন শ্রমিক সৌদি আরব গিয়েছিলেন এবং এ বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত গিয়েছেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭১ জন।