কে এই বাগদাদি?
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সকাল থেকেই নানা জল্পনা চলছিল যে, আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদি নিহত হয়েছে। উত্তর সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর বিশেষ অভিযানে সে নিহত হয়। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে বলেন, বড় একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে সেই ঘটনা কী তা তিনি বলেননি। এর পর থেকেই বিশ্ব গণমাধ্যমে শুরু হয় নান হিসাব-নিকাশ। অবশেষে ট্রাম্প জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানালেন যে, বাগদাদি অধ্যায় শেষ।
জানা যায়, ১৯৭১ সালে ইরাকের ছোট্ট শহর সামারায় একটি সুন্নি পরিবারে জন্ম হয়েছিল বাগদাদির। তখন অবশ্য তার নাম ছিল ইব্রাহিম আল বদরি। ২০১৩ সালে নিজেকে ‘খলিফা’হিসেবে ঘোষণা করার পরই সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে আইএস প্রধান। এর মধ্যে এই ৪২ বছরে, বাগদাদির কথা অবশ্য তেমনভাবে শোনা যায়নি। বরং, তা মার্কিন গোয়েন্দাদের হাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। পরিবারের ধর্মীয় পরিবেশ জোরাল প্রভাব ফেলেছিল বাগদাদির উপর। ছোটবেলা থেকেই কোরান ও ধর্মীয় রীতিনীতির উপর প্রতি অসম্ভব টান ছিল তাঁর। তা নিয়েই পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। ১৯৯৬ সালে বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজের উপর ব্যাচেলর ডিগ্রি পান তিনি। এর পর কোরানিক স্টাডিজে মাস্টার ডিগ্রি ও পরে ডক্টরেটও পান তিনি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইল থেকে অবশ্য বাগদাদি সম্পর্কে বড়সড় তথ্য মেলেনি। জানা যায়, এই সময়েই বাগদাদ শহরের কাছে একটি মসজিদে শিশুদের কোরান শিক্ষাও দিতে শুরু করেন তিনি। সেইসঙ্গে চলতে থাকে তার ফুটবল চর্চাও। ক্লাব ফুটবলে রীতিমতো স্টার হয়ে উঠে ছিলেন বাগদাদি।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছ, ইরাকে মুসলিম ব্রাদারহুড আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন বাগদাদির কাকা। তার হাত ধরেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময়ে মুসলিম ব্রাদারহুডে যোগ দেন বাগদাদি। তবে, শুধু সেই গণ্ডিতেই আটকে থাকেননি বাগদাদি। ২০০০ সাল নাগাদ সালাফি জিহাদিদের সঙ্গে যোগ দেন বাগদাদি। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০০ সালের মধ্যেই আফগানিস্তানে জিহাদি প্রশিক্ষণ নেন বাগদাদি। নব্বই-এর দশকে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ছাত্র ছিলেন বাগদাদি। ২০০৩ সালে মার্কিন বাহিনী যখন ফের ইরাকে অভিযান শুরু করে তখন বাগদাদি অবশ্য পুরোদস্তুর জঙ্গি। ২০০৪ সালে তাঁকে প্রথম এবং শেষবারের জন্য গ্রেফতার করেছিল মার্কিন বাহিনী। তাঁকে পাঠানো হয় বুক্কা ব্যাম্পে, সেখানে প্রায় ১০ মাস কাটান বাগদাদি।
নানা সূত্র থেকে জানা যায়, খুব কম কথা বলতেন বাগদাদি। বন্দি থাকাকালীন বেশিরভাগ সময়েই ধর্মীয় চর্চাই চালিয়ে যেতেন তিনি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির নেতাদের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ঘটে। বুক্কা ক্যাম্প থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ইরাকের আল কায়দাগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাগদাদি। যদিও, পরে ওই জঙ্গি সংগঠন ভেঙে দিয়ে তার নাম রাখা হয় ইসলামিক স্টেট। সেই সূত্রপাত। বিরোধী গোষ্ঠীগুলিকে এক জায়গায় আনার ক্ষমতা, ধর্মীয় পড়াশোনা এই সমস্ত কিছুই বাগদাদিকে নেতা হিসাবে উঠে আসতে দারুণ সাহায্য করেছিল। জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেয় সাদ্দাম হুসেনের বাথ পার্টির একাধিক সদস্য এবং ইরাকি সরকারের সেনাকর্তাদের অনেকেই। মধ্য-এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল স্টিফেন্সের কথায়, ‘‘সাদ্দাম হুসেনের প্রাক্তন গোযেন্দা অফিসারদের কেমন ভাবে কাজে লাগাতে হয় তা তিনি (বাগদাদি) ভালই জানতেন।’’ নিজের নিরাপত্তা নিয়েও যথেষ্ট খুঁতখুঁতে ছিলেন বাগদাদি।
২০১০ সালের এপ্রিল মাসে বাগদাদিকে নতুন আমির ঘোষণা করা হয়। তখনও অবশ্য আল কায়দার সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের সম্পর্ক টিকে ছিল। কিন্তু, ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন নেভি সিলের অপারেশন নেপচুন স্পিয়ারে নিহত হন আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেন। তার পর আল কায়দার দায়িত্ব নেন আয়মান আল জাওয়াহিরি। কিন্তু, তত দিনে ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে পিছু হঠতে শুরু করেছে আল কায়দা। বদলে, সেই জায়গা দখল করে নিতে থাকে ইসলামিক স্টেট। কিন্তু, তখনও আল কায়দা ছেড়ে বেরিয়ে আসেনি তারা। ভাঙনটা শুরু হয় আল নুসরা নামে আরেকটি জঙ্গি সংগঠনকে ঘিরে। নুসরার নেতারা সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিল। কিন্তু, তার বদলে নিজের ‘সাম্রাজ্য’ গড়ে তোলাই প্রথম পছন্দ ছিল বাগদাদির। সেই সঙ্গে দখল করা এলাকায় কঠোর ধর্মীয় আইন চালু করাও ছিল তাঁর লক্ষ্য। এ নিয়েই আল কায়দায় সঙ্গে তাঁরসংঘাত শুরু হয়। আইএস-কে জঙ্গি সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে আল কায়দা। তাতে কার্যত শাপে বর হয় বাগদাদির।
আল কায়দার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর পরই, ইরাক ও সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকা দুর্বার গতিতে দখল করে নেয় আইএস জঙ্গিরা। ২০১৪ সালের জুন মাসে ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল দখল করে নেয় আইএস। এই সময়েই নিজেকে ‘খলিফা’ হিসাবে ঘোষণা করেন বাগদাদি। শুরু থেকেই একের পর এক নৃশংসতার নজির তৈরি করেছে আইএস। এলাকা দখলের পর, গণহত্যা, নির্মম ভাবে অত্যাচারের কোনও নিদর্শনই বাদ রাখেনি তারা। ইয়েজাদি সম্প্রদায়-সহ একাধিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে অত্যাচারের নজির দেখে কার্যত শিউরে উঠেছে গোটা বিশ্ব। সেই সঙ্গে ব্যাঙ্ক, তেলের খনি-সহ বহু সরকারি সম্পত্তিও দখল করে নেয় তারা। গোটা দুনিয়া তো বটেই আইএস-এর হিংসার শিকার হয় এই উপমহাদেশও।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.