বেলুন উড়িয়ে মেঘের নিচে পাঠিয়ে আকাশের বুকের আবহাওয়ার অবস্থা নির্ণয় করার জন্য ওড়ানো হয় বৃহদাকার বেলুন। যারা এসব বেলুনে গ্যাস ভরে আকাশে ওড়ান তাদের বলা হয় ‘বেলুন মেকার’। দেশের বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসগুলোতেই সাধারণত এসব বেলুন উড়ানো হয়।

weather office in faridpurফরিদপুরের আবহাওয়া অফিস

তবে ফরিদপুর আবহাওয়া দপ্তরটি বিভাগীয় কার্যালয় না হলেও এখানে দুজন বেলুন মেকার রয়েছেন। আর এ দুজন বেলুন মেকার ফরিদপুরের আবহাওয়ার রিপোর্ট দিচ্ছেন। যদিও অভিযোগ রয়েছে, বেলুন না উড়িয়েই তারা গত পাঁচ বছর যাবৎ বেতন-ভাতা নিচ্ছেন।

আবহাওয়া দপ্তরের দাবি, বেলুন না উড়ালেও তারা বসে বসে বেতন নিচ্ছেন না। এসব বেলুন মেকাররাই এখানে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের কাজ করছেন। কারণ এখানে আবহাওয়া পর্যবেক্ষকের পাঁচটি পদ থাকলেও সবকটি পদই শূন্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর আবহাওয়া দপ্তরের সিনিয়র ওয়েদার অবজারভার বা জ্যেষ্ঠ্ আবহাওয়া পর্যবেক্ষকের পদ রয়েছে ৩টি এবং আবহাওয়া সহকারীর পদ রয়েছে ২টি। এসব পদগুলো শূন্য থাকায় বেলুন মেকাররাই এখানে আবহাওয়া পর্যবেক্ষকের কাজ করছেন।

আবহাওয়ার আগাম পূবার্ভাস দেয়ার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফরিদপুর জেলা আবহাওয়া দপ্তরটি স্থাপন করা হয়। একসময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভবনে এ দপ্তরের কাজ চলতো। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে শহরের চাঁদমারিতে এক একর ৫৪ শতাংশ জায়গার উপর প্রতিষ্ঠা করা হয় নিজস্ব কার্যালয়। নিজস্ব জমিতে ভবন নির্মিত হলেও এ পর্যন্ত এখানে প্রযুক্তির উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। গত ৩৮ বছরের পুরনো গুরুত্বপূর্ণ এই সরকারি দপ্তরটি এখনও চলছে মান্ধাতার আমলের এনালগ পদ্ধতিতে।

আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা যায়, একজন পেশাগত সহকারী, ৩টি সিনিয়র ওয়েদার অবজারভার তথা জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক এবং ২টি আবহাওয়া সহকারী পদসহ ফরিদপুরের এই আবহাওয়া দপ্তরে পদ রয়েছে ৭টি। এরমধ্যে বর্তমানে সিনিয়র ওয়েদার পর্যবেক্ষক ও আবহাওয়া সহকারী পদে কেউ কর্মরত নেই। সেখানে একজন পেশাগত সহকারীসহ কর্মরত আছেন মোট পাঁচজন। বেলুন না থাকলেও এখানে বেলুন ওড়ানোর জন্য রয়েছেন দুজন বেলুন মেকার, যারা আবহাওয়া পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখানে বায়ুর চাপ পরিমাপের জন্য ব্যারোমিটার, কতক্ষণ সূর্য ছিল সেটি জানার জন্য সানশাইন রেকর্ডার, সূর্যের তীব্রতা মাপার জন্য পায়রনোগ্রাফ, শিশির পরিমাপের জন্য ডিউব্যালেন্স, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য থার্মোমিটার, উইন্ডশিল্ড পরিমাপের জন্য কাপ এনোমিউমিটার, বাতাসের দিক নির্ণয়ের জন্য উইন্ড ব্যান্ড, বৃষ্টির পরিমাপ জানার জন্য সেলফ রেকর্ডিং রেইনগজসহ আনুষঙ্গিক আরও কিছু যন্ত্রপাতি রয়েছে। সবই পুরনো। এরমধ্যে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি অচল হয়ে পড়েছিল, যেগুলো আবার মেরামত করে সচল করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন।

জানা যায়, আবহাওয়া দপ্তরের কাজ হচ্ছে মূলত; আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানার জন্য জলবায়ুর তথ্য ও সূচক সংগ্রহ করা। আর কৃষিকাজের জন্য মাটি ও পানির তাপমাত্রাসহ আনুষঙ্গিক তথ্যাদি জানা হয় অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন থেকে। ফরিদপুরের এই আবহাওয়া দপ্তরেও একটি অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন রয়েছে। জেলা শহর ছাড়াও কয়েকটি উপজেলাতেও এই অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে। তবে সেখানেও আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে।

আবহাওয়া দপ্তর ও ওয়েদার স্টেশনের মাধ্যমে দিনরাতের আবহাওয়ার তথ্যসহ মাটি ও পানির তাপমাত্রার পরিমাপ জানা গেলেও মেঘের স্তরের (ক্লাউড লেয়ার) নিচের জলবায়ুর তথ্য জানা যায় না। এজন্য কয়েক হাজার মিটার উচ্চতায় বৃহদাকারের বেলুন ওড়ানো হয়, যার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য সরাসরি কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের কাছে পৌছে যায়। দেশের বিভাগীয় আবহাওয়া দপ্তরগুলোতে এই বেলুন উড়ানো হলেও ফরিদপুরে এখনো এই বেলুন উড়েনি। কৃষিভিত্তিক ফরিদপুর অঞ্চলের জন্য এই বেলুন খুবই জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর আবহাওয়া দপ্তরের পেশাগত সহকারী সুরজুল আমীন বলেন, জেলা পর্যায়ের এই দপ্তর থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয় না। আমরা প্রতিদিন দুবার আবহাওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন সূচকের তথ্য সংগ্রহ করে ঢাকায় প্রেরণ করি। এছাড়া ওয়েদার স্টেশন থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

জনবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকটের ব্যাপারে তিনি বলেন, যন্ত্রপাতি আধুনিক হলে অবশ্যই প্রাপ্ত তথ্যাদিও নিখুঁত হবে। এছাড়া এখান থেকে বেলুন ওড়ানো গেলে অনেক উচ্চতা থেকে আবহাওয়ার তথ্যাদি সংগ্রহ সম্ভব হবে।

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি আবহাওয়া দপ্তরটিকে আধুনিকায়নের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে বলেন, এই দপ্তরটিকে যাতে উন্নতমানের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে রূপ দেয়া যায় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। ইতিমধ্যে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এব্যাপারে চিঠি লিখে জানানো হয়েছে। যাতে কৃষিভিত্তিক এই জনপদের মানুষ যাতে কৃষিকাজের উপযোগী ও ক্ষতিকর জরুরি আবহাওয়া বিষয়ক তথ্যাদি পেতে পারে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.