আবরার হত্যার এক মাসেও কান্না থামেনি পরিবারের

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ (২১) হত্যার এক মাস পূর্ণ হলো আজ। গত ৬ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। ছেলে হারানোর একমাস পূর্ণ হলেও এখনও কান্না থামেনি আবরারের মায়ের। শোকে কাতর পরিবারের অন্য সদস্যরাও।

সন্তানের কথা মনে করে চোখের জল ফেলেন আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন

বৃহস্পতিবার সকালে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের আবরারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলে হারানোর কষ্টে এখনও সিক্ত আবরারের মা রোকেয়া খাতুনের দু'চোখ। বাবা বরকত উল্লাহ ও ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজও শোকার্ত।

তিন কক্ষ বিশিষ্ট কুষ্টিয়ার বাড়িটির একটি কক্ষ ছিল আবরারের। বাড়িতে আসলেই এই কক্ষটিতে থাকতেন তিনি। আর এখন ওই কক্ষটিতে পড়ে রয়েছে শুধু তার ব্যবহৃত বইপত্রসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় জিনিসপত্র। বড় ভাইয়ের ব্যবহৃত সেসব জিনিস এবং বইপত্র উল্টে পাল্টে দেখাচ্ছিলেন ছোট ভাই ফাইয়াজ।

এ সময় আক্ষেপ করে ফাইয়াজ বলেন, তার ভাই ছুটিতে বাড়ি আসার আগে দুটি নতুন শার্ট কিনেছিলেন। সেগুলো এখনও ট্রাঙ্কের ভেতর প্যাকেটবন্দী অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এই শার্ট আর কোন দিন গায়ে জড়ানো হবে না।

আবরারের কেনা শার্ট দুটি ট্রাংক থেকে বের করে দেখাচ্ছেন ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ

ভাইয়ের মৃত্যু পর ঢাকা কলেজ ছেড়ে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হন ফাইয়াজ। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ভাইয়ের মতো তারও ইচ্ছে ছিল বুয়েটে পড়ার। তবে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন ফাইয়াজ। এখানেই পড়ার পাশাপাশি পরিকল্পনা আছে দেশের বাহিরে চলে যাবার।

ফাইয়াজ আরো বলেন, তার ভাই শেরে বাংলা হলের নিচতলার ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। ওই কক্ষের সামনেই ছিল সামান্য খেলার জায়গা। সেই জায়গায় স্ট্যাম্প পুতে ক্রিকেট খেলতেন হলের শিক্ষার্থীরা। আবরার ফাহাদ জানালা দিয়ে খেলা দেখতেন এবং ক্রিকেট নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করতেন। অথচ সেই স্ট্যাম্প দিয়েই তার ভাইকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হলো।

কর্মস্থলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। তিনি জানান, আবরারের মামা ও মামাতো ভাই গত বুধবার বুয়েটে গিয়েছিলেন। সেখানে তারা বুয়েটের উপাচার্যের কাছে মামলার আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে আবেদন করেন। বুয়েট কর্তৃপক্ষ মামলার ব্যয় বহন করার আশ্বাস দিয়েছে।

তিনি আরো জানান, আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এজারহারভুক্ত তিন আসামি এখনও পলাতক রয়েছে। তাই তাদের যেন দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয় এবং আবরার হত্যার মামলাটি যেনো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হয়, সে দাবি জানান তিনি।

আবরারের মা রোকেয়া খাতুন কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘ব্যাটার সাথে প্রতিদিন কথা হতো। আজ একটা মাস হয়ে গেল। একটা বার জিজ্ঞেস করে না আম্মু কেমন আছো।’

রোকেয়া খাতুন নব্বইর দশকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়েছেন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে। সেসময় তিনি নিজেও বিভিন্ন আন্দোলন, মারামারি দেখেছেন। তবে বুয়েটে তেমন কোন গণ্ডগোল দেখেননি কখনও। সেই আস্থা থেকেই ছেলেকে বুয়েটে পড়তে পাঠান। কিন্তু নিরাপদবোধ করা সেই ক্যাম্পাসেই তার ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এটা কোনভাবে মেনে নিতে পারছেন না তিনি।