এবার বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেন রাঙ্গা

শহীদ নূর হোসেনকে ‘ইয়াবখোর, ফেন্সিডিলখোর’ বলে মন্তব্য করার জন্য তার পরিবারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। মঙ্গলবার মহাসচিবের পক্ষে দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে জাতীয় পার্টি। এর আগে গতকাল একটি টেলিভিশনেও এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন জাপা মহাসচিব।

জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা

বিবৃতিতে বলা হয়, গত রোববার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে 'গণতন্ত্র দিবস' উপলক্ষে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গার দেয়া কিছু বক্তব্য নিয়ে শহীদ নূর হোসেনের পরিবার ও কয়েকটি মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, প্রতি বছর নূর হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকীর দিন কয়েকটি সংগঠন আলোচনা সভা, বিবৃতি দেয়। এসব আলোচনায় সভায় ও বিবৃতিতে জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে হেয় প্রতিপন্ন করে বক্তব্য দেয়া হয়। এমনকি তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালিও করা হয়। এর ফলে প্রতিবছর দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

তাই রোববার নেতাকর্মীদের উত্তেজনার মধ্যে বক্তব্য প্রদানকালে জাপা মহাসচিব অনিচ্ছাকৃতভাবে নূর হোসেন সম্পর্কে কিছু অযাচিত কথা বলে ফেলেন। যা তার পরিবারের সদস্যদের মনে আঘাত হানে। এর জন্য মশিউর রহমান রাঙ্গা আন্তরিকভাবে দুঃক্ষিত ও অনুতপ্ত।

জাপার প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও শহীদ নূর হোসেনের পরিবারের প্রতি সমব্যাথী ছিলেন উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরো বলা হয়, জাপা মহাসচিবের অসতর্কভাবে বলে ফেলা বক্তবের ফলে নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যদের মনে যে আঘাত লেগেছে এর জন্য তিনি তার মায়ের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে তিনি তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন। এ বিষয়ে আর কোন ভুল বুঝাবুঝি থাকবে না বলেও আশা করেন তিনি।

এর আগে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে ‘ইয়াবখোর, ফেন্সিডিলখোর’ বলে মন্তব্য করায় মশিউর রহমান রাঙ্গাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেন নূর হোসেন মা মরিয়ম বেগম। সোমবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাঙ্গার মন্তব্যের প্রতিবাদে নিন্দা ও প্রতিবাদী অবস্থান নেয় নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যরা।

রোববার জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে 'গণতন্ত্র দিবস' উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কাকে হত্যা করলেন। নূর হোসেন কে? নূর হোসেন কে? একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেন্সিডিলখোর। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বর্তমানের বিরোধী দল বিএনপি গণতান্ত্রিক দুই দলই নূর হোসেনকে নিয়ে নাচানাচি করে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখবেন 'নূর হোসেন দিবস'। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদই সেই নূর হোসেন চত্বর করে দিয়েছেন।’

শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে জাপা মহাসচিবের এমন মন্তব্যের পর পরই দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। সমালোচনা করা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর তৎকালীন সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বুকে ও পিঠে 'স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক' শ্লোগান লিখে রাস্তায় নেমেছিলেন নূর হোসেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মিছিলটি রাজধারীর 'জিরো পয়েন্ট' (বর্তমান শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার) এলাকায় আসলে পুলিশ মিছিল লক্ষ্য করে কাঁদুনে গ্যাস ও গুলি ছোড়ে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান নূর হোসেন। মূলত এর পরেই এরশাদ বিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। যার প্রেক্ষিতে এক পর্যায়ে ক্ষমতা থেকে নামতে বাধ্য হন এরশাদ।