ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের’ তাণ্ডবে বাগেরহাটে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মৎস্যঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি পানির চাপে জেলার ঘেরগুলো থেকে গলদা চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ ভেসে গেছে। কোনো কোনো ঘেরের বাঁধ-পাড় ধসে গেছে। অনেক মৎস্যঘেরের মাছ এখনও মরে ভেসে উঠছে। ঘেরের মধ্যে গাছপালা উপড়ে পড়ায় গাছ ও পাতা পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

bulbul hatchary‘বুলবুলের’ তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগেরহাটে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মৎস্যঘের

মৎস্য বিভাগ জানায়, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের’ আঘাতের কারণে মৎস্য চাষিরা কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছে। চিংড়ি শিল্পে একের পর এক বিপর্যয়ের কারণে চাষিরা হতাশায় ভুগছেন। এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার পর বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় চিংড়িঘেরে অক্সিজেনের অভাবে প্রায় ২৫ কোটি টাকার চিংড়ি মরে গেছে।

জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসে মৌসুমের শুরুতেই এই অঞ্চলে বাগদা চিংড়ি শিল্পে বিপর্যয় দেখা দেয়। হাট-বাজারে অস্বাভাবিক হারে চিংড়ির দরপতন ঘটে। ভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে ঘেরে চিংড়ি মরে উজার হওয়া এবং একের পর এক লোকসানের কারণে চাষিরা চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বাগেরহাটের মৎস্য চাষিদের নতুন করে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। চিংড়ি চাষে যেন লোকাসান কাটিয়ে উঠতে পারছে না চাষিরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাট সদর, চিতলমারী, ফকিরহাট, মোংলাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় একইভাবে মৎস্যঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

bulbul hatchary1ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন চাষিরা

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার চরবানিয়ারী, কৃষ্ণনগর, খড়মখালী এবং ফকিরহাট উপজেলার ডহরমৌভোগ ও ফলতিতাসহ বিভিন্ন গ্রামে সরেজমিনে দেখা গেছে, বুলবুলের তাণ্ডবের সেই চিহ্ন বিভিন্ন মৎস্যঘের এখন বহন করছে। অতিরিক্ত পানির চাপে যাতে ঘের থেকে মাছ ভেসে যেতে না পারে এ জন্য ঘেরে নেট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। কোনো কোনো ঘেরের গাছপালা উপড়ে পড়ে আছে। বিভিন্ন ঘেরে মাছ মরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।

মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে চিংড়ি চাষে। দীর্ঘদিন ধরে অনাবৃষ্টির পর ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চিংড়িঘেরে অক্সিজেনের অভাবে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এবং ঘেরের আয়াতনের চেয়ে অধিক পরিমাণ চাষ করায় মারা যাচ্ছে চিংড়ি। সনাতন পদ্ধতিতে চাষ বন্ধ করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ফকিরহাট উপজেলার ডহরমৌভোগ গ্রামের নিতিষ ঢালী জানান, কয়েক ঘণ্টা ধরে মুষোল ধারে বৃষ্টিপাতের কারণে তাদের গ্রামে বেশ কয়েকটি ঘেরের পাড় ধসে গেছে। এতে করে একটা ঘেরের সাথে আরেকটা ঘের মিশে একাকার হয়ে গেছে।

বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন জানান, বুলবুলের তাণ্ডব এবং বৃষ্টির কারণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মৎস্যঘের থেকে গলদা চিংড়ি এবং বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ ভেসে গেছে। বিশেষ করে বেড়িবাঁধের বাইরের অংশে যে সব মৎস্যঘের রয়েছে সেইগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে ভাইরাস এবং দীর্ঘদিন পর বৃষ্টিপাতের কারণে অক্সিজেনের অভাবে অসংখ্য ঘেরের চিংড়ি মারা গেছে।

bulbul hatchary2ভাইরাস এবং দীর্ঘদিন পর বৃষ্টিপাতের কারণে অক্সিজেনের অভাবে অসংখ্য ঘেরের চিংড়ি মারা যাচ্ছে

তিনি জানান, বিগত বছরের চেয়ে এ বছর মৌসুমে বাগদা চিংড়ি কেজি প্রতি ৩০০- ৪০০ টাকা মূল্যে কমছিল। বুলবুলের কারণে জেলায় মৎস্যঘেরের প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তার ধারণা। তবে আগামী এক মাস পর মৎস্যঘের থেকে সব পানি তুলে মাছ ধরার পর মৎস্য বিভাগের কি পরিমাণ টাকার ক্ষতি হয়েছে তার জানা যাবে।

এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. খালেদ কনক জানান, বুবুলের কারণে জেলায় সাত হাজার ৩৩৪টি মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ওই সব ঘেরের আয়তন দুই হাজার ৮৫১ হেক্টর। অতিরিক্ত পানিতে ঘের থেকে চিংড়ি এবং সাদা মাছ ভেসে গেছে। বৃষ্টির কারণে ঘেরের পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলেদের সাতটি নৌকা এবং চার হাজার ৪২৫ মিটার জাল ভেসে গেছে। টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে তিন কোটি। জেলার মধ্যে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মোংলা উপজেলায়।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, জেলায় মোট ৬৬ হাজার ৭২৯ হেক্টর জমিতে ৭৮ হাজার ৭০৯টি মৎস্যঘের রয়েছে। এই জেলায় মৎস্য চাষির সংখ্যা ৬৭ হাজার ৫৫৭ জন। আর জেলের সংখ্যা ৩৯ হাজার ৬২৪ জন।

এদিকে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, বুলবুরের আঘাতে জেলার বিভিন্ন সেক্টরের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরূপন করার পর তালিকা করে পাঠানো হয়েছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.