নজরদারিতে ৭০০ ফেসবুক আইডি

‘ওহ বড় কষ্ট’ লবনের মূল্য এখন ১৫০ টাকা। কই যামু?’ সুজন নামে মুন্সিগঞ্জের এক ‘প্রাইভেট জব হোল্ডার’ তার ফেসবুকে এমন পোস্ট দেন গত ১৮ নভেম্বর সকালে। এভাবেই সারাদেশে গুজব রটে যায় যে লবণের দাম বেড়েছে। পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির পর লবণের দামে অস্বাভাবিকতার জন্য এমন গুজবকেই দায়ী করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গুজব রটানো এমন ৭০০ ফেসবুক আইডি এখন পুলিশ নজরদারিতে।

'গুজব ছড়ানো' ৭০০ ফেসবুক আইডি পুলিশ নজরদারিতে 

গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের সনাক্ত ও নজরদারি করছে পুলিশ সদর দপ্তরের আইসিটি শাখা ও র‌্যাবের সাইবার ক্রাইম সেল। তারা জানান, দেশি পেঁয়াজের মজুত কমে আসায় ও আমদানি কমায় হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ লবনের মজুত থাকা সত্ত্বেও 'মূল্য বেড়ে যাওয়ার খবরে' প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। বাজার নিয়ন্ত্রণে তখন পুলিশকে মাঠে নামানো হয়। সরকারের পক্ষ থেকে টিসিবিসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পরিস্থিত তদারকি করারও নির্দেশ দেয়া হয়। মাঠ পর্যায়ে বিষয়টি তদন্ত করতে শুরু করে প্রতিষ্ঠানগুলো।

এক সূত্র জানায়, তদন্ত থেকে সাময়িকভাবে তারা জানতে পেরেছেন, লবনের মূল্য বাড়ার পেছনে মূল কারণ ‘গুজব’। এই গুজব রটানোর জন্য একটি মহল সুপরিকল্পিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে বেছে নেয়। এ সংক্রান্ত গুজব ছড়ানোর পেছনে প্রায় ৭০০ আইডি সনাক্ত করা হয়েছে।

এর আগে পদ্মা সেতু নির্মাণে ‘মানুষের মাথা’ লাগবে এবং ‘ছেলে ধরা’ বলে ফেসবুকে গুজব ছড়ানো হয়েছিলো। এতে নানা সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছিলো। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল দুবাই থেকে এক তরুণ এ গুজব ছড়িয়েছিল।

তবে এবার লবণের গুজব বিদেশ থেকে নয়, বরং দেশ থেকেই ছড়ানো হয়েছে। প্রথম পোস্টগুলোর ওপর ভিত্তি করে অনেকে সেগুলো কপি করে নিজেদের ফেসবুকে পোস্ট করেন, অনেকে শেয়ারও করেন। এভাবে দ্রুত এ গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুক ছড়ানোর পর থেকে আস্তে আস্তে এটা বিভিন্নজনের কাছে ছড়িয়ে পড়লে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। দোকানে দোকানে লবণের কাড়াকাড়ি পড়ে এক লঙ্কাকাণ্ড সৃষ্টি হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর ও র‌্যাব সদর দপ্তর সূত্র জানায়, যারা এ গুজব রটিয়েছে তাদের প্রায় ৮০ শতাংশই তরুন। তবে এর মধ্যে কিছু ভুয়া আইডিও আছে, যেগুলো অবস্থান দেশে না বিদেশে তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। গোয়ান্দারা মাঠ পর্যায়ের এসব গুজব রটনাকারীদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা সংগ্রহ করছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের আইডিগুলো বিটিআরসির মাধ্যমে বন্ধ করা হয়নি। ভবিষ্যতে যাতে কোন চক্র আবারও গুজব ছড়িয়ে দেশের পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকেও নজর রাখছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড প্লানিং) এসএম রুহুল আমিন গতকাল জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যারা অপপ্রচার ও গুজব ছড়িয়ে পরিবেশকে অস্থিতিশলী করার ষড়যন্ত্র করছে, তাদের সবাইকে সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। যাতে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ আর কেউ করতে না পারে।