এ বছর হারালাম যাদের
- Details
- by ইউএনবি
কালের পরিক্রমায় আরও একটি বছর শেষ হওয়ার পথে। ২০১৯ সালে রাজনীতি, চলচ্চিত্র, শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেককে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের কথা তুলে ধরা হচ্ছে:
ফজলে হাসান আবেদ: ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
বাংলাদেশ ও এর বাইরে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে ও মর্যাদা পেতে অসাধারণ অবদান রেখেছেন স্যার আবেদ। বাংলাদেশের ব্র্যাককে তিনি সারাবিশ্বে সবচেয়ে বড় ও সম্মানিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। গড়ে তুলেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক ব্যাংক, বিকাশ ও আড়ংয়ের মতো খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান।
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিশেষত নারী ও শিশু উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় স্যার আবেদকে গত ২০ নভেম্বর নেদারল্যান্ডের রাজার পক্ষ থেকে নাইটহুড ‘অফিসার ইন দ্য অর্ডার অফ অরেঞ্জ-নাসাউ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি দারিদ্র্য বিমোচনে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের রানি কর্তৃক ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত হন।
মঈন উদ্দিন খান বাদল: মুক্তিযোদ্ধা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল গত ৭ নভেম্বর ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।
বাদল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। চট্টগ্রাম -৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন থেকে তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা বাদল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বাঙালিদের ওপর আক্রমণের জন্য পাকিস্তান থেকে আনা অস্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে খালাসের সময় প্রতিরোধের অন্যতম নেতৃত্বদাতা ছিলেন বাদল। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাদল সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। জাসদ, বাসদ হয়ে পুনরায় জাসদে আসেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠনেও তার ভূমিকা ছিল।
সাদেক হোসেন খোকা: অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। খোকা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ছিলেন গেরিলা যোদ্ধা। তিনি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে পা রাখেন। ২০০২ সালে তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি প্রায় ৯ বছর ধরে এ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
কালিদাস কর্মকার: একুশে পদক বিজয়ী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী কালিদাস কর্মকার গত ১৮ অক্টোবর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। গ্যালারি কসমসের একজন উপদেষ্টা ছিলেন কালিদাস কর্মকার। চারুকলায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কালিদাস কর্মকার ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক ও ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। তার বিচিত্র সব শিল্পকর্ম দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ব্যাপকভাবে প্রদর্শিত হয়েছে।
এইচ এম এরশাদ: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ ১৪ জুলাই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টির প্রধান ও সাবেক সেনাশাসকের ঘটনাবহুল জীবনের সমাপ্তি ঘটে।
১৯৮২ সালে সেনাপ্রধান থাকাকালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন এরশাদ। পরে তিনি জাতীয় পার্টি গঠন করেন এবং ১৯৮৬ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে জয়লাভ করেন। পরে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী প্রবল গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।
মমতাজউদদীন আহমেদ: একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত নাট্যকার ও অভিনেতা অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমেদ গত ২ জুন মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
১৯৩৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী মমতাজউদদীন ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক। তিনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত। নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৯৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
সুবীর নন্দী: একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী গত ৭ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।
চার দশকে ক্যারিয়ারে তিনি প্রায় দুই হাজার ছবিতে গান করেন। সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের পর তিনিই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছবিতে গান গাওয়ার রেকর্ড করেন। এছাড়া ১৯৯৪ সালে সুবীর নন্দী হাউজ অব কমন্সে গান গেয়েছিলেন। তিনি পাঁচবার প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৯ সালে সুবীর নন্দী বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মাননা ‘একুশে পদকে’ ভূষিত হন।
সালেহ আহমেদ: জনপ্রিয় অভিনেতা সালেহ আহমেদ ২৪ এপ্রিল মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
টেলি সামাদ: বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ ৬ এপ্রিল মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
১৯৭৩ সালে ‘কার বউ’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। চার দশকে ৬০০ বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন গুণী এই অভিনেতা। আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘নয়নমনি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি।
শাহনাজ রহমতউল্লাহ: দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ গত ২৪ মার্চ না ফেরার দেশে চলে যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।
একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী শাহনাজ রহমতউল্লাহ ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘সাগরের তীর থেকে’, ‘খোলা জানালা’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে, এবার বল’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ সহ অসংখ্য গান গেয়ে মানুষের মন জয় করেছেন। তিনি মূলত আধুনিক ও দেশাত্মবোধক গান গাইতেন।
আল মাহমুদ: দেশের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ ১৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান।
মীর আব্দুস শুকুর আল মাহমুদ, যিনি আল মাহমুদ নামে পরিচিত, তিনি বাংলাদেশের একজন প্রধানতম কবি, ঔপন্যাসিক এবং ছোট গল্প লেখক। উনিশ শতকে আল মাহমুদ সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি হিসেবে আবির্ভূত হন। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ আল মাহমুদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং কবি জসিম উদ্দিন পুরস্কারে ভূষিত হন।
ইমতিয়াজ বুলবুল: একুশে পদকপ্রাপ্ত গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ২২ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
‘আমার সারা দেহ খেও গো মাটি এই চোখ দুটো মাটি খেও না’, ‘এই রেল লাইনের ধারে মেঠো পথটার পারে দাঁড়িয়ে এক মধ্যবয়সী নারী এখনো রয়েছে হাত বাড়িয়ে’, ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’-সহ অসংখ্য গানে তার দেয়া সুর দেশের মানুষের বুকে চিরদিন বাজবে। রাষ্ট্রপতির পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭১ সালে কিশোর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ইউএনবি।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.