২০১৯: সুদহারে বিনিয়োগকারী আর নিত্যপণ্যে কেঁদেছে ভোক্তা
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল ব্যাংক ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিটে আনার বিষয়টি। শিল্পে বিনিয়োগের গতি বাড়াতে এর বিকল্প নেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। অন্যদিকে, নিত্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির প্রভাব সারা বছরই ভুগিয়েছে সাধারণ ভোক্তাদের। বছরের শেষে পেঁয়াজের ঝাঁজে যেভাবে কেঁদেছেন ভোক্তারা তাতে ঢাকা পড়েছে অতীতের সব রেকর্ড। বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করায় দাম কমতির দিকে, তবে স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে এখনও কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।
অর্থনীতির অন্য সূচকগুলের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বছরজুড়েই ছিল নেতিবাচক ধারায়। নতুন ভ্যাট আইন চালু হওয়ার পর কাঙ্খিত হারে রাজস্ব আহরণ না হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে এ খাতেও। তবে প্রণোদনা দেয়ার পর রেমিটেন্স খাতে বেড়েছে প্রবৃদ্ধি। আগামীতে আরও বাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। বছরজুড়ে অর্থনীতির ধূসর সময়ে আশার খবর হলো- নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও খাদ্য উৎপাদন ভালো হয়েছে।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সাবেক মহাপরিচালক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এম কে মুজেরী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে কিছুটা গতি কমে যাওয়ায় আমদানি-রফতানির পরিমাণ কমছে। কমছে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের পরিমাণও। এ রকম চলতে থাকলে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। এখন সরকারকে কঠোর মনিটরিং করতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অর্থনীতির অন্যান্য খাতের অবস্থা খারাপ থাকলেও এতদিন বৈদেশিক খাত ভালো ছিল। কিন্তু বর্তমানে এ খাতেও কালো মেঘ দেখা দিয়েছে। ফলে এ খাতে গুরুত্ব দেয়া উচিত।
এ অর্থনীতিবিদের মতে, বিনিয়োগ বাড়লেও তা সরকারিভাবে অবকাঠামো খাতে। এর সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগ, রাজস্ব আদায়, মুদ্রানীতি, টাকার মূল্যমান, আয় ব্যয় এবং অন্যান্য বাণিজ্য নীতির সম্পর্ক খুবই দুর্বল।
বিনিয়োগ
বিদেশি বিনিয়োগে মন্দা কাটাতে বিশেষ উদ্যোগের ফল মিলছে। চলতি অর্থবছরে জুলাই-আগস্টে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৭৫ কোটি মার্কিন ডলারের। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেশি।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে একই সময়ে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসে ৭০ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু দেশি বিনিয়োগে অন্ধকার বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যেখানে দেশি বিনিয়োগ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা, সেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকায়।
মূলত ঋণের সুদ হার এক অংকে নেমে না আসায় এবং ব্যাংকে ঋণখেলাপি বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগে আসতে পারেননি দেশি উদ্যোক্তারা।
মূল্যস্ফীতি
খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত- দুই ধরনের পণ্যেই মূল্যস্ফীতি বছরজুড়ে ভুগিয়েছে ভোক্তাদের। বিশেষ করে পেঁয়াজ তো উচ্চবিত্তদেরও কাঁদিয়েই ছেড়েছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য হ্রাস, চীন ও ভারতসহ বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি- আমাদের চাপ বাড়িয়েছে। টাকার মূল্যমান কমে যাওয়ায় খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে বেড়েছে মূল্য।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আগের বছরে এ সময়ে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
নিত্যপণ্যের বাজার
বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের মূল্য ৫৩৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের হিসাবে ১ মাসের ব্যবধানে চিকন চালের মূল্য ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ, মাঝারি চাল ৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও মোটা চালের দাম ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়েছে। অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে। বছরজুড়ে সবজি কিনতে হিমশিম খেতে হয়েছে ভোক্তাদের।
আমদানি ও রপ্তানি
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, গত জুলাই থেকে অক্টোবর- ৪ মাসে রপ্তানি আয় কমেছে লক্ষ্যের চেয়ে ১৬১ কোটি মার্কিন ডলার। এ সময়ে লক্ষ্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৪৩৩ কোটি মার্কিন ডলার। বিপরীতে আয় হয়েছে ১ হাজার ২৭২ কোটি ডলার। এটি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৭ শতাংশ কম।
রপ্তানির প্রধান দুটি বাজার হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউ অঞ্চলে প্রথম ৩ মাসে রপ্তানি আয় কমেছে। রপ্তানির অর্ডার ও পণ্যের মূল্যও কমেছে। এ ছাড়া অবকাঠমোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রপ্তানি বাণিজ্য কমে গেছে।
রাজস্ব-আদায়
চলতি অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি অর্জন বড় চ্যালেঞ্জই হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৬২ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। ৩ মাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
দেশের অর্থনীতির আকার ৩০০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ১২০ বিলিয়ন ডলারই কোনো না কোনোভাবে বিদেশের সঙ্গে যুক্ত। ভারত, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্পৃক্ততা বেশি।
বৈশ্বিক অর্থনীতির পূর্বাভাস হচ্ছে- আগামী বছর ভারতের প্রবৃদ্ধি বাড়বে। চীনের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়ে ৬ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকটা স্থিতিশীল থাকবে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ২। এ ধারা আগামী বছরেও অব্যাহত থাকবে।
রেমিটেন্স
রেমিটেন্স নিয়ে স্বস্তিতে আছে সরকার। প্রবাসীদের আয় বৈধপথে দেশে আনা বাড়াতে জুলাই থেকে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ ১০০ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠালে তিনি ১০২ টাকা পাবেন। এর পর থেকে রেমিটেন্স বাড়তে থাকে। জুলাই থেকে অক্টোবর- ৪ মাসে রেমিটেন্স এসেছে ৬১৫ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ৫১০ কোটি ডলার।
অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন
চলতি অর্থবছরে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন গত অর্থবছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সময়ে আউস উৎপাদন বেড়েছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ, আমন শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ ও বোরো ধান বেড়েছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
এ প্রবণতা থেকে চলতি অর্থবছরে মোট খাদ্য শস্যের উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ কোটি ৮৭ লাখ টন। এর মধ্যে আউস ২৯ লাখ ৩০ হাজার টন, আমন ১ কোটি ৫৩ লাখ টন ও বোরো ২ কোটি ৪ লাখ টন। পর্যাপ্ত উৎপাদন হওয়ায় চালের বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.