রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা নতুন কিছু নয়। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত এমন ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বেসিক ব্যাংক। ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের ব্যাংকটি থেকে নেওয়া সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ৬১টি মামলার তদন্ত বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে এবার সামনে এসেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকটির ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে এক ব্যক্তির কানাডায় 'আত্মগোপন' করার খবর।

belaet bangla canada

মঙ্গলবার দৈনিক দেশ রূপান্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্ক্র্যাপ (জাহাজ ভাঙা) ব্যবসায়ী গাজী বেলায়েত হোসেন মিঠু ওরফে জি বি হোসেনের বিরুদ্ধে বেসিক ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে কানাডায় 'আত্মগোপন' করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির ঋণ কেলেঙ্কারিতে নাম আসা সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত।

জানা যায়, গাজী বেলায়েত হোসেনের দুটি পাসপোর্ট রয়েছে। একটি বাংলাদেশি এবং আরেকটি কানাডিয়ান। বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতিতে নাম উঠে আসার পর দুদক প্রথমে তার বাংলাদেশি পাসপোর্টের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর ফলে ওই পাসপোর্টের মাধ্যমে তার বিদেশ আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি কানাডিয়ান পাসপোর্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ আসলে গত বছরের ১৮ এপ্রিল দুদকের সহকারী পরিচালক এ কে এম ফজলে হোসেন তার ওই পাসপোর্টের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যাতে তিনি বিদেশ পালিয়ে যেতে না পারেন। কিন্তু তিনি দুদককে কাঁচকলা দেখিয়ে বিদেশ পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক পরিচালক (বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির অনুসন্ধান দলের নেতা) সৈয়দ ইকবাল হোসেন দৈনিকটিকে জানান, গাজী বেলায়েত তার বিদেশ যাওয়ার বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেন। আদালত তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলে তিনি বিদেশ চলে যান। এরপর আর তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, তিনি বর্তমানে কানাডায় বসবাস করছেন। তার কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়ির ঠিকানাও পাওয়া গেছে। শীঘ্রই কানাডা সরকারের কাছে এই ঋণ তার বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে মিচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকুয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হবে।

গাজী বেলায়েতের ঋণ জালিয়াতির বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের এ পরিচালক বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজের দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে বেসিক ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নিয়েছেন। যার একটি ইতোমধ্যে সমন্বয় করা হয়েছে এবং অন্যটি চলমান রয়েছে। তবে তার নেওয়া বেশিরভাগ ঋণই বেনামি এবং ভুয়া। সেগুলো শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের আরেক পরিচালক দৈনিকটিকে জানান, মেসার্স বেলায়েত নেভিগেশনসহ বেশ কয়েকটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে বড় অংকের ঋণ নিয়েছেন গাজী বেলায়েত। এসব ঋণ নেওয়ার জন্য তিনি বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু ও গুলশান শাখার ম্যানেজার শিপার আহম্মেদসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের ঘুষও প্রদান করেন। আর তার এ ঋণ জালিয়াতির সকল নথিপত্র তৈরি করে দিয়েছেন শিপার, যিনি বর্তমানে দুদকের দায়ের করা মামলায় কারাগারে আছেন।

যদিও বাচ্চুর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন মামলা করেনি দুদক। তবে তিনি বর্তমানে দেশেই আছেন বলে জানা গেছে।

দুদকের পাওয়া তথ্যমতে, চারটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান জাহাজ আমদানির নাম করে বেসিক ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে মোট ১২৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়। যেগুলো মূলত বেলায়েত বা তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। তবে ঋণ নিলেও কোন জাহাজ আমদানি করেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। ঋণ নেওয়া এসব প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বেলায়েত নেভিগেশন কোম্পানির নামে ২৪ কোটি, রিলায়েন্স শিপিং লাইনসের নামে ১৬ কোটি, এসবিআই শিপিং লাইনের নামে ১৫ কোটি এবং বে নেভিগেশনের নামে ৭০ কোটি টাকা।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, এ জালিয়াতির পেছনে রয়েছেন গাজী বেলায়েত নিজে। বেলায়েত নেভিগেশনের মালিকও তিনি। তবে তার বিরুদ্ধে বেসিক ব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ থাকলেও সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেনি দুদক।

জানা যায়, বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ১২টি কোম্পানি ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়। কোম্পানিগুলো হলো- এসএফজি শিপিং লাইন, এস সুহী শিপিং লাইন, এশিয়ান শিপিং লাইন, এস রিসোর্সের শিপিং লাইন, শিফান শিপিং লাইন, ল্যাবস এন্টারপ্রাইজ, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, ব্রাদার্স এন্টারপ্রাইজ, গ্রীন বাংলা হোল্ডিং কিয়েব ট্রেডিং, ডেল্টা সিস্টেমস লিমিটেড, বাসগৃহ প্রোপাটিজ এবং এম নাছিরউদ্দিন।

কিন্তু কোম্পানিগুলো ঋণের টাকা নিজেদের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সরাসরি লেনদেন না করে ১৭টি ব্যাংকের ২৪টি শাখা থেকে ৩৩টি প্রতিষ্ঠান ও ৮ জন ব্যক্তির নামে পে-অর্ডারের মাধ্যমে অল্প অল্প করে তুলে নেয়। ফলে এ টাকা আত্মসাতের পেছনে মূল সুবিধাভোগী কে তা এখনো শনাক্ত করতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে একাধিক শিপিং লাইনের সঙ্গে গাজী বেলায়েতের সংশ্লিষ্টতা আছে। এছাড়া তার নামে বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিভোয়া), কোস্টাল শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) ও ওয়াটার ট্রান্সপোট কো-অর্ডিনেশনের (ডব্লিউটিসি) তহবিল লুটেরও অভিযোগ রয়েছে।

কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, গাজী বেলায়েত বর্তমানে কানাডার টরন্টোতে রয়েছেন। প্রায় সময়ই তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় গিয়ে বাংলাদেশে থাকা তার ব্যবসা-বাণিজ্যের তদারকি করেন। এমনকি টরন্টোতে তার ৮-১০টি পেট্রলপাম্পসহ কলাপাতা নামের একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টও আছে। ২০১৫ সালে সেখানের হিলক্রেস্ট স্কারবোরোতে ২ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার দিয়ে একটি বাড়িও কিনেছেন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.