ধর্মান্তরিত সেই ১২ জনকে ভারতে পাঠানোর নেপথ্যে...

বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ মাহফিলে একই পরিবারের ১২ জন ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। গত ২৪ জানুয়ারি লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার পানপাড়া গ্রামের ওই ঘটনার তাদের সবাইকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একসঙ্গে একই পরিবারের ১২ সদস্যের ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেয়ার ঘটনাটি নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। আলোচিত এই পরিবারটি ভারতে বসবাস করতো এবং সেখানে হিন্দু ধর্মের অনুসারী ছিল। বাংলাদেশে এসে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর পুলিশ তাদের আটক করলেও কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি।

কেন তাদের আটক করে ভারতে ফেরত পাঠানো হলেো- এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের দাবি, তারা ভারতীয় ভিসা নিয়ে সেদেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে ঢুকেছিলেন, সে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাদের ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, ধর্মান্তরিত মনির হোসেনের পূর্ব নাম শঙ্কর অধিকারী। তিনিসহ পরিবারের ১২ জন দুই মাসের ভিসা নিয়ে ২০১৯ সালের ১৪ আগস্ট বাংলাদেশে আসেন। এরপর তারা আর ফেরত যায়নি।

ভারত যাওয়ার আগে মনির হোসেন বলেন, ‘সবকিছু বিক্রি করে বাংলাদেশে চলে আসি। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে বাংলাদেশি জন্মসনদ তৈরি করি। পরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার ইছাপুর গ্রামে চলে যাই। এখন ভারত গিয়ে কি করবো।’

জানা যায়, মনির হোসেনের জন্ম বাংলাদেশে। তার বাবা রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের ডাক্তার বাড়ির মজিবুল হক এবং মা বর্তমান সংরক্ষিত ইউপি সদস্য ফাতেমা বেগম। প্রায় ৩৫ বছর আগে তিনি ঢাকার টঙ্গিতে খালা হালিমার কাছে থেকে ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। সেই সময় তার বয়স ছিল ১৪ বছর। বিশ্ব ইজতেমা চলাকালীন একদিন তিনি হারিয়ে যান। পরে অনেক জায়গায় খোঁজাখুজি করলেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে মনিরের ছোট ভাই ও ফাতেমা বেগমের ছেলে জহির উদ্দিন বলেন, ২০১৬ সালে মনির হোসেন একবার ঢাকায় এসেছিলেন। নিজের ধর্ম পরিবর্তন করে হিন্দু হয়ে যাওয়ায় তাকে আবার কলকাতায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে গত বছর স্ত্রী-সন্তানসহ আবার দেশে ফিরে আসেন। তখন পরিবারসহ পুনরায় মুসলমান হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন তিনি।

নওমুসলিম পরিবারটিকে ভারতের ফেরত পাঠানোর নেপথ্য কারণ?

বিবিসি জানিয়েছে, মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ মাহফিলে একই পরিবারের ১২ সদস্যের ইসলাম ধর্মগ্রহণ সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যা নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।

লক্ষীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার পানপাড়া গ্রামে ওই মাহফিলের আয়োজন করেছিল স্থানীয় মসজিদ কমিটি। সেখানে ওয়াজ করেন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। তার মাহফিলে প্রচুর লোকসমাগম হয়।

মাওলানা আজহারীর উপস্থিতিতে সেদিন মনিরুলের পরিবারের ১২ জন সদস্য হিন্দু ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। এর আগেও তার মাহফিলে ধর্মান্তকরণের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজহারীর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক বিতর্ক চলছে।

তবে লক্ষীপুরের ঘটনাটি নিয়ে অনুসন্ধানে নামার কথা জানিয়ে পুলিশ বলছে, ধর্মান্তরিত এই পরিবারটি বাংলাদেশি নয়, তারা সবাই ভারতীয় নাগরিক। বিষয়টি জানা ছিল না বলে জানিয়েছে মাহফিলের আয়োজকরা।

এ বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার এ এইচ এম কামরুজ্জামান জানান, ধর্মান্তরের ঘটনার পর তদন্তে নেমে পুলিশ মনিরুলের পরিবার সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানতে পারেন। তার দুই স্ত্রীর ঘরে রয়েছে আট সন্তান, একজন নাতিও আছে। তারা সবাই বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল, সেখান দিয়েই তাদের আবার ফেরত পাঠানো হয়েছে।