মিন্নির জামিন বাতিলের শুনানি শেষ, 'হুমকি' তদন্তের নির্দেশ

দেশজুড়ে আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার সাক্ষীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন বাতিলের নির্দেশ চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশকে হুমকির ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রোববার বেলা ১১টায় বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ নির্দেশ দেন। বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আগামী সাত কর্যদিবসের মধ্যে ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মজিবুল হক কিসুল জানান, সাক্ষীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গত ৮ জানুয়ারি তারা আদালতে রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন বাতিলের আবেদন করেন। এ সময় আদালত মিন্নির জামিন কেন বাতিল হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীপক্ষকে গত ১৫ জানুয়ারির মধ্যে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর আদেশ দেন।

পরে গত ১৫ জানুয়ারি মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম এ বিষয়ে লিখিতভাবে জবাব দিলে আদালত অধিকতর শুনানির জন্য আজ রোববার দিন ধার্য করেন। মিন্নির জামিন বাতিলের বিষয়ে আজ শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা ফের আদালতে আবেদন করেন। পরে বিচারক মো. আছাদুজ্জামান পুলিশকে হুমকির ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকালে প্রকাশ্যে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাতকে (২২) কুপিয়ে আহত করা হয়। এ সময় স্বামীকে বাঁচাতে চেষ্টা করতে দেখা যায় মিন্নিকে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নেয়ার পর মারা যান রিফাত। এ ঘটনায় তার বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলায় এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। রিফাত হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী মিন্নিকে ১৬ জুলাই সকাল পৌনে ১০টার দিকে পুলিশ লাইনে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টার দিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন তাকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। তবে রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ১৯ জুলাই তাকে আদালতে হাজির করা হয় এবং তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে মিন্নিকে বরগুনা কারাগারে পাঠানো হয়।

তবে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের দাবি, কারাগারে মিন্নি তাদের জানিয়েছেন যে, নির্যাতন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে গত ৩১ জুলাই মিন্নির ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হয়।

এদিকে, গত ২০ আগস্ট আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে কেন জামিন দেওয়া হবে তা জানতে চেয়ে একটি রুল জারি করেন আদালত। এর প্রেক্ষিতেই শুনানি শেষে গত ২৯ আগস্ট মিন্নির জামিন মঞ্জুর করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি দ্বৈতবেঞ্চ।

এর আগে গত ৩০ জুলাই বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেন। তারও আগে গত ২১ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচরিক হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী মিন্নির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। তার পরই মিন্নির জামিনের বিষয়টি হাইকোর্টে আসে।