সিটি নির্বাচন: মহানগর বিএনপিতে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন!

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোটের দিন বিএনপির মহানগর নেতাদের সাংগঠনিক দূরবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে নাখোশ দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। তাই ভোটের পর দিন থেকেই বিশেষ টিম করে অনুসন্ধান শুরু করেছে সংগঠনটি। ধারণা করা হচ্ছে, বিএনপির মহানগরের নেতাদের ব্যাপারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেইসঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণের মহানগর কমিটি ভেঙে নতুন নেতৃত্বে দেয়া হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রগুলো সকালেই দখল করে নেয় সরকারি দলের লোকজন। সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করতে গেলে বড় ধরনের সংঘাত হতো। এরপর বিএনপির নেতাদের ওপর হতো শত শত মামলা।

কিন্তু ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার এমন কথা বললেও ওই দিন মহানগরের নেতাদের ভূমিকা যে আশানুরূপ ছিল না তাতে কোনো সন্দেহ নেই বলে মনে করা হচ্ছে। আার সে কারণেই বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বৈঠকেও সমালোচনা হয়েছে ভোটের দিন মহানগর কমিটির ভূমিকা নিয়ে। দলটির সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই আওয়ামী লীগ ভোটকেন্দ্র দখল করতে সক্ষম হয়েছে। বৈঠকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর নেতাদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা হয়। এ সময় বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটিকে ঢেলে সাজানোর তাগিদ দেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

জানা গেছে, দুই সিটিতে ভোট বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে দুটি বিশেষ অনুসন্ধানী দল গঠন করেছে বিএনপি। একটি অনুসন্ধান করবে ভোটের দিন আওয়ামী লীগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী ছিল? দ্বিতীয় দলটি খুঁজে বের করবে বিএনপির পোলিং এজেন্টরা কেন কেন্দ্রে যায়নি এবং ভোটের সময় মহানগর বিএনপি নেতাদের ভূমিকা কী ছিল? অনুসন্ধানে ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মী ও সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের বক্তব্য নেয়া হচ্ছে।

দলের এক নেতা জানান, ভোটের আগের দিন প্রত্যেকটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করা হয়েছিল। অনেকেই নিয়োগপত্র নিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়েছে। যারা পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পাওয়ার পরও কেন্দ্রে যায়নি, তাদের বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিন্ন করা হতে পারে। মহানগর কমিটির যেসব নেতা ভোটের দিন ভোট দেননি তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের দল থেকে শোকজ করা হতে পারে। প্রয়োজন হলে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে। এরপর সময়মতো মহানগর কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দেয়া হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, ভোটের আগের দিন রাতে পুলিশ বিএনপি নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করেছে। পোলিং এজেন্টদের এলাকা ছাড়া করতে বাধ্য করেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে অনেকে হয়তো কেন্দ্রে ভোট দিতে যায়নি।

ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি ও বিএনপি সমর্থিত ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফেরদৌস আহমেদ মিষ্টি বলেন, ভোটের দিন দেখা গেছে একদল বহিরাগত নৌকার ব্যাজ পড়ে কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে। বিষয়টি প্রতিহত করা যেত। কিন্তু বিএনপির মধ্যে সমন্বয় নেই, তাই তা সম্ভব হয়নি। মহানগর নেতারা কেন ভোট কেন্দ্রে যাননি তা তারাই ভালো বলতে পারবেন।

বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর কমিটি দেয়া হয় ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল। ৭০ সদস্যের কমিটি নিয়ে ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি হন হাবিব-উন নবী খান সোহেল, আর সাধারণ সম্পাদক হন কাজী আবুল বাশার। অন্যদিকে, উত্তরে ৬৬ সদস্যের কমিটি নিয়ে সভাপতি হন এমএ কাইয়ুম আর সাধারণ সম্পাদক হন আহসান উল্লাহ হাসান।