বিশ্বজয়ের হাসির মধ্যেও লুকিয়ে ছিল বুকভাঙা কান্না

যুববিশ্বকাপের আগের ম্যাচগুলোতে খুব একটা রান করতে পারেননি আকবর আলি। আসলে তাকে দরকারই পড়েনি। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান আকবর ব্যাটিংয়ে নামার আগেই জয় নিশ্চিত করে ফেলছিল বাংলাদেশ। ‘সুযোগ না পাওয়া’ আকবর হয়তো নিজেকে জমিয়ে রেখেছিলেন ফাইনালের জন্য! ভারতের বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটাতে কাল কী বীরত্বই না দেখালেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক।

ভারতের ১৭৭ রানের জবাবে বিনা উইকেটে ৫০ রান তোলা বাংলাদেশের ইনিংস হঠাৎ-ই যেন তাসের ঘরে পরিণত হল! রবি বিষ্ণুর স্পিন বিষে বিনা উইকেটে ৫০ থেকে বাংলাদেশ হঠাৎ পাঁচ উইকেটে ৮৫! এর মধ্যে হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। একটা সময় বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়াল ১০২/৬। সেখান থেকে আকবর বুক চিতিয়ে লড়লেন, বিশ্বজয় করলেন।

বিষধর হয়ে উঠা ভারতের বোলিং আক্রমণকে পাশ কাটিয়ে উইকেট পরে থাকার পরিকল্পনা আঁটলেন, দুর্দান্তভাবে তাতে সফলও হলেন।

অপর প্রান্তে উইকেট হারালেও এক মনে অবিচল থেকেছেন আকবর। যেন পণ করেছিলেন বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে তবেই হাসবেন! অবিস্মরণীয় লাড়াই শেষে হেসেছেন আকবর, হাসিয়েছেন পুরো বাংলাদেশকে।

তবে অনেকে হয়তো জানেন না, আকবরের এই বিশ্বজয়ের হাসির মধ্যেও লুকিয়ে ছিল বুকভাঙা কান্না। তার ক্রিকেটার হয়ে উঠার পেছনে বড় অবদান একমাত্র বোন খাদিজা খাতুনের। আকবর মাঠে নামলে জায়নামাজে বসে পড়তেন খাদিজা, দোয়া করতেন ভাই যেন বাংলাদেশকে আরেকটা জয় এনে দিতে পারেন। পরিবারের সবার ছোট বলে আকবর ছিলো বোন খাদিজার কলিজার টুকরা। যুববিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে ছোট ভাইয়ের মাথায় বুলিয়ে কতো কথাই বলেছেন খাদিজা। সেই মানুষটি আর নেই।

জমজ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন গত ২২ জানুয়ারি। খবরটা প্রথমে জানতে দেওয়া হয়নি আকবরকে। বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামতে গিয়ে যদি মনোযোগ হারিয়ে বসেন, তাই। কিন্তু গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পর কোনভাবে তা জানতে পারেন আকবর। অধিনায়কের এই শোক ছুয়ে যায় পুরো দলকে।

শোক নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডের মতো শক্ত প্রতিপক্ষকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে তোলেন বাংলাদেশকে। তারপরের গল্পটা তো সবাই জানা, ভারতকে হারিয়ে কাল বিশ্বজয় করেছেন আকবররা।

রংপুরে আকবরের বাড়িতে এখন দুই রকম অনুভূতি। তার বাবা বলছিলেন, ‘পাকিস্তান ম্যাচের এক দিন আগে আমাদের একমাত্র মেয়ে মারা যায়। চার ভাইয়ের একটাই বোন। আকবর বাড়ির সবার ছোট হওয়াতে ও ছিল ওর বোনের কলিজার টুকরা। মৃত্যুসংবাদটা ওকে দিতে চাইনি। কিন্তু কীভাবে যেন পেয়ে যায়। আগে কিছু বলেনি। পাকিস্তান ম্যাচের পর ওর মেজ ভাইয়ের কাছে খবর না জানানোর কৈফিয়ত চাইলে আমরাও কিছুটা ঘাবড়ে যাই। আমি তো ওর সঙ্গে কথা বলার সাহসই পাইনি। কী জবাব দেব?’

বিশ্বজয়ীরা বুঝি এমনই হয়। শত প্রতিকূলতা আটকাতে পারে না তাদের।