গবেষণা: ক্লোরোকুইনের চেয়ে সাধারণ চিকিৎসাই বেশি কার্যকর

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হাউড্রোক্সিক্লোকুইন সাধারণ চিকিৎসার মতো ভূমিকা রাখতে পারে না। সম্প্রতি স্বল্প পরিসরে পরিচালিতে এক গবেষণায় এমনটাই দেখা গেছে। অথচ অনেকেই করোনার চিকিৎসায় ক্লোরোকুইনের কথা বলছেন। 

ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন

যেমন- সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার ওই প্রতিষেধকটি ব্যবহারের পক্ষে কথা বলেছেন। তার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন দেশটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।

কিন্তু চীনের ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটির জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণা বলছে, করোনাভাইরাসের রোগীদের ক্ষেত্রে যাদের সাধারণ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, তাদের তুলনায় ক্লোরোকুইন গ্রহণকারীদের মধ্যে তেমন ভালো ফল পাওয়া যায়নি। বরং ক্লোরোকুইন ব্যবহারের পর দেখা যায়, অনেকের হিতে বিপরীত হয়েছে।

ওই গবেষণাপত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন প্রভাবশালী গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ বলছে, মাত্র ৩০ জন করোনা রোগীর ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করেন চীনে সাংহাই পাবলিক হেলথ ক্লিনিক্যাল সেন্টারের ইনফেকশন এন্ড ইমিউনিটি ডিপার্টমেন্টের গবেষকরা।

এদের মধ্যে ১৫ জন রোগীকে তারা ম্যালেরিয়ার ওই ওষুধটি দেন। বাকি ১৫ জনকে সাধারণ ওষুধ দেয়া হয়। এক সপ্তাহ পর তারা দেখতে পান, যে ১৫ জনকে ম্যালেরিয়ার ওষুধ দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ১৩ জনের রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে। আর ১৪ জনের রেজাল্ট নেগেটিভ আসে যাদের সাধারণ ওষুধ দেখা হয়।

গবেষণাটির ফলাফল পরিসংখ্যানগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ  নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্লুমবার্গ বলছে, অন্যদিকে ফ্রান্সে ৪০ জন করোনা রোগীর ওপর এ ধরনের একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। যাদের ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যান্টিবায়োটিক অ্যাজিথ্রোমাইসিন সমন্বয় করে প্রয়োগ করা হয়। পরে নাসারন্ধ্রের শ্লেষ্মার ভিত্তিতে পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাদের ২৬ জনের শরীর থেকে ভারইরাসটি অপসারণে ভূমিকা রেখেছে ওষুধটি। গবেষণা ব্যাপকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও সক্ষম হয়। 

ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা গবেষণাটির ধরণ বা নকশা নিয়ে সমালোচনা করেন। তারা এটিকে কৌতূহলোদ্দীপক বললেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ধারের কাছেও নয় বলে উল্লেখ করেন।  

ব্লুমবার্গ বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বেশ কয়েকবার সাহসের সঙ্গে বলেছেন যে, করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে ম্যালেরিয়ার ওষুধ কাজ দেবে। তার সঙ্গে একমত পোষণ ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।

তিনি বলেন, ‘করোনার উপসর্গ রয়েছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা শর্তসাপেক্ষে ক্লোরোকুইন প্রেসক্রাইব করতে পারেন। প্রেসিডেন্ট এ ব্যাপারে খুব আশাবাদী।’

তবে দেশটির শীর্ষ বিজ্ঞানী এবং হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের সদস্য অ্যান্থনি ফুসি বলছেন, ক্লোরোকুইন করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে কাজ করার দাবি কল্পনাপ্রসূত। এই ওষুধ ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়ার আগে এ বিষয়ে আরো অধিকতর গবেষণা দরকার।

চীনা গবেষকদের পরিচালিত গবেষণায় যে ১৫ জনকে ক্লোরোকুইন দেওয়া হয়নি, তাদের সাধারণ চিকিৎসার মধ্যে ছিল বেড রেস্ট, অক্সিজেন ইনহেলেশন, দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের গাইডলাইন অনুযায়ী লোপিনাভির ও রিটোনাভির এবং প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।

গবেষণা চলাকালে দেখা যায়, ক্লোরোকুইন নেওয়া এক রোগী ঝুঁকিপূর্ণ রোগের দিকে ধাবিত হয়। চারজনের ক্ষেত্রে ডাইরিয়া ও লিভারের সমস্যা দেয়। কিন্তু যাদের সাধারণ চিকিৎসা দেওয়া হয় তাদের ক্ষেত্রে তিনজনের মধ্যে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

গবেষকরা এই বলে উপসংহার টানেন যে, এই ওষুধের ঝুঁকি এবং উপকার জানতে হলে বহু সংখ্যক রোগীর মধ্যে আরো অধিকতর গবেষণা প্রয়োজন।