আপনি পড়ছেন

আমি মাঝে মাঝে বিচার-শালিসে যাই। বিচার-শালিস করা একটি কঠিন কাজ। দুই পক্ষের মীমাংসার জন্য গঠনমূলক কথা ও কাজ করার জন্য আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ যোগ্যতার প্রয়োজন। একটা বিষয় লক্ষ্য করার মতো, শালিসে যে বাদী বিবাদী দুটা পক্ষ থাকেন তারা আজকাল আর ক্ষমা করতে চান না। ক্ষমার চর্চা যেন দুর্লভ হয়ে গেছে। সবাই নিজের দাবি ও কথার মধ্যে অটল থাকেন।

o muslims your prophet never said a lie

বাদী-বিবাদী সবাই যেন দুনিয়ার সব জানেন, সব বোঝেন। বিচারকদের মধ্যেও সবজান্তা ভাব আছে।

আছে ‘আমার কথা সবাই শুনুক, আমার কথায় রায় হোক’- এমন মানসিকতা। অন্যের কথা কেউ কানেই নিতে চায় না। একটা আত্মম্ভরী ও অহংকারে ভোগেন সমাজের বেশিরভাগর মানুষ। এটা শুধু গ্রাম্য বিচারেই নয়, জীবনের সবখানেই এমন অহংকারী, নিজেকে বড় দেখানোর চিন্তায় বিভোর মানুষ। অথচ পবিত্র কোরানে উনিশবার অহংকার-আত্মম্ভরিতা করতে জন্য নিষেধ করা হয়েছে। কোরানে অহংকারকে শিরকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ।

অহংকার বা নিজেকে বড় দেখানোর মানসিকতা একটি ভয়ানক ব্যাধি। এ রোগ মানুষের দুনিয়া-আখেরাত ধ্বংস করে ছাড়ে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরানের সুরা আরাফের ১৩৬ নাম্বার আয়াতে বলেছেন,

فَانْتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَأَغْرَقْنَاهُمْ فِي الْيَمِّ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُوا بِآَيَاتِنَا وَكَانُوا عَنْهَا غَافِلِينَ

‘আর যারা আমার নিদর্শনকে ছুড়ে ফেলে এবং অহংকার করে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারাই চিরকাল জাহান্নামে বসবাস করবে।’

হাদিছে এসেছে, ‘অহংকার হচ্ছে আল্লাহর চাদর। কেউ অহংকার করা মানে আল্লাহর চাদর নিয়ে টানাটানি করা।’ রিয়াদুস সালেহিন।

অহংকার নামক মারাত্মক রোগ যাকে ধরেছে সে দুনিয়াতেও এগোতে পারে না। আামার জন্মভূমি হাওর অঞ্চলে হওয়ার সুবাদে ছোটবেলা দুইজন ব্যক্তিকে খুব কাছ দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। একজন হলেন বাউল সম্রাট আব্দুল করিম, অন্যজন মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। তারা ছিলেন নিরহংকার সাদা মনের বিনয়ী মানুষ। এজন্যই আল্লাহতায়ালা তাদের এতবড় সম্মান দিয়েছেন।

প্রকৃত মুসলমানের অহংকার থাকতে পারে না। তারা চলাফেরায় কাজে কর্মে সাধারণ ও সাধামাটা থাকেন। আমি প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দেখি, যারা অহংকারের নোংরা ডোবায় হাবুডুবু খাচ্ছে। খুব কম মানুষই দেখেছি, যাদের অহংকার নেই। প্রকৃত মুসলমান কেমন হতে হয় দুটা উদাহরণ দেখি আসুন।

একবার হযরত ওমর (রা.) আমির থাকা অবস্থায় এক জনসমাগমে এক দুর্বল লোকের পায়ে পা দিয়ে দাঁড়ালে দুর্বল লোকটি রাগ হয়ে বললেন, তুমি অন্ধ নাকি? লোকটি ওমর (রা.) কে চিনতে পারেনি। ওমর (রা.) বললেন, আমি অন্ধ নই ভাই, আমার ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দিন।

আরেকবার এক লোক সমস্যায় পরে হযরত আলী (রা.) এর কাছে এলেন। আলী (রা.) নিজের মত করে তাকে সমাধান দিলেন। উপস্থিত আরেক জন লোক বললেন, আলী! আপনার সমাধান হয়নি। আমি এরচেয়ে ভাল সমাধান দিতে পারবো। বিনয়ী আলী (রা.) বললেন, তাহলে আপনি সমাধান করে দিন ভাই। এরপর লোকটি সমাধান করলেন এবং আলী (রা.) সে সমাধান হাসিমুখে মেনে নিলেন। গুলিস্ত ও বোস্তা, ২৪৬পৃষ্ঠা।

আজ যদি কেউ বড় কোনো নেতা বা পীর সাহেবের সামনে এ রকম কথা বলতেন তাহলে কেমন হত? ঘাড়ধাক্কা বা লজ্জা দেওয়া হত বিলক্ষণ। জান্নাত পেতে চাইলে এবং সুন্দর পৃথিবী গড়তে হলে অহংকার মুক্ত হতেই হবে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘বিন্দু পরিমাণ অহংকার যার মনে থাকবে, সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রান ৫শ মাইল দূর থেকে পাওয়া যাবে।’ তারগিব ওয়াত তাহরিব।

লেখক: প্রাবন্ধিক।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর