আপনি পড়ছেন

মাটির গ্রহে মাটির মানুষের মুক্তি ও কল্যানের জন্য আল্লাহ তায়ালা একটি গ্রন্থ নাজিল করেছেন। তিনি এ গ্রন্থটির নাম রেখেছেন- ‘আল-কোরআন’। পবিত্র কোরআন ছাড়াও যুগে যুগে পৃথিবীর বুকে আরো একশ তিনটি আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন আল্লাহতায়ালা। এরমধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আসামানি গ্রন্থ হলো কোরআন। এই পবিত্র কোরআনের নামকরণ সম্পর্কে জানব আজ।

surah al fatiha

পবিত্র কোরআনের নামকরণ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ

অর্থ: ‘রমজান মাস হলো সেই মাস, যে মাসে নাজিল করা হয়েছে কোরআন।’ সূরা বাকারাহ, আয়াত ১৮৫।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

অর্থ: ‘এ কোরআন আমরা আরবি ভাষায় নাজিল করেছি, যাতে তোমরা সহজে বুঝতে পারো।’ সূরা ইউসুফ, আয়াত ২।

সূরা বুরুজ আল্লাহ তাআলা বলেন,

بَلْ هُوَ قُرْآنٌ مَجِيدٌ

فِي لَوْحٍ مَحْفُوظٍ

অর্থ: ‘এ এক মহিমান্বিত কোরআন, যা লাওহে মাহফুজে- সুরক্ষিত ফলকে সংরক্ষিত। সূরা বুরুজ, আয়াত ২১-২২।

এ মহা গ্রন্থের নামকরণ সম্পর্কের আল্লামা আবুল মাআলী বলেন, কোরআনের মোট ৫৫টি নাম রয়েছে। অনেক বিষেজ্ঞের মতে, কোরআনের নাম ৯০টিরও বেশি। ইমাম জারকানি বলেন, কোরআনের মূল নাম ৫টি। আর বাকিগুলো হল গুণবাচক নাম। মানাহিল ইরফান ১/৮।

পবিত্র কোরআনের মূল ৫টি নামের মধ্যে প্রধান নাম হলো কোরআন। আল্লামা জারকানী লেখেন, কোরআন শব্দটি কিরাআত থেকে এসেছে। অর্থ পঠিত, পড়া, পাঠ করা।

আল্লাহ বলেন,

فَإِذَا قَرَأْنَاهُ فَاتَّبِعْ قُرْآنَهُ

অর্থাৎ আমরা যখন কোরআন পড়ি-পাঠ করি, তখন তুমি সে পড়া-পাঠের অনুসরণ করো।’ সূরা কিয়ামাহ, আয়াত ১৮।

পবিত্র কোরআন এমন একটি গ্রন্থ, যা বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি পঠিত বা পড়া হয়। তাই কোরআনকে কোরআন নামকরণ করা হয়েছে। অথবা কোরআন এমন এক গ্রন্থ, যা মানুষের কল্যান-মুক্তি ও ইহ-পরলোকে শান্তির জন্য অবশ্যই পড়তে হবে, বুঝতে হবে, জানতে হবে এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই কোরআনের নাম কোরআন রাখা হয়েছে। লিসানুল আরব, ১/১২৪; মু’জামুল ওয়াসীত, পৃ. ৭২২।

ভাষাবিদ আল্লামা রাগেব ইসপাহানী বলেন, কোরআন শব্দটি এসেছে কারনুন থেকে। অর্থ মেলানো, একত্রিত, সংযুক্ত। কোরআনের এক আয়াত অপর আয়াতের সঙ্গে, এক সূরা আরেক সূরার সঙ্গে, এক অংশ অন্য অংশের সঙ্গে মেলানো এবং সংযুক্ত। তাই এ নামে কোরআনের নামকরণ করা হয়েছে। শরহে নুরুল আনওয়ার, পৃ. ৮৪।

একবিংশ শতাদ্বীর অন্যতম কোরআন গবেষক আল্লামা তকি উসমানি বলেন, কোরআন নামটি মূলত অবিশ্বাসীদের প্রত্যাখ্যানের জবাবে রাখা হয়েছে।

وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَا تَسْمَعُوا لِهَٰذَا الْقُرْآنِ وَالْغَوْا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُونَ

অর্থ: ‘তারা বলেছিলো- তোমরা এ কোরআন শুনো না। তা তেলাওয়াতের সময় হট্টগোল সৃষ্টি করো। সূরা হামিম সেজদাহ, আয়াত : ২৬।

এ সিদ্ধান্তের জবাবে ‘কোরআন’ নামটি এতই প্রসিদ্ধ হয়ে যায় যে, এটিই হয়ে ওঠে এ গ্রন্থের প্রধান নাম। অবিশ্বাসীরা চেয়েছিলো- এ গ্রন্থ যেন মানুষ না শোনে। আর আল্লাহ চেয়েছেন, এটিই হবে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পঠিত গ্রন্থ। তাই এর নামও রাখা হয়েছে আল কোরআন। অধিক পড়া হয় যে বই।’ উলুমুল কোরআন : ১৮ পৃ.।

কোরআনের বাকি চারটি নাম হল- ফোরকান। যেমন আল্লাহ বলেন,

وَأَنْزَلَ الْفُرْقَانَ ۗ إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ

অর্থ: ‘তিনি নাজিল করেছেন ফোরকান। যারা আল্লাহর আয়াত মানে না, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ সূরা আলে ইমরান  ৪।

জিকির। যেমন আল্লাহ বলেন,

ذَٰلِكَ نَتْلُوهُ عَلَيْكَ مِنَ الْآيَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيمِ

অর্থ: ‘এগুলো হল আয়াত এবং জ্ঞানসমৃদ্ধ জিকির।’ সূরা আলে ইমরান ৫৮।

কিতাব। যেমন আল্লাহ বলেন,

ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ

অর্থ: ‘এ কিতাবে ভুল তো দূরের কথা কোন সন্দেহও নেই।’ সূরা বাকারাহ ২।

তানজিল। যেমন আল্লাহ বলেন,

تَنْزِيلَ الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ

অর্থ: ‘এই তানজিল অবতীর্ণ হয়েছে চরম শক্তিশালী ও পরম দয়াময় আল্লাহর পক্ষ থেকে।’ সূরা ইয়াসিন, আয়াত ৫।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর