হটস্পট ও এপিসেন্টার নারায়ণগঞ্জ!

জেলাজুড়ে শয়ে শয়ে কারখানা, সেগুলোতে কাজ করেন লাখ লাখ মানুষ। এভাবে নারায়ণগঞ্জ হয়ে উঠেছে দেশের অন্যতম জনবহুল এলাকা। দেশে একদম শুরুর দিকে এ জেলাতেই করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এই মুহূর্তে আক্রান্ত এবং মৃতের দিক থেকে ঢাকার পরেই এর অবস্থান। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জকে হটস্পট (অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা) হিসেবে চিহ্নিত করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।

লকডাউনের কারণে জনমানবশূন্য নারায়ণগঞ্জ শহরের রাস্তা

শুধু তাই নয়, নারায়ণগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে করোনায় আক্রান্ত রোগী। গত কয়েকদিনে অন্তত ৭ জেলায় এই মহামারিতে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে যারা নারায়ণগঞ্জফেরত। এ কারণে হটস্পটের পাশাপাশি এই জেলাকে করোনার এপিসেন্টার (সংক্রমণ ছড়ানোর কেন্দ্র) বলছেন গবেষকরা। আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাও জেলাটিকে দেশে করোনা ছড়ানোর কেন্দ্র বলে অভিহিত করেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে করোনায় আক্রান্তদের ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো এবং স্থানীয়দের মধ্যে সংক্রমণ বন্ধ করতে গত বুধবার নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লকডাউন করা হয়। কিন্তু নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও লকডাউন পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। রাতের আঁধারে লুকিয়ে কিংবা বিভিন্নভাবে শত শত মানুষ ছড়িয়ে পড়ছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

গত কয়েকদিনে টাঙ্গাইল, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, চাঁদপুরে শনাক্ত হওয়া করোনায় আক্রান্ত রোগীরা নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া এই জেলা থেকে পটুয়াখালীর দুমকিতে যাওয়া এক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন গত বৃহস্পতিবার। আরো অনেক অঞ্চলে পালিয়ে যাওয়াদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা, যাদেরকে এখনও পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

দেশে প্রথমদিন (৮ মার্চ) যে ৩ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্তের কথা জানানো হয়েছিল তার মধ্যে দুজনেই ছিলেন নারায়ণগঞ্জের। সেই থেকে শুরু, গতকাল (১১ এপ্রিল) পর্যন্ত এই জেলাতেই আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩ জন। মারা গেছেন ৯ জন। শুধু তাই নয়, যে সিভিল সার্জন এই ভয়াবহ সংক্রমণের সময়ে জেলার করোনা পরিস্থিতির দেখভাল করবেন তিনিই বর্তমানে আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে আছেন।

বিশেষজ্ঞদের মত- এখনও সময় আছে, নারায়ণগঞ্জকে যদি সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করা না হয় তাহলে করোনার সংক্রমণের ক্ষেত্রে এই জেলা হয়ে উঠতে পারে ‘টাইম বোমা’ কিংবা ‘সুপার স্প্রেডারে’। প্রায় ২২ লাখ মানুষের আবাস এই জেলায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে অতি নগন্য সংখ্যক মানুষের। সুতরাং এমন অনেক সংক্রমিত থাকতে পারেন যারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন অসংক্রমিত মানুষের সঙ্গে। যাতে করে হয়তো ভেতরে ভেতরে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে অতি দ্রুত।