তুষার: মানুষ নয়, আমাদের মূল সমস্যা ব্যবস্থাপনায়

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি নিয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আব্দুর নূর তুষার। তিনি বলেন, অব্যবস্থাপনার কারণেই বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সরকারকে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।

আব্দুর নূর তুষার

আব্দুন নূর তুষার বলেন, সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু অনেকেই তা না মানছে না। লকডাউনের উপর চালিত একটি গবেষণা বলছে, ৭০ শতাংশ মানুষ যদি লকডাউন না মানে তাহলে এটা ঠিকমত কাজ করবে না। এখন আমরা সঠিক বলতে পারছি না ঠিক কি পরিমাণ মানুষ লকডাউন অমান্য করে বেড়াচ্ছ। সেইসঙ্গে হাসপাতালগুলোতেও অনিয়ম লক্ষ্য করা গেছে। কুয়েত মৈত্রি হাসপাতালে করোনাভবাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা ছাড়াই রোগীদের চিকিৎসা দেয়া শুরু হয়েছে। আমি শুনেছি সেখানে ওখানে খাবারের অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে এই ভাইরাসের সংকট মোকাবেলায় মূল সমস্যা তৈরি করছে অব্যবস্থাপনা। মানুষের কারণে সৃষ্ট সমস্যা থেকেও এই সমস্যা বেশি জট পাকিয়েছে। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাত ওয়েল ম্যানেজড না। গঠন প্রণালীও বিজ্ঞানসম্মত না। স্বাস্থ্য সেবা খাত হবে একটি বাহিনীর মতো। অথচ আমাদের এই খাত হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক। এই সিস্টেমে রাতারাতি কোনো পরিবর্তন আনা যায় না। আমাদের এখন একটি জরুরি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। একটি মহামারি সংক্রমণ অতিক্রম করছি আমরা। এসময় দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাত যেভাবে কাজ করার কথা সেভাবে করতে পারছে না। আগের মতোই ধীরগতিতে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত সরকার থেকে ভেন্টিলেটর আমদানি করার কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। কাল যদি খুব দরকার হয় তাহলে কিছু করার থাকবে না। কারণ আজকে সরকার আমদানির অর্ডার দিলে তা বাংলাদেশে পৌঁছাতে অন্তত দুই সপ্তাহ লাগবে। সরকারকে এ বিষয়ে আরো দুই সপ্তাহ আগে ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন ছিলো।

এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, করোনাভাইরাসের শনাক্তকরণ টেস্টের পরিমাণও এখন পর্যন্ত বাড়ানো হয়নি। এই ভাইরাসের সংক্রমণ দমিয়ে রাখার উপায় হচ্ছে বেশি বেশি টেস্ট করে চিহ্নিত রোগীকে আইসোলেশনে রাখা। একলক্ষ মানুষকে টেস্ট করে আমরা যদি দশ হাজার মানুষকে চিহ্নিত করে আলাদা করে রাখতে পারি তাহলে বাকি ৯০ হাজার মানুষ ঝুঁকি মুক্ত হয়ে যায়। এই জন্য আমাদের অনেক বেশি টেস্ট করার প্রয়োজন ছিল। ১৭-১৮ কোটি মানুষের দেশে খুব কম পরিমাণই টেস্ট করা হয়েছে। শহরের বাইরে কারো টেস্ট হয়েছে তা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে। টেস্ট বাড়ানোর জন্যে দরকার পর্যাপ্ত টেকনিশিয়ান। সরকার এখন এসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দেয়ার যাতে লোকবল বাড়ানো যায়। এই সিদ্ধান্তটি আরো অনেক আগে নেয়ার দরকার ছিল।

চিকিৎসক আক্রান্ত এবং চিকিৎসায় অবহেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাসপাতালে কোনো রোগী আসলে তা অবহেলা করা চিকিৎসা শাস্ত্রে নেই। আক্রান্ত হওয়ার ভয়েই চিকিৎসকরা নতুন রোগীদের এড়িয়ে চলছেন। তাছাড়া হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগী প্রবেশ করলে অন্যান্য রোগীদের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। সেই জন্যে সাধারণ হাসপাতালে করনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী যাতে প্রবেশ না করে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা জরুরি। সরকারকে শিগগিরই করোনা আক্রান্তদের জন্য আলাদা হাসপাতালের ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণ মানুষকেও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সব হাসপাতালে না নিয়ে বিশেষ হাসপাতালে নিয়ে যায়।