আপনি পড়ছেন

বৈশ্বিক মহামারি করোনার আঘাতে বিপর্যস্ত পৃথিবী। মানুষ ঘরবন্দি। হাড়হাভাতে মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। একমুঠো খাবারের জন্য এখানে ওখানে কতই না দৌড়ঝাঁপ করছে তারা। লজ্জা-শরম ভুলে ত্রানের লাইনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। বুকে বড় আশা, এক পোটলা ত্রাণ পেলে দু’ বেলা পেট ভরে খাওয়া যাবে। ঘরের ছোট্ট শিশুরা খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলবে।

zakat heroimage1910x1000 768x432

সেদিন দেখা হল কামাল ভাইয়ের সঙ্গে। ত্রানের পোটলা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। বড় মলিন চেহারা। জানতে চাইলাম- ভাই মনটা খারাপ কেন? কি হয়েছে আপনার? চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। কিছু বলার আগেই কেঁদে ফেললেন।

আবার জানতে চাইলাম, ভাই কি হয়েছে খুলে বলুন। তিনি বলতে চাইলেন না। তার মন খারাপ দেখে আমার মনটাও খারাপ হয়ে গেল। অনেক জোরাজুরি করার পর বিষণ্ণ কণ্ঠে বললেন, বাসায় রান্নার করার তেমন কিছু নেই। লজ্জা ভুলে পরিবারের জন্য এসেছি। কিছু পেলে সন্তানের মুখে হাসি ফুটবে সে আশায়। মাথা নিচু করে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। যারা ত্রান দিচ্ছে তারা আমাকে নানান প্রশ্ন করা করতে শুরু করল। কি করি। ছেলে মেয়ে কয়টা। আগে ত্রান নিয়েছি কিনা ইত্যাদি।

প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে একজন বলল, ত্রান দিচ্ছেন অমুক স্যার। সবাইকে অমুক স্যারের কথা বলতে হবে কিন্তু। আরো নানান কথা। ধমকাধমকিও করল আমাকে। আমি সব খুলে বললাম। খেতে না পারার কষ্ট, পড়তে না পারার কষ্ট সবই বলতে হল তাদের কাছে। অবশেষ ত্রাণের পোটলা হাতে পেলাম।

ত্রানের পোটলা হাতে ধরিয়ে বলল, মাথা উঁচু করেন। এদিকে তাকান। এই বলে পাঁচ-ছয় জন মিলে ছবি তুলল এবং ভিডিও করল। আমার ইচ্ছে ছিলো, আমার অভাবের কথা যেন কেউ না জানুক। এখন এ ছবি ফেসবুকে যাবে, ইউটিউবে যাবে, পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হবে, আমার আত্বীয়-স্বজন এমনকি ঘরের লোকও জেনে যাবে আমার অসহায়ত্বের কথা। তাই মনে মনে শপথ করেছি, দরকার হলে না খেয়ে মরব, কিন্তু কখনোই ত্রাণের লাইনে দাঁড়াবো না। বলেই আবার কেঁদে ফেললেন তিনি। তার অশ্রুভেজা চেহারাই বলে দিচ্ছে আমরা কতটা নিষ্ঠুর। কী জবাব দেব আল্লাহর কাছে।

এরকম কালামের মত হাজারো কালাম আজ ঘরবন্দি। দিনে একবেলা খেয়ে কোনমতে দিন কাটাচ্ছে। লজ্জায় সাহায্য চাইতে পারে না। তারা অসহায় নয়। পরিস্থিতির শিকার। আজ আমরা তাদের অসহায় পেয়ে বলির পাঠা বানিয়ে ফটোসেশান করি। নিজকে দানবীর বলে প্রচার করি। মনে রাখবেন, যে মানুষটি আপনার দুয়ারে এসেছে, সেও কারো পিতা বা ভাই। একজন নারীর স্বামী। তাকে সন্মান দিয়ে কথা বলুন। যে সম্পদ আপনি ত্রাণ দিচ্ছেন, সে সম্পদ আপনার নয়

আল্লাহতায়ালার। ব্যাংকে টাকা রাখলে সেই টাকা যেমন ব্যাংক মালিকের হযে যায় না, তেমনি আল্লাহর দেয়া সম্পদের নিরঙ্কুশও মালিকও কোনো মানুষ নয়। আপনি সে সম্পদের পাহাদার মাত্র।

তাই মনে রাখতে হবে, আল্লাহর সম্পদ আল্লাহর বান্দাদের দিচ্ছি। এতে প্রচারের কোনো প্রয়োজন নেই। আল্লাহ বলছেন, ‘তোমাদের সম্পদে নিঃস্ব ও অসহায়দের অধিকার রয়েছে।’ দানের মাধ্যমে আমরা তো কেবল তাদের অধিকারটুকু দিচ্ছি। অন্য কিচ্ছু নয়।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফাইজুল ইসলাম বলেন, দুনিয়াবি স্বার্থ সিদ্ধি ও মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর জন্য লোক দেখানো দান আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না। যতদূর সম্ভব প্রচার বিমুখ হয়ে পরিচিতজনদের দান করতে হবে। অপরিচিত মানুষকেও দান করতে হবে। সব কিছুই হবে গোপনে। ডান হাতে দান করব, যেন বাম হাতও টের না পায়। তবেই আল্লাহ তায়ালা খুশি হবেন।

হে আল্লাহ! লোক দেখানো দান করা থেকে আমাদের হেফাজত করুন।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর