আপনি পড়ছেন

এক মাস আগেও সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো। প্রতিটি মানুষ ব্যস্ততার সমুদ্রে ডুবে ছিলো। প্রযুক্তির কল্যাণে একেক মিনিটে কোটি টাকাও ইনকাম করা যেত। কর্পোরেট মানুষগুলো সময়কে মেপেছে টাকার পাল্লায়। সময়কে তারা টাকার বিপরীত শব্দ বানিয়ে নিয়েছে। যখন আখেরাতের কথা বলা হত, যখন বলা হতো বাবা-মা, আত্বীয়-প্রিয়জনদের খোঁজখবর নাও, তখন তারা বলত, এখন আমাদের সময় নেই।

diet in ramadan

অথচ এ মানুষগুলো যেভাবে টাকার পেছনে ছুটত, সেভাবে না ছুটলেও পারত। কিছুটা বিশ্রাম নিলে, প্রভুর স্মরণে কিছু সময় কাটিয়ে দিলে, আত্বীয়তার কোলাহলে কয়েকটা দিন মিশে গেলে এদের তেমন ক্ষতি হতো না। আফসোস! ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে তারা আমলে সালেহ বা সৎকাজ থেকে নিজেকে দূরে রেখেছে। 

আজ করোনার নামক মহামারি দিয়ে আল্লাহ তায়ালা সব ব্যস্ততাকে থামিয়ে দিয়েছেন। যারা মিনিটে মিনিটে উপার্জনের নেশায় মত্ত থাকত, আজ তারা ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন অবসর যাপন করছে। আমরা কেউই জানি না, এ পৃথিবী আবার কবে কর্মকোলাহলে ভরে উঠবে। কবে আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে।

এটাই আল্লাহ তায়ালার খেলা। এটাই আল্লাহর কারিশমা। তিনি হয়তো মানুষকে এটাই বোঝাতে চাচ্ছেন, আমার দেয়া সময় তোমরা আমার পথে খরচ না করে আমাকেই ব্যস্ততার অজুহাত দেখাও, ঠিক আছে তোমরা কত বেশি ব্যস্ত থাকতে পারো দেখা যাবে।

এই অবসরের মধ্যে আমাদের মাঝে রমজান আসছে। দুই একের মধ্যেই রমজানের বাঁকা চাঁদ উঁকি দেবে আকাশে। যে অবসর পেয়েছি, আশা করি অন্তত এবারের রমজানের পূর্ণ ফায়দা আমরা অর্জন করতে পারব। যেহেতু সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে, তাই নিশ্চিন্তে একটি মাস খোদার দরবারে পরে থেকে কান্নাকাটি করার অপূর্ব সুযোগ যেন কারো হাত ছাড়া না হয়।

সবচেয়ে ভালো হয় পুরো রমজানই যদি ইতিকাফের নিয়তে কাটানো যায়। এ অবসরে এটি আমাদের জন্য মোটেও কষ্টকর হবে না।

সবচেয়ে অবাক এবং দুঃখজনক কথা হলো, ব্যক্তিগতভাবে আমি বেশ কয়েকজনের কাছে রমজানের প্রস্তুতির কথা জানতে চেয়েছিলাম। তারা বললেন, পরিস্থিতি ভালো হলে জম্পেশ মার্কেটিং করব। অনেক কেনাকাট করব। একটা দারুণ ঈদ কাটাব। আমাদের মত হতভাগা জাতি সবসময় এমন প্রস্তুতিই নিয়ে আসছি রমজানের জন্য।

কিন্তু এবার যখন করোনা নামক গজবের চাদরে পুরো পৃথিবী ঢাকা, তাতেও আমাদের হুশ হলো না। এমন পরিস্থিতিতেও আমরা ইবাদত-বন্দেগিতে রমজান যাপন করব এমন পরিকল্পনা করতে পারলাম না। এরচেয়ে বড় আফসোসের কথা আর কী হতে পারে।

এবারের রমজানের অবসর সময়টুকর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে হবে। যেহেুত পুরো সময়টা বাসায় থাকা হবে তাই সময়েকে ভাগ করে নেয়া যেতে পারে। দিনের উল্লেখযোগ্য একটা সময় কোরআনের পেছনে ব্যয় করতে হবে।

আমাদের দেশে কোরআন বোঝার প্রবণতা কম। সাবই কোরআন খতম করতে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা কোরআন নাজিল করেছেন যেন বুঝে সে অনুযায়ী তা আমল করা হয়। তাই এবারের রমজানে আমরা একটা টার্গেট নিতে পারি যে- পুরো কোরআন একবার অর্থসহ পড়ে শেষ করব। আশা করা যায় এতে করে আমাদের জীবন আলোকিত হবে।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ব্যস্ততা আসার আগে অবসরকে গনিমত মনে করো। এই স্থবির অবস্থা শেষ হয়ে যাবে। পৃথিবী আবার তার চেনা চেহারায় ফিরে আসবে। এর আগে আল্লাহপাক আমাদের যে অবসরটুকুন দিয়েছেন, তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে।

অনলাইনে অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না। শুয়ে বসে সময় যাপন না করে পড়াশোনা-ইবাদত-বন্দেগীতে সময় যাপন করতে হবে। ঘরের কাজে নারীদের সাহযোগিতা করা যেতে পারে।

হে আল্লাহ! আমাদের আপনি একটি চমৎকার রমজান কাটানোর তাওফিক দান করুন। রমজানের অসিলায় আপনি আমাদের থেকে করোনা নামক মহামারি হটিয়ে দিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর