আপনি পড়ছেন

পবিত্র মাহে রমজানের এক মাসের রোজা আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের ওপর ফরজ করেছেন। রোজার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে করে তোমরা পরহেজগার মুত্তাকি হতে পারো।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩।

diet in ramadan

তাকওয়া খুবই তাৎপর্যপূণ একটি বিষয়। জীবনের প্রতি ক্ষণে প্রভুকে ভয় করে চলার নির্দেশ কোরআনে দেয়া হয়েছে।  আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা যারা ঈমান এনেছ, তারা তাকওয়ার জীবনযাপন করো।’ সূরা আহজাব, আয়াত ৭০।

অন্য আয়াতে আল্লাহ পাক আরও বলেন, ‘যারা ঈমান আনলো এবং তাকওয়া অর্জন করলো, তারা আল্লাহর বন্ধু; তাদের কোনো ভয় নেই, দুশ্চিন্তাও নেই।’ সূরা ইউনুস, আয়াত ৬২।

হজরত ইবরাহিম (আ.) দোয়া করেছিলেন এই বলে, ‘হে আমাদের পরওয়ারদেগার! তাদের মধ্য থেকেই একজন পয়গম্বর পাঠান, যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন, তাদের কিতাব ও হেকমত শেখাবেন এবং তাদের পবিত্র জীবনের প্রশিক্ষণ দেবেন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশিক্তমান ও গভীর হেকমতের অধিকারী।’ সূরা বাকারা, আয়াত, ১২৯।

জবাবে আল্লাহ পাক জানান, ‘আল্লাহ ঈমানদারের ওপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের থেকে থেকে নবী পাঠিয়েছেন। নবী তাদের জন্য আয়াতসমূহ পড়ে শোনান; তাদের পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদের কিতাব ও হেকমত শেখান।’ সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৬৪।

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পড়ে শোনান তাঁর আয়াতগুলো, তাদের পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হেকমত।’ সূরা জুআ, আয়াত ২।

এমনিভাবে অন্যান্য আয়াত থেকে জানা যায়, মানুষের আত্মশুদ্ধি করা নবীদের মিশন ছিলো। একজন মুমিনের প্রকৃত সফলতা আত্মশুদ্ধি অর্জনের ওপরই নির্ভর করে। আল্লাহ বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে তারাই সফল হলো, যারা আত্মশুদ্ধি অর্জন করলো।’ সূরা শামছ, আয়াত ৯।

পবিত্র রমজানের প্রত্যেকটি আমল রোজা, তারাবিহ, জিকির-আজকার, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত আত্মশুদ্ধি অর্জনে সহায়ক।

আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব এই হাদিসে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। হজরত নুমান ইবনে বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানবদেহে এমন একটি গোশতের টুকরার মতো জিনিস রয়েছে, যা পরিশুদ্ধ হলে তার পুরো শরীর সঠিকভাবে কাজ করে; আর তা যদি নষ্ট হয়ে যায় তার সমস্ত দেহই বিনষ্ট হয়; জেনে রাখো, তা হলো কলব বা আত্মা।’ সহিহ বুখারি, হাদিস, ৫০।

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, প্রত্যেক জিনিসের জাকাত আছে, আর শরীরের জাকাত হলো রোজা।’ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৭৪৫।

রাসুলে কারিম (সা.) বলেছেন, ‘অনেক রোজাদার আছে যাদের রোজা উপবাস ছাড়া আর কিছুই হয় না।’ অর্থাৎ যারা রোজা রেখেও মানুষের গিবত-শেকায়েত, মিথ্যাসহ অনেক রকম পাপাচারে নিমজ্জিত থাকে তাদের উপবাস ছাড়া কিছুই অর্জন হয় না। রোজার যে মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া তাও অর্জন হয় না।

তাই আসুন আমরা রোজার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের চেষ্টা করি। আমাদের রোজা, নামাজ বা অন্যান্য ইবাদত যেন লোক দেখানোর জন্য না হয়, বরং একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্যই হয় সেদিকে খেয়াল রাখি। আর রোজার মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জনের দিকে অগ্রসর হই।

অর্থাৎ আমরা কী কাজ করছি, কী চিন্তা করছি, কী উদ্দেশে করছি- সেগুলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হচ্ছে কি না সেটা চিন্তা করে দেখি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর