করোনায় সর্বনিম্ন সুস্থতার হার বাংলাদেশে

দেশে মরণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। বিপরীতে সুস্থ হওয়ার হার অনেকটাই কম। যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। গত ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এই হার মাত্র ২ দশমিক ২৬ শতাংশ।

বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন সুস্থতার হার বাংলাদেশে

বিশ্বব্যাপী ভাইরাসটিতে আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থতার হার ২৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ভাইরাসটি যে সকল দেশে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে তার মধ্যে সুস্থতার হারের দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে চীন। সেখানে এই হার ৯৩ দশমিক ৪ শতাংশ। তারা ইতোমধ্যে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করছে।

এ ছাড়া জার্মানিতে ৭০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, স্পেনে ৪২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ইতালিতে ৩২ দশমিক ৩১ শতাংশ, ফ্রান্সে ২৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, ভারতে ২২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১১ দশমিক ৭৩ শতাংশ ও সিঙ্গাপুরে সুস্থতার হার ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

বিষয়টি নিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বংলাদেশে রোগীদের ‍সুস্থতার হার কম হওয়ার মূল কারণ এর দীর্ঘ প্রক্রিয়া। অনেক সময় ফলাফল নেগেটিভ আসার পরও তাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সাধারণত টানা দুই সপ্তাহ করোনা টেস্ট নেগেটিভ আসলে তাকে সুস্থ হওয়ার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

পুরোপুরি সেরে উঠতে আরো অনেক সময় লাগে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে হালকা লক্ষণ দেখা যায়। মাঝেমধ্যে এক সপ্তাহের মধ্যেই এই লক্ষণগুলো থেকে সেরে উঠেন। আবার অনেকের দুই থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগে। আর মারাত্মক লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিদের পুরোপুরি সেরে উঠতে সর্বোচ্চ ছয় সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, করোনা থেকে সুস্থতার ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স, আগে থেকে বিদ্যমান স্বাস্থ্য সমস্যা, দীর্ঘমেয়াদি রোগ, ফলো-আপ পরীক্ষা এবং সঠিক যত্ন নেয়ার বিষয়গুলো জড়িত। এক্ষেত্রে তরুণদের মধ্যে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো তারা ১৪ দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যেতে পারেন।

আর যাদের একাধিক শারীরিক সমস্যা রয়েছে, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সুস্থ হতে বেশি সময় লাগতে পারে। অনেক রোগী আবার এক সপ্তাহের মধ্যেই ভালো অনুভব করতে পারেন। ভাইরাসটি থেকে সুস্থ হওয়া কেবল ভালো অনুভব করার ওপর নির্ভর নয়। প্রক্রিয়াটি অনেক জটিল। তবে বেশি সময় লাগলেও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ঠিকমতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই হবে, যোগ করেন এই বিশেষজ্ঞ।

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মরণঘাতী করোনাভাইরাসে আরো ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৫২ জন। এ ছাড়া একই সময়ে দেশে আরো ৪৯৭ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। ফলে শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৫ হাজার ৯১৩ জন।

এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরো ৯ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট ১৩১ জন সুস্থ হয়েছেন।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আর করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে ১৮ মাচ।