ধর্ম প্রতিমন্ত্রী: গাসিক মেয়র সরকারের আদেশ অমান্য করছেন

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (গাসিক) মেয়র জাহাঙ্গীর আলম আগামী শুক্রবার থেকে মুসল্লিদের স্বাভাবিক প্রবেশের জন্য মসজিদগুলো খুলে দেওয়ার কথা বলে সরকারের আদেশ অমান্য করেছেন বলে জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহম্মাদ আব্দুল্লাহ। মেয়রের ওই ঘোষণা কার্যকর হবে না বলেও জানান তিনি।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের আদেশ অমান্য করেছেন গাজীপুরের মেয়র৷ এমনকি তিনি আমাদের ফোন ধরছেন না৷ প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি৷

তিনি আরো বলেন, এ ধরনের ঘোষণা দেয়ার কোনো এখতিয়ার তার নেই। তার ঘোষণায় কিছু আসে যায় না৷

আজ বুধবার টেলিফোনে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘গাজীপুরের মেয়রের ঘোষণা সরকারি নির্দেশনার বিরুদ্ধে যায়৷ ওই ঘোষণার পর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু তিনি আমাদের ফোন রিসিভ করছেন না৷’

শেখ আব্দুল্লাহ আরো বলেন, ‘তবে গাজীপুরের প্রশাসন ও পুলিশকে আমরা বিষয়টি বলে দিয়েছি৷ তারাই এখন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। মসজিদ খুলে দিতে মেয়রের ঘোষণা কোনোভাবেই কার্যকর হবে না।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী জানান, গাজীপুরের মেয়রের এ ধরনের সিদ্ধান্তে সরকার ক্ষুব্ধ। সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে নতুন করে কিছু করার সুযোগ নেই। মেয়র এখন নিজেই আরেকটি ঘোষণা দিয়ে তার আগের ঘোষণা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

গাসিক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম

ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে গাসিক মেয়র বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন অনুসরণ করে তারা মসজিদে নামাজ পড়ার সুযোগ দেবেন। তবে এর পর আর কোনো কথা না বাড়িয়ে তিনি ফোন কেটে দেন এবং পরবর্তীতে বার বার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ডয়চে ভেলে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ফেসবুক ভিডিওতে গাজীপুরের মেয়র বলেন, যেসব এলাকায় কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েনি, আগামী শুক্রবার থেকে সেসব এলাকার সব মসজিদ মুসল্লিদের স্বাভাবিক প্রবেশের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

মেয়র বলেন, ‘গাজীপুরের ৮টি থানা এবং ৫৭ ওয়ার্ডের কোথাও উল্লেখযোগ্যভাবে করোনাভাইরাস ছড়ায়নি। তাছাড়া গাজীপুর জেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। চলছে কৃষিকাজও। সুতরাং ঘোষিত সামাজিক দূরত্ব মেনে মসজিদে নামাজের সুযোগ দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘মসজিদে ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ দেওয়া উচিত, কারণ এটা রোজার মাস। তাই যেসব এলাকায় করোনাভাইরাস ছড়ায়নি, সেখানকার মসজিদগুলোতে মুসল্লিরা নামাজ পড়তে পারবেন।’

কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের নির্বাহী আদেশের পরও কীভাবে এই ধরনের সিদ্ধান্ত দিলেন- গণমাধ্যমের এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সরকার এ ব্যাপারে যে আদেশ দিয়েছে, তার ব্যতিক্রম ঘটবে না। স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাই স্বাস্থ্যবিধির যাবতীয় নিয়ম যেমন- স্যাভলন দিয়ে পাঁচবার মসজিদ জীবাণুমুক্ত করা এবং সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে মসজিদে যত জন নামাজ আদায় করতে পারবে, তত জন মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করলে কারো আপত্তি থাকার কথা না। এতে সরকারি নির্দেশের ব্যতিক্রম ঘটার কথাও না।’

তিনি জানান, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যে যে এলাকার মানুষ সেই এলাকাতেই নামাজ পড়বেন, অন্য কোনো এলাকায় যাবেন না।

ভিডিও বার্তায় মেয়র আরো বলেন, যেসব এলাকায় করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েনি, সেসব এলাকার মসজিদে মুসল্লিরা যাতে নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস থেকে গাজীপুরসহ সারাদেশ এবং বিশ্ববাসীর মুক্তি কামনা করেন জাহাঙ্গীর আলম।