আপনি পড়ছেন

হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেছেন, রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দ আছে। একটি দুনিয়ায়। অন্যটি আখেরাতে। দুনিয়ার আনন্দ হলো ইফতারের আনন্দ। আখেরাতের আনন্দ হলো দিদারে ইলাহি তথা প্রেমময় প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের আনন্দ। বুখারি শরিফ। 

know the reasons for breaking fast

সত্যি ইফতারের আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। রাসুল (সা.) ইফতারের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, ইফতার যেমন রোজাদারের জন্য আনন্দময় ও সওয়াবে ভরপুর নেয়ামত। একইভাবে ইফতারের জন্য অপেক্ষার সময়টুকুও রোজাদারের আমলনামায় অফুরন্ত সওয়াব লেখেন ফেরেশতারা।

শুধু তাই নয়, নবিজি (সা.) বলেছেন, ইফতারের সময় এতই মূল্যবান, এ সময় বান্দা আল্লাহর কাছে যা চাইবে, তাই কবুল করা হবে। মেশকাত শরিফ।

ইফতার যথাসম্ভব দ্রুত করা উচিত। হাদিসে বড় কল্যাণের কারণ বলা হয়েছে এ কাজকে। তিরিমিজি ও আবু দাউদ শরিফেরে হাদিসে এসেছে, নবিজি (সা.) বলেছেন, তোমরা ততদিন পর্যন্ত কল্যাণের সঙ্গে থাকবে যতদিন সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করবে।

আরেকটি হাদিসে নবিজি বলেছেন, আমি ওই উম্মতকে ভালোবাসি, যে দ্রুত ইফতার করে। তারপর নবিজি বলেন, পূর্ববর্তী সব নবিজির সুন্নাত ছিলো, দ্রুত ইফতার করা। আবু দাউদ। 

সারাদিন ক্ষুধার্ত থেকে ইফতারের সময় খাবারের ওপর হামলে পড়তে দেখা যায় অনেককে। এটিও সুন্নাতবিরোধী কাজ। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও ইফতারে অতিভোজন সাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর বলে প্রমাণ হয়েছে।

নবিজির ইফতার ছিলো খুবই সাদামাটা। আসলে রসুল (সা.) বিজ্ঞানময় জীবনযাপন করতেন। তিনি খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন, দীর্ঘ সময় পাকস্থলী খালি থাকার পর পরই খুব বেশি খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়। তাছাড়া রুহকে তাজা করার এই মাসে দেহকে বেশি খাবার দেয়াও আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে বড় বাধা। তাই তিনি পুরো রমজানজুড়েই বেশি বেশি ইবাদত করতেন, কিন্তু খুব কম খাবার খেতেন।

হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, নবিজি ইফতার করতেন তাজা খেজুর দিয়ে। তাজা খেজুর না থাকলে শুকনো খেজুর দিয়ে। তাও না পেলে কয়েক ঢোক দুধ পান করতেন। তার পরই মাগরিবের নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। আমরা যারা রমজানকে আত্মার পরিশুদ্ধির মাস হিসেবে নিয়েছি, আমাদেরকেও নবিজির মতো পরিমিত খাবার গ্রহণ করতে হবে।

অন্যকে ইফতার করানোর সওয়াব সম্পর্কে প্রিয় নবি বলেন, কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করালে রোজাদারের সমান সওয়াবও তাকে দেয়া হবে। এ জন্য কারো সওয়াব থেকে কমানো হবে না। এমন লোভনীয় সওয়বারে কথা শুনে সাহাবিরা খুবই খুশি হলেন।

একজন জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ রসুল (সা.) আমাদের মধ্যে এমন অনেকে দরিদ্র সাহাবি আছে, যারা অন্যকে ইফতার করানোর সামর্থ্য রাখে না। নবিজি বললেন, তুমি চাইলে তোমার ভাইকে এক ঢোক পানি কিংবা একটি খেজুর দিয়ে ইফতার করিয়েও সওয়াব অর্জন করতে পারো।

এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে আমরা ঘরবন্দি জীবনযাপন করছি। বহু মানুষের ঘরে এখন ইফতার করার মতো নূন্যতম খাবারটুকুও নেই। এ অবস্থায় আমাদের সাধ্যমতো পাড়া-প্রতিবেশী আত্বীয়দের খোঁজখবর নিতে হবে।

যারা কাছাকাছি থাকে যেমন- পাশের বাসায় বা পাশের বাড়ির প্রতিবেশী- তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া যেতে পারে। আর যারা একটু দূরে আছে, তাদের কাছে মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পৌঁছে দিতে পারেন। 

ইফতারের আনন্দে সবাই যেন শরিক হতে পারে সে চেষ্টা করা আমাদের ইমানি দায়িত্ব।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর