আপনি পড়ছেন

রোজা বা সিয়াম হলো ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। রমজান মাস বড়ই বরকতময় ও পবিত্র মাস। আরবি সাওম অর্থ বিরত থাকা। শরিয়তের পরিভাষায়, সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া এবং সব ধরনের যৌনাচার থেকে বিরত থাকাকে সিয়াম বলে। 

ramadan for children

এই ভোগহীন অনাড়ম্বর জীবনের ট্রেনিং যদিও এক মাসের, কিন্তু এর বাস্তবায়ন পুরো জীবনে ধরে রাখতে হবে। সারা বছরই নিজেকে খোদার অপছন্দনীয় কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে। 

দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা শুধু সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকাকেই সিয়াম মনে করি। ফলে সিয়াম রেখেও আমরা হাজারো অপরাধে নিজেদের ডুবিয়ে রাখি। আর সিয়াম চলে গেলে তো কথাই নেই, পাপের উৎসবের প্রতিযোগিতা লেগে যায় আমাদের সমাজে। এর কারণ হলো, কোরআনে বলা সিয়ামের মানে আমরা সঠিকভাবে বুঝতে পারিনি। এ জন্য অনেকাংশে দায়ী আমাদের মুসলিম পরিবারগুলো।

ছোটবেলা থেকে আমরা যখন রোজা রাখার অভ্যাস করেছি, তখন আমাদের শুধু খাওয়া থেকে বিরত থাকার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এখনো যেসব বাবা-মা ছোট্ট সোনামনিদের রোজার অভ্যাস করাচ্ছেন, শুধু না খেয়ে থাকার প্রতিই তারা জোর দিচ্ছেন। কোনো অভিভাক কি তার প্রিয় সন্তানকে এভাবে বলছেন যে, সোনামণি! তুমি যে রোজা রাখলে, তুমি কি মিথ্যা বলা ছেড়ে দিয়েছো? তুমি কি কাউকে কষ্ট দেয়া বাদ দিয়েছো? কাজে ও পড়ায় ফাঁকি দেয়ার অভ্যাস ছেড়েছো? 

তুমি যদি রোজা রেখে মিথ্যা বলো, পরের দোষচর্চা মানে গিবত করো, কাজে ফাঁকি দাও, অন্যকে কষ্ট দাও, তাহলে যতই না খেয়ে থাকো তোমার কিন্তু সিয়াম বা রোজা হবে না।

হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) স্পষ্ট বলেছেন, বহু রোজাদার রোজা রাখে কিন্তু কোনো লাভ হয় না। শুধু শুধু ক্ষুধার্ত থাকে। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, রোজা রেখেও যে অন্যায়, দুর্নীতি ও মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকল না, তার রোজায় আল্লাহ খুশি না হয়ে রাগ হন।

আরেক হাদিসে এ ধরনের রূহহীন রোজাকে কুকুরে রোজা বলা হয়েছে। কুকুর যেমন খাবার না পেলে না খেয়ে থাকে, তেমনি এ সায়েমরাও নির্দিষ্ট সময় নিজেদের অভুক্ত রাখে মাত্র। না খেয়ে থাকার কারণে কুকুরে যেমন কোনো লাভ হয় না অর্থাৎ কুকুরে ভেতরের লোভ-লালসা যেমন কমে না, এ সায়েমদেরও কোনো আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উন্নতি হয় না। লোভ-মিথ্যার কানাকড়িও তারা নফস থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারে না।

অভিভাবকরদে বলছি, আপনিও কোরআনে নির্দেশ দেওয়া সিয়াম পালন করুন। সব ধরনের অন্যায় থেকে বিরত থাকুন। নিজের সন্তানকেও সত্যিকারের সিয়ামে অভ্যস্ত করুন। এতে করে আপনার সন্তানের যেমন লাভ হবে। আপনারও দ্বিগুণ লাভ হবে। আল্লাহ আমাদের সাওমের গুরুত্ব বোঝার তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক: শিক্ষার্থী, সঙ্গীত বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর