আপনি পড়ছেন

করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের সব ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাদরাসও বন্ধ হয়ে গেছে। অল্প মুসল্লি নিয়ে মসজিদে জামাত জারি রেখেছেন সম্মানিত ইমাম-মুয়াজ্জিন-খাদেমরা। মাদ্রাসা শিক্ষক এবং ইমাম মুয়াজ্জিনরা খুবই অল্প বেতন পান। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে তাদের। কিন্তু তাদের নিয়ে ভাবার মানুষ এ দেশে খুব কমই আছে। 

azan

করোনার কারণে গত দুই মাস যাতব বেতন-ভাতা পাননি এমন ইমাম-মুয়াজ্জিন-মাদরাসা শিক্ষকের সংখ্যা নেহাত কম নয়।  

দেশের নানা প্রান্তের ইমাম-মুয়াজ্জিন-শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বড্ড দুর্দিন যাচ্ছে তাদের। বহু ইমামের ঘরে খাবার নেই, পকেটে টাকা নেই, লজ্জায় কারো কাছে বলার সুযোগও নেই। একজন ইমাম জানালেন, বেতনই পাই আট-পাঁচ হাজার টাকা। টিউশনি করে আরো হাজার তিনেক মেলে।

এ টাকায় এ বাজারে সংসার চালানো মানে রীতিমত জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলা। তবুও কোনো রকম চালিয়ে নিতাম। গেল দুই মাস বেতনই পাইনি। টিউশনিও বন্ধ। ধারও পাচ্ছি না। এখন না খেয়ে মরা ছাড়া কোনো পথ দেখি না।

আমার খুব কাছের বন্ধু আবদুল কুদ্দুস। মসজিদের ইমাম। জানতে চাইলাম, সংসার চলে কীভাবে? বন্ধু প্রায় কেঁদেই ফেললেন। ধরা গলায় জানালেন, তার এলাকা লকডাউন। আশপাশে আপনজন কেউ নেই। ইমাম সাহেবের জন্য নির্ধারিত বাসা থেকে এখন আর খাবার আসছে না। হোটেলও খোলা নেই যে দুটো ভাত খাবো। রুটি-কলা খেয়ে কয়দিন বাঁচা যায়। বাসায় কিন্তু এসবের কিছুই বলিনি।

আম্মা জানলে কষ্ট পাবেন। স্ত্রী কান্নাকাটি করবে। সন্তানদের কথা ভেবে পেটে পাথর বেঁধে পড়ে আছি। যদি বেতনটা পাই, তাহলে অন্তত ঈদের হাসি সন্তানরা হাসতে পারবে। কিন্তু বেতন হবে কি না তারই তো ঠিক নেই।

হায়! ইমামদের এত কষ্টের দিনে কয়জন মুসল্লি ইমামের খোঁজ নিয়েছে। সমাজের বিত্তবানরা কি পারে না ইমামের কষ্টের জীবনে হাসি ফোটাতে। এই ইমামই তো জীবনবাজি রেখে মসজিদ আঁকড়ে পড়ে আছেন। করোনার যুদ্ধে যারা অকুতভয় সৈনিক তাদের মধ্যে ইমাম-মুয়াজ্জিনরাও পড়েন।

ইসলামি চিন্তাবিদরা মনে করেন, মসজিদে আজান হয় বলেই এখনো এ দেশে ইউরোপ-আমেরিকার মতো মৃত্যুর ঢেউ আসেনি। হে মুসল্লিরা! ইমামের জন্য যদি মন না কাঁদে, এই দুঃসময়ে যদি ইমামদের খোঁজখবর কেউ না নেন, তাহলে নেবেন কখন! 

আমাদের ইমামরা শুধু মসজিদের ইমামই নন, সমাজ পরিবর্তনেও তাদের ভূমিকা কোনো নেতার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। মাদক, সন্ত্রাস, উগ্রতা, গুজব প্রতিরোধে একেকটি মিম্বর একেকটি মিডিয়ার ভূমিকা পালন করে আসছে। শুধু কি তাই? এমন কঠিন সময়ে সন্তান যখন বাবাকে ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, স্ত্রী যখন স্বামীকে রেখে ভেগে যাচ্ছে। এমন সময় মসজিদের ইমামরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনায় মৃত ব্যক্তির জানাজা, দাফন-কাফনের আয়োজন করছেন।

সে আলেমরা আজ অনাহারে-অর্ধাহারে মরছেন, তাদের খোঁজ কেউ নেয় না। এমনকি মসজিদভিত্তির শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের শিক্ষকরাও বেতন পাচ্ছেন না কয়েক মাস ধরে।

করোনার সময় জীবন ঝুঁকি নিয়ে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন সে চিকিৎসকদের বিশেষ মূল্যায়নের কথা প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক প্রণোদনার কথাও বলেছেন, কিন্তু সম্মানিত ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ব্যাপারে তেমন কোনো ঘোষণা এখনো শুনতে পাইনি।

আজ বঙ্গবন্ধুর কথা খুব মনে পড়ছে। তিনি সব সময় আলেমদের পাশে ছিলেন। আমরা আশা করি, বঙ্গবন্ধুর কন্যাও অসহায় আলেমদের কথা ভেবে তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করবেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর