সৌদিতে ‘কথিত হিজরত’ চেষ্টা, আটক ১৭

ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমান নামে এক ব্যক্তি সৌদি আরবে গিয়ে নিজেকে ইমাম মাহদির সৈনিক হিসেবে দাবি করে মুসলিমদের জিহাদ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইমাম মাহদির সঙ্গে কথিত সাক্ষাতের আশায় তাবলিগ জামাতের নাম করে অবৈধ পথে সৌদিতে যাওয়ার সময় আটক হয়েছেন ১৭ জন। গতকাল সোমবার রাতে তাদের আটক করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

আটক ১৭ জন

আজ মঙ্গলবার তথ্যটি নিশ্চিত করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ। আজ আটককৃতদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। সেই প্রেক্ষিতে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনছারী।

এ বিষয়ে অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া সিটিটিসি ইউনিটের এডিসি তহিদুল ইসলাম বলেন, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের বিপরীত পাশে পাবলিক হেলথ কার্যালয়ের সামনে থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৯টি মোবাইল ফোন, ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ও ৯২২ আমেরিকান ডলার জব্দ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, নিজেকে কথিত ইমাম মাহদির সৈনিক হিসেবে পরিচয় দেয়া ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমান সৌদির গাজওয়াতুল হিন্দ নামক স্থানে মুসলিমদের পক্ষে জিহাদ করার আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন অডিও-ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করেন। সেগুলো দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইমাম মাহদির সৈনিক হিসেবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে সৌদি যাওয়ার চেষ্টা করেন এই ১৭ জন।

আটককৃতরা জানান, চলতি বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে তারা মোস্তাক বিন আরমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে সৌদি আরবে হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন। তাদের তখন বলা হয়েছিল, আগামী চল্লিশ দিন সূর্য উঠবে না, আকাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাবে, সব কাফের মারা যাবে, ইমানদারদের শুধু হালকা কাঁশি হবে। এই সময়ে আকাশ থেকে এক ধরনের গজব নেমে আসবে। যার কারণে সীমান্তে কোনো পাহারা থাকবে না।

তাই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাবলিগ জামাতের নাম করে সাতক্ষীরা-বেনাপোল সীমান্ত হয়ে ভারত-কাশ্মির সীমান্ত দিয়ে সৌদি পৌঁছাতে চেয়েছিলেন তারা। তারই অংশ হিসেবে গত ১৮ মার্চ তারা প্রথমে সাতক্ষীরা ও পরে যশোর সীমান্তের কাছে বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করেন। কিন্তু পরবর্তীতে সীমান্ত দিয়ে পার হতে না পেরে ঢাকা হয়ে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সে মোতাবেক বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় এসে অবস্থান নেন।

এর আগে গত জানুয়ারি মাসে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্র ওমরা পালনের উদ্দেশে সৌদি গমন করে আর ফিরে আসেননি। জানা যায়, তারা সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের প্ররোচনায় সেখানে গিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে সাদ, কাউসার, শরীফ, তোফাজ্জল, গিয়াসউদ্দিন, আলী আজম এবং রাশেদ নামে আরো সাতজন একই উদ্দেশ্যে সৈাদি আরব হিজরত করেছেন বলে জানা গেছে।

আটককৃতরা হলেন- হায়দার আলী (৪৪), ওবায়দুল ইসলাম ওরফে সুমন (৩০), মাহমুদ হাসান ওরফে শরীফ (১৮), মাহমুদুল হাসান ওরফে মাসুম, জামিরুল ইসলাম (২৪), শাহজালাল (৩৪), আক্তারুজ্জামান (৩০), বিল্লাল হোসেন (৩৮), শেখ আরাফাত ওরফে জনি (৪৮), ইমরুল হাসান ওরফে ইমন (২৫), সাইফুল ইসলাম (২৫), মোজাম্মেল হক (৩৩), মাহমুদুল হাসান ওরফে সাব্বির (২৩), আবিদ উল মাহমুদ ওরফে আবিদ (২২), সোহাইল সরদার (৩৩), মাজেদুল ইসলাম ওরফে মুকুল (২৮) ও সোহাগ হাসান (২০)।