প্রণোদনা পেতে ব্যাংকে ‘কর্মকর্তাদের ভিড়’
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অফিস-আদালতও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু জরুরি প্রয়োজন বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এ নিয়ে ব্যাংকাররা মনঃক্ষুণ্ন হন। সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সমালোচনা করতে থাকেন। যদিও তখন ব্যাংকে লেনদেনের সময় ছিল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত। পরে অবশ্য ২টা পর্যন্ত করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক
কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে গত ১২ এপ্রিলের পর। ওই দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়। এতে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতিতে কেউ ১০ কার্যদিবস অফিস করলেই তাকে প্রণোদনা বাবদ অতিরিক্ত এক মাসের বেতন দেওয়া হবে।
এর পর ১৫ এপ্রিল অপর এক সার্কুলারে বলা হয়, অফিস করার কারণে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা স্বাস্থ্যবীমার সুযোগ পাবেন। আর কেউ মারা গেলে ক্ষতিপূরণ পাবেন ৫ গুণ।
পর পর দুটি সার্কুলারের কারণে পাল্টে যায় ব্যাংকের দৃশ্যপট। প্রতিবাদ ও সমালোচনা তো দূরের কথা। ব্যাংকে উপস্থিতির হার বেড়ে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। এমনকি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা শাখার নির্দেশনা না মেনেই অনেকে অফিসে আসতে থাকেন। আর এর মধ্যে একটা বড় অংশ রয়েছেন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা। পরিস্থিতি এমন যে, ব্যাংকের পক্ষ থেকে উপস্থিতি থামাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায় সামাজিক দূরত্ব মেনে রোস্টারিংয়ের মাধ্যমে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রণোদনা ঘোষণার পর থেকে ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে অনেক কর্মকর্তা-কমচারী, যাদের মধ্যে অনেক নির্বাহী পর্যায়ের কর্মকর্তাও, আসছেন।
অগ্রণী ব্যাংক
আদেশে বলা হয়, এর ফলে ব্যাংকে সামাজিক দূরত্ব বজায রাখায় সম্ভব হয়নি। কর্মকর্তাদের এমন আচরণে অসন্তুষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। সুতরাং ৮ এপ্রিলের আগে রোস্টারিং মেনে যারা অফিস করেছেন কেবল তারাই প্রণোদনা পাবেন।
এ ছাড়া শাখা প্রধানের পক্ষ থেকে দেওয়া লিখিত নির্দেশনা মেনে যারা অফিস করেছেন তারাও প্রণোদনা পাবেন। কিন্তু নির্দেশনার বাইরে নিজে থেকে অফিসে আসলে কেউ প্রণোদনার যোগ্য হবেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু অগ্রণী নয়, প্রণোদনা ঘোষণার পর থেকে অন্যান্য ব্যাংকের শাখাগুলোতেও একই ধরনের চিত্র লক্ষ করা গেছে। বিশেষ করে, ডিজিএম, এজিএম লেভেলের কর্মকর্তারা প্রায় সবাই অফিস করছেন। আবার এমন ঘটনাও ঘটছে যে, সংশ্লিষ্ট শাখায় থাকা হাজিরা খাতায় অনেকে একদিন এসেই বাকি দিনের স্বাক্ষর করে রেখেছেন।
জানা গেছে, এখন ব্যাংকে দেখানো সেই উপস্থিতি হিসেবে প্রণোদনার অর্থ চেয়ে প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছে শাখাগুলো।
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস উল ইসলাম জানান, সীমিত আকারে ব্যাংক চালানোর জন্য একটি নীতিমালা রয়েছে। এই নীতিমালা মেনে যারা অফিস করেছেন শুধু তারাই প্রণোদনার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। বাকিরা এর আওতায় পড়বেন না। এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করেই প্রণোদনা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, শাখা পর্যায় থেকে কর্মকর্তাদের প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব যুক্তিযুক্ত না হওয়ায় গ্রহণ করেনি ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষ।
ব্যাংকটির এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, প্রত্যেক শাখায় একজন ম্যানেজারসহ নয় জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক শাখা অতিরিক্ত লোকবল নিয়ে কাজ করার কথা বলে (২৯ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল সময়ে) বিশেষ প্রণোদনা দাবি করেছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয় বলেও সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরে বলা হয়, বাস্তবতার নিরিখে আবারো প্রস্তাব পাঠাতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া কোনো স্টাফের জন্য প্রণোদনার প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে না। কোনো কারণে অতিরিক্ত জনবল প্রয়োজন হলে সেটা প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি নিয়েই করতে হবে।
তবে এ ব্যাপারে কিছুটা ভিন্ন মত পোষণ করেছেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি সৈয়দ হাবীব হাসনাত। তিনি বলছেন, নতুন এই মহামারি সবার পরিচিত নয়। প্রথমে তাই সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে অনেকেই আবার অফিস করা শুরু করেছেন। তার মানে এই নয় যে, তারা সবাই প্রণোদনার জন্য অফিস করছেন।
তবে সবকিছু যাচাইবাছাই করে তার পরই প্রণোদনা দেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছে না ব্যাংকারদের সংগঠন বিএমবিএ। সংগঠনটির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আসলে এটি নৈতিকতার বিষয়।
তারাও স্বীকার করেছেন যে, অনেকেই প্রয়োজন ছাড়া ব্যাংকে যাচ্ছেন। কর্মকর্তাদের এ ধরনের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয় বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.