আপনি পড়ছেন

করোনা বা যেকোনো বিমার থেকে মুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও ধর্ম কিংবা স্রষ্টাকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়াটা কতটুকু যৌক্তিক? বিষয়টি ভেবে দেখাটা বোধ করি খুবই যুক্তিসঙ্গত। পৃথিবী পরিচালনায় আল কোরআন আল্লাহর দেয়া নির্ভুল ও চিরস্থায়ী গাইড লাইন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে- ‘আমি এ গ্রন্থে মানুষের জন্য বর্ণনা করার কোনো কিছুই বাকি রাখিনি।’ সূরা আল আনয়াম, আয়াত ৩৮।

islam 3

অন্যদিকে বিজ্ঞান তো আল্লাহর সৃষ্টি মানুষেরই আবিষ্কার। তাই বিজ্ঞানও আল্লাহর সৃষ্টির অংশ। আল্লাহর একত্ববাদ ও তাঁর সৃষ্টির রহস্য উদঘাটনে পবিত্র কোরআনে বিজ্ঞান বিষয়ক অন্তত সাত শতাধিক আয়াত রয়েছে। বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান, পৃ. ১১।

উদাহরণস্বরূপ, সপ্ত আকাশ ভেদ করে স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় মুহাম্মদ (সা.) কে আরশে নিয়ে যাওয়া মহাকাশ গবেষণায় বিজ্ঞানীদের জন্য এক যুগান্তকারী নিদর্শন। পবিত্র কেরআন যে নির্ভুল ও বিজ্ঞানসম্মত- সে সম্পর্কে ড. মরিস বুকাইলি বলেন, ‘কুরআনে এমন একটি বক্তব্যও নেই, যে বক্তব্যকে আধুনিক বিজ্ঞানের বিচারে খণ্ডন করা যেতে পারে না।’ বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান, আখতার উল আলম অনূদিত, পৃ. ১২।

পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা অনুসরণ করে মুসলিম সূর্যসন্তানেরা সেই নবম-দশম শতাব্দী থেকে অষ্ট-ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত বিজ্ঞান জগতে রাজত্বের আসন অলংকৃত করে গেছেন। বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখা মুসলিম মনীষীদের হাতের ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ হয়েছে। ইবনে সীনা, আলরাজী, আবুল কাসেম জাহারাভী, ইবনুল হাইছাম, জারকালী, জাবির বিন হাইয়ান, মূসা আল খারেজমী, ইবনে নাফিসদের কালজয়ী গ্রন্থগুলো শত শত বছর ধরে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মূল পাঠ্য ছিল। বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান, পৃ. ১৩।

উইলিয়াম ওসলার তার ‘ইভোলোশন অব মডার্ন সাইন্স’ গ্রন্থে ইবনে সীনার ‘আল কানুন ফিততিব’ নামক বিখ্যাত গ্রন্থটিকে চিকিৎসাশাস্ত্রের বাইবেল বলে উল্লেখ করেছেন।

মানব সেবা যদি শ্রেষ্ঠ কর্ম হয়ে থাকে, যেমনটি বলেছেন মুহাম্মদ (স.)। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল, কোন ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বলেন, সে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় যে মানুষের সবচেয়ে বেশি উপকারে আসে।’ তাবারানি।

তাহলে মানবকল্যাণে বিজ্ঞান চর্চা তো আরো বড় শ্রেষ্ঠ কর্ম। কারণ, বিজ্ঞানের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্নভাবে মানবসেবার মহৎ কার্য সম্পন্ন হয়ে থাকে।

রাসুল (স.) বলেছেন, ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ। বিজ্ঞানকে কিন্তু আরবিতে ‘ইলম’ বলা হয়। তাই ‘ইলম’ শব্দের মধ্যে বিজ্ঞানও শামিল রয়েছে। এই মহান সত্য উপলব্ধি করেই মুসলিম মনীষীরা গবেষণা করে বিজ্ঞানের রাজ্যে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।

মানবদেহ কিংবা মানবদেহে স্বয়ংক্রিয়ভাবে থাকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিজ্ঞানের সৃষ্টি নয়। মহান আল্লাহর সৃষ্টি। আধুনিক যুগে পৃথিবীকে মুহূর্তে ধ্বংস করে দেয়ার মতো অস্ত্র যে বিজ্ঞান তৈরি করতে পেরেছে, সে বিজ্ঞান মানব সন্তান দূরে থাক, মানবদেহের কোনো একটি অঙ্গ হুবহু আল্লাহর দেয়া অঙ্গের মতো সৃষ্টি করতে কিংবা মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার মতো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারেনি। অন্যদিকে মানুষ অসুস্থ হলে গবেষণার মাধ্যমে ওষুধ আবিষ্কার করে চিকিৎসা নেয়ার কথাও ইসলাম শিখিয়েছে।

রাসুল (স.) এরশাদ করেন, হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো কেননা আল্লাহ তায়ালা এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার প্রতিষেধকও তিনি সৃষ্টি করেননি; শুধু বার্ধক্যরোগ ব্যতীত। আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ৩৮৫৫।

সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) হৃদরোগে আক্রান্ত হলে রাসুলুল্লাহ (স.) তাকে তখনকার প্রসিদ্ধ ডাক্তার হারেস ইবনে কালদাহর নিকট যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ৩৮৭৫।

তাই স্রষ্টা ও তাঁর উপাসনার অনুষঙ্গগুলো বিজ্ঞানের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া একেবারেই বোকামি। সুতরাং যে কোনো বিমারে স্রষ্টার অনুগ্রহের প্রয়োজনীয়তা এক মহাসত্য। তাঁর বিভিন্ন ধরনের অনুগ্রহের মধ্যে এটাও একটি মহান অনুগ্রহ যে, মানুষের যেকোনো মুসিবতে উপযুক্ত জিনিসটি আবিষ্কার করতে বিজ্ঞানের সক্ষম হওয়া। বর্তমান পৃথিবীর এ মহামুসিবত ‘কোভিড-১৯’ এর প্রতিষেধকও সৃষ্টি কর্তার রহমতে বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে সক্ষম হবে ইনশাল্লাহ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর