আপনি পড়ছেন

শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। একটি জাতির উন্নতি-অগ্রগতি নির্ভর করে সে জাতির শিশুদের মানসিক-বিকাশ এবং গঠনের ওপর। তাই বুদ্ধিমানরা শিশু মানসকে টার্গেট করে পরিকল্পনা সাজায়। আর বোকারা বুড়োদের পেছনে দৌড়ায়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবী তথা উন্নত চিন্তার অধিকারী ছিলেন আখেরি পয়গম্বর হজরত মুহাম্মাদ (সা.)। তিনি গোটা বিশ্ব সংস্কারের বিশাল দায়িত্ব পালন করতে গিয়েও শিশুদের বিষয় ভোলেননি।

children

সব সময় শিশুদের তিনি প্রাধান্য দিতেন। মেশকাত শরিফের হাদিসে এসেছে, একজন গ্রাম্য সাহাবি এসেছেন রাসুল (সা.) এর সঙ্গে দেখা করতে। এসে দেখেন রাসুল (সা.) একটি শিশুকে এমনভাবে আদর করছেন যেন আশ্চর্য হয়ে দেখার মতো ঘটনা। সাহাবি অবাক হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি শিশুদের এত মায়া করেন! আমার তো চারটি সন্তান আছে। আমি ওদেরকে কোনো দিন চুমুও খাইনি।

কথাটি রাসুল (সা.) এর পছন্দ হলো না। তিনি বললেন, দয়াময় আল্লাহ যদি তোমার হৃদয় থেকে ভালোবাসা কেড়ে নেন তাহলে আমার কী করার আছে।

শিশু মানসে ধর্মীয় শিক্ষার প্রভাব পড়লে ওই শিশু বড় হয়ে কখনো বিপথে চলে যাবে না। এ জন্য রাসুল (সা.) বাবা-মাকে আদেশ করেছেন, সাত বছর থেকে শিশুকে ধার্মিকতার ছাঁচে গড়ে তোলার চেষ্ট করো। নামাজের আদেশ দাও। ১০ বছর থেকে কঠোরতা দেখাও।

বিভিন্ন হাদিসে দেখা যায়, মসজিদে নববিতে জামাত হচ্ছে, পেছন থেকে শিশুরা এসে হট্টগোল করছে। নবীজি ইমামতি করছেন, ছোট্ট হাসান-হোসাইন নবীজির কাঁধে ওঠে বসে আছে। এ দৃশ্যগুলো এটাই প্রমাণ করে- নবির যুগের শিশুদের সম্পর্ক ছিলো মসজিদের সঙ্গে। বাবা-মায়েরা আগ্রহের সঙ্গে শিশুদের মসজিদে নিয়ে আসতেন।

বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম সংখ্যারিষ্ঠ দেশের অভিভাবকদের দিকে তাকালে হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। আজকালকার বাবা-মায়েরা শিশুদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার নাম করে রোজার অভ্যাস করাতে চান না। পরীক্ষা এলে রোজা রাখতে দেন না। ঘুমের ডিস্টার্ব হবে, প্রাইভেট পড়া নষ্ট হবে এ জন্য নামাজ পড়তে দেন না।

ক্লাসের বাইরের কোনো পড়া যেমন কোরআন শরিফ, ইসলামী সাহিত্য পড়তে দেন না। ফলে ছোটবেলা থেকেই শিশুর মনে গেঁথে যায়- ধর্ম একটি ঐচ্ছিক ব্যাপার। বুড়োদের ব্যাপার। ফলে তরুণ বয়সেও ধর্মে-কর্মে তাদের চরম অবহেলা দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়ায় গিয়ে দাঁড়ালেই এ কথার সত্যতা পাবেন। দিন-দুপুরে রোজা না রেখে খাচ্ছে তরুণরা, প্রকাশ্যে অশ্লীলতায় ডুবে আছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা। আর শেষ কবে নামাজ পড়েছিলো তা তো মনেও করতে পারবে না অনেকে।

সন্তানের বিপথে চলার জন্য বাবা-মা বেশি দায়ী। আপনার সন্তানকে যদি বিপথে দেখতে না চান, তাহলে এখন থেকেই ছোট্ট সোনামনিকে রোজায় অভ্যস্ত করুন। তাকে বোঝান, রোজা মানে শুধু না খেয়ে থাকা নয়। রোজা হলো, সব ধরনের অন্যায় থেকে, ফাঁকি দেয়া থেকে বিরত থাকা।

সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করুন। নামাজি মানুষ কখনো মিথ্যা বলতে পারে না, ধোঁকা দিতে পারে না এ ধরনের কথা শিশুর মনে গেঁথে দিন। স্মার্টফোন-আসক্ত এ প্রজন্মের শিশুদের আপনি ধর্মানুরাগী হিসেবে কবুল করুন হে আল্লাহ।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর