আপনি পড়ছেন

হে আল্লাহ! আজ আমরা পনেরতম রোজা পালন করছি। আমাদের রোজাগুলো আপনি কবুল করে নিন। ভুলভ্রান্তি কিছু থাকলে আপনার রহমান-রহিম নামের অসিলায় মাফ করে দিন। আমাদেরকে করোনার আজাব থেকে মুক্তি দিন। সব কিছু আবার শান্ত স্বাভাবিক করে দিন।

diet in ramadan

পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো ক্ষুধার কষ্ট। এই ক্ষুধার জন্যই আমাদের এত পরিশ্রম এত ছুটোছুটি। পেটপুরে দুটো খাওয়ার জন্য কি না করে মানুষ। এমনও শোনা যায়, পেটের জ্বালা নিভাতে পেটের সন্তানকেই বিক্রি করে দেয় মানুষ। রোজার আগে একটি সংবাদে দেখলাম, খেতে না পেয়ে দরিদ্র বাবার এক হতভাগ্য সন্তান গলায় ফাঁস দিয়েছে, আরেক মা সন্তানের খাবারের জন্য নিজের মাথার চুল বিক্রি করে দিয়েছে।

একজন মানুষ যতক্ষণ না নিজে ক্ষুধায় কষ্ট পাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে কোনোভাবেই ক্ষুধার জ্বালা কেমন তা বোঝানো যাবে না। মানুষের ক্ষুধার কষ্ট কী তা বোঝার জন্যও নবীজি সা. অনেক সময় না খেয়ে থাকতেন। বেশিরভাগ সময় তিনি নিজের খাবার অন্যকে দিয়ে অনাহারে কাটাতেন।

হাদিস শরিফে পাওয়া যায়, গরীব সাহাবিরা ক্ষুধার কষ্ট সইতে না পেরে পেটে পাথর বাঁধতেন, নবীজি তাদের কষ্ট অনুভব করার জন্য না খেয়ে পেটে পাথর বেঁধে দিনের পর দিন মাসের পর মাস কাটিয়ে দিতেন।

হে আমার রোজাদার ভাই! আমি আপনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকি। দুপুরের পর থেকে ক্ষুধার মাত্রা বাড়তে থাকে। এক সময় মনে হয়, আর যেনো পারছি না। মাঝে মাঝে এমনও হয়, কাজকর্ম সব বাদ দিয়ে অপেক্ষা করতে হয় ইফতারের জন্য। আমাদের এই কষ্ট তখনই স্বার্থক হবে যখন ভাববো, আমাদের আশপাশে যারা না খেয়ে আছে তাদেরও ঠিক এমনই কিংবা এর চেয়েও বেশি কষ্ট হয়।

তো এই ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে দু’ মুঠো খাবার নিশ্চিত করা একজন রোজাদারের কর্তব্য। আর এ জন্যই আল্লাহ তায়ালা সামর্থ্যবানদের ওপর জাকাত-সদকাতুল ফিতরসহ দান-খয়রাত ফরজ করেছেন।

আমরা যদি দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়তে না পারি, ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে না পারি, তাহলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে যত বড় মুত্তাকিই হই না কেনো, জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারব না। সূরা দাহারে আল্লাহ বলেন, ‘ফেরেশতারা জাহান্নামীদের জিজ্ঞেস করবে, ‘কেনো তোমরা জাহান্নামী হলে? জাহান্নামীরা বলবে, আমরা ধার্মিক ছিলাম না। আর ক্ষুধামুক্ত সমাজ গড়ার কর্মসূচি আমাদের অর্থব্যবস্থায় ছিলো না।’

এর চেয়ে বড় ভংঙ্কয় কথা আর কী হতে পারে। আমাদের সব ধর্মকর্ম বিফলে যাবে, যদি ক্ষুধামুক্ত সমাজ গড়তে না পারি। মনে রাখবেন, সারাদিন না খেয়ে থাকা, সারারাত নামাজ পড়া অনেক সহজ, নিজের কষ্টার্জিত একটি পয়সা খোদার রাহে অন্যের কল্যাণে বিলিয়ে দেয়া সত্যিই বড় কষ্টের।

তো এই কষ্ট সয়ে আমরা যদি দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়ার কর্মসূচি নিতে পারি, আশা করার যায় এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর পরই অপরূপ জান্নাত আল্লাহ আমাদের দান করবেন।

হে আল্লাহ! এই পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে পৃথিবী থেকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য এই শব্দগুলো মুছে দেয়ার শক্তি আমাদের দিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর