ওষুধ প্রশাসন, এসকেএফ ও বেক্সিমকো: কার দাবি সঠিক

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কার্যকর ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে রেমডেসিভিরকে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র জরুরি ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে ওষুধটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছেন। সেইসঙ্গে দ্বিতীয় দেশ হিসেবে জাপানও ওষুধটি প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ভালো পাওয়া যায় এ রকম সম্ভাব্য কয়েকটি ওষুধ আগে থেকেই উৎপাদনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে দেশীয় কয়েকটি কোম্পানি।

গিলিয়ার্ড সায়েন্সেস উদ্ভাবিত রেমডেসিভির ওষুধ

তারা আগেই জানিয়েছিল, ওষুধগুলো উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন তারা, যাতে কার্যকারিতা প্রমাণ হলে এবং সরকার অনুমোদন দিলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরবরাহ করা যায়।

এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসন এফডিএ সম্প্রতি দেশটির নামকরা কোম্পানি গিলিয়ার্ড সায়েন্সেস উদ্ভাবিত ইবোলার ওষুধ রেমডেসিভির জরুরি ক্ষেত্রে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহারের অনুমতি দেয়।

এর পর গত ৩ মে ডিরেক্টর জেনারেল অব ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিজিডিএ) জানায়, দেশের ছয়টি কোম্পানিকে করোনার সম্ভাব্য ওষুধ রেমডেসিভির উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো- বেক্সিমকো, এসকেএফ, ইনসেপ্টা, স্কয়ার, বীকন ও হেলথকেয়ার।

এ অবস্থায় গত শুক্রবার (৮ মে) ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানাধীন গণমাধ্যম ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায় যে, দেশে প্রথমবারের মতো করোনার সম্ভাব্য ওষুধ রেমডেসিভিরের জেনেরিক তথা রেমিভির নামে ওষুধ বাজারে এনেছে একই গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এসকেএফ। এর পর দেশের অন্যান্য গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।রেমিভির নামে রেমডেসিভির ওষুধ বাজারে আনার দাবি করেছে এসকেএফ

এসকেএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিমিন হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটে দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। তবে এই সংকটে আমরা দেশবাসীকে একটা সুখবর দিতে চাই, আর সেটা হলো- বিশ্বে বর্তমানে করোনার একমাত্র স্বীকৃত ওষুধ রেমডেসিভির উৎপাদনে সক্ষম হয়েছি।

তবে এসকেএফের এমন দাবির প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের আরেক শীর্ষ গ্রুপ বেক্সিমকো ফার্মা। গতকাল শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানটি এ প্রতিবাদ জানিয়ে দাবি করে, এসকেএফ নয়, বরং তারাই প্রথম জেনেরিক ওষুধ উৎপাদন করেছে।

এতে আরো দাবি করা হয়, প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র কোম্পানি হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাই ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে (ডিজিডিএ) পরীক্ষা ও অনুমোদনের জন্য ওষুধটির চূড়ান্ত নমুনা জমা দিয়েছে।

কোম্পানিটির বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, গত ৮ মে ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ ও পরদিন ছাপা সংস্করণে (পরে অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়) এসকেএফের প্রথম রেমডেসিভির ওষুধ বাজারে আনার ব্যাপারে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে- আমরা মনে করি, তা বিভ্রান্তিকর ও তথ্যগতভাবে ভুল। আর জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে এই বিভ্রান্তি নিরসনের জন্যই এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।

বেক্সিমকো ফার্মা বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, জেনেরিক এই ওষুধটি উৎপাদনের পর যাবতীয় অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। এর পরই পরীক্ষা ও অনুমোদনের জন্য গত ৭ মে ওষুধ প্রশাসনে চূড়ান্ত নমুনা জমা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ বা বিশ্বের যেকোনো কোম্পানি কোনো ওষুধ সরবরাহ করতে গেলে তার আগে এই অনুমোদন গ্রহণের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এদিকে, সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এসকেএফসহ মোট ৮টি কোম্পানিকে নমুনা তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে এসকেএফ মৌখিকভাবে তাদের জানিয়েছে, কোম্পানিটি ওষুধের নমুনা তৈরি করেছে।

বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যালস লিমিটেড

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্বাক্ষরিত গতকাল শনিবারের ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১০ মে (আজ রোববার) এসকেএফ তাদের ওই নমুনা আমাদের কাছে জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছে। নমুনা পেলে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবে ওই ওষুধের ট্রায়াল হবে। এর পর ওষুধটির কার্যকারিতা দেখা সাপেক্ষে বাজারজাতকরণের অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তবে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর গতকাল রাতেই মোহাম্মদ রুহুল আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা বিবৃতির দেওয়ার পর বিকেলে (শনিবার) এসকেএফের পক্ষ থেকে নমুনা জমা দেওয়া হয়েছে। আর বেক্সিমকো ফার্মা তারও আগেই তাদের নমুনা জমা দিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখন উল্লিখিত দুটি কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রাপ্ত নমুনা ল্যাবে পরীক্ষার পর বাজারজাত করার অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’