করোনা নির্মূলে কার্যকর ইউভিসি রশ্মি

আল্ট্রাভায়োলেট সি (ইউভিসি) রে অর্থাৎ অতিবেগুনী রশ্মির সি ক্যাটাগরিটি মরণঘাতী করোনাভাইরাস নির্মূলে কার্যকর বলে দাবি করছে যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়ায় অবস্থিত সেন্টার ফর রেডিওলজিক্যাল রিসার্চ সেন্টার কর্তৃপক্ষ। সংস্থার পরিচালক ডেভিড ব্রেনার বলেন, আমরা এমনভাবে এর ব্যবহার করতে চাচ্ছি, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়, কিন্তু ভাইরাস মেরে ফেলবে।

আল্ট্রাভায়োলেট সি রশ্মির বৈদ্যুতিক ল্যাম্প

ইউভিসি রশ্মি নির্গত করে এ রকম বাতি চিকিৎসাশাস্ত্রে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, টিউমারের চিকিৎসায় এর জুড়ি মেলা ভার। করোনাভাইরাসের এই মহামারিতে এই প্রযুক্তিতে এসেছে এক বিপ্লব। গবেষকরা এর মাধ্যমে ভয়ঙ্কর এই ভাইরাস কীভাবে নির্মূল করা যায় তা খতিয়ে দেখছেন।

এই ইউভিসি রশ্মি ব্যবহারে বিপদও অনেক বেশি। কারণ এটি খুব বিপদজ্জনক। এর ভুল প্রয়োগে ত্বকে ক্যান্সার হতে পারে। চোখে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। এটি কেবল তখনই ব্যবহার করা যাবে যখন কোনো মানব উপস্থিতি থাকবে না।

সেন্টার ফর রেডিওলজিক্যাল রিসার্চ সেন্টার প্রাথমিকভাবে নিউইয়র্কের সাবওয়ে স্টেশনগুলো ও ট্রেনগুলো ভাইরাসমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা রাতের বেলায় যখন কোনো মানুশের উপস্থিতি থাকবে না তখন ইউভিসি ভাল্বগুলো জ্বালিয়ে টেস্ট করে দেখবেন- এটি করোনাভাইরাসের ওপর কী কী প্রভাব ফেলে।

ডেভিড ব্রেনার বলেন, আমরা ক্ষতিকর এই রশ্মিটির ক্ষতির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এনে তারপর পরীক্ষা করবো। শুরুতে আমরা ২২২ ন্যানোমিটার লম্বা তরঙ্গের রশ্মি ব্যবহার করবো। এই পরিমাণ ত্বকের জন্য ক্ষতিকর নয় এবং ভাইরাসও এতে মরে যাবে। এই তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রশ্মি ত্বক ভেদ করেও ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। তাই বেশ নিরাপদই বলা যায়।

গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ রকম কিছু বলতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে মিডিয়ার সমালোচনার স্বীকার হয়েছিলেন বলে জানায় বার্তাসংস্থা এএফপি। সেবার তিনি বলেছিলেন, করোনাভাইরাস অতিবেগুনি রশ্মিতে মারা যায়। মানবদেহে এর প্রয়োগে সফলতা পাওয়া যাবে।

প্রতীকী ছবি

ট্রাম্প মূলত প্রাকৃতিক অতিবেগুনি রশ্মির কথা বলেছিলেন। ডেভিড ব্রেনার বলেন, প্রকৃতিতে যেসব আলট্রাভায়লেট রশ্মি পাওয়া যায় তারমধ্যে সি ক্যাটাগরির কোনো রশ্মি পাওয়া যায় না। এটি ল্যাবে বিশেষ প্রক্রিয়ায় উৎপাদন করতে হয়।

তিনি বলেন, পরীক্ষা করে আমরা দেখেছি এই রশ্মির ব্যবহারে কিছু সময়ের মধ্যেই কোনো তলের ওপর থাকা করোনাভাইরাসের মৃত্যু হয়। আমাদের আগামী পরিকল্পনা বাতাসে থাকা ভাইরাসের ওপর এর প্রয়োগ করে ফলাফল পর্যালোচনা করা। এসব টেস্ট আমরা করছি, যাতে করে মানবদেহে এর সব রকম ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানো যায়।

জানা যায়, গবেষকরা ইতোমধ্যে নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ইউভিসি রশ্মি গিনিপিগের ওপর প্রয়োগ করে দেখেছেন। প্রতিদন আট ঘণ্টা করে সপ্তাহে পাঁচ দিন তারা এই কাজ করেছেন। এ রকম করে ৪০ সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পর গবেষকরা গিনিপিগের শরীরে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখেননি। এমনকি অতিবেগুনী এই রশ্মি চোখেরও তেমন কোনো ক্ষতি করেনি বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

তবে এই গবেষণা আরো ২০ সপ্তাহ চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে।