আপনি পড়ছেন

আজ ১৭ই রমজান। ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ। হিজরি দ্বিতীয় সনের রমজান মাসের ১৭ তারিখে বদর প্রান্তরে রাসুল (সা.) এর নেতৃত্বে মক্কার কুফরি শক্তির বিরুদ্ধে যে সশস্ত্র যুদ্ধ হয়, ইতিহাসে তাই বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত। ইসলামের ইতিহাসে এটি প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ। মক্কার কাফেররা রাসুল (সা.) এবং মুমিনবাহিনীকে মক্কা থেকে বের করে দিয়েই চুপ করে বসে থাকেনি, তারা ইসলামকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার জন্য নানা ফন্দি আঁটতে থাকে।

badar

এক পর্যায়ে আবু জাহেল ও আবু সুফিয়ানরা সিদ্ধান্ত নেয়, এখনই যদি মুহম্মদের বানিহীকে নিঃশেষ করা না যায় তাহলে এ বাহিনীর সঙ্গে আর কুলিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। যেই ভাবা সেই কাজ। আবু জাহেল এক হাজার সুসজ্জিদ প্রশিক্ষিত সৈন্য নিয়ে বদরপ্রান্তরে এসে মদিনা আক্রমণের জন্য অপেক্ষা করে। এ খবর জানতে পেরে রাসুল (সা.) মাত্র তিন শত তের জন নিরস্ত্রপ্রায় সাহাবি নিয়ে এ বিশাল সৈন্যবাহিনীর মোকাবেলার জন্য বেরিয়ে পড়েন।

যুদ্ধ শুরুর আগে রাসুল (সা.) আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে কান্নাকাটি করেন। বলেন, ওগো আল্লাহ! আজ তোমার প্রতিশ্রুত সাহায্য বড়ই প্রয়োজন। আজ যদি এ কয়জন মুমিন বান্দা মরে যায়, তাহলে তোমার দ্বীন প্রচারের জন্য আর কোনো মানুষ থাকবে না। তোমার দ্বীনের স্বার্থে তুমি আমাদের বিজয় দান করো।

আল্লাহর রাসুলের দোয়া কবুল করে আসমান থেকে বিশেষ ফেরেশতা নাজিল করে আল্লাহ তায়ালা মুমিনবাহিনীকে সাহায্য করেন। এ সাহায্যের কথা আবার সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ কোড করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদের বদরে সাহায্য করেছেন অথচ সেদিন তোমরা ছিলে অসহায়।’

বদরের এ ঘটনা থেকে মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় বিষয় হলো- মুসলিম উম্মাহ এমন একটি জাতি, যে নীরবে-নিভৃতে অত্যাচার-অনাচার-জুলুম, বিশেষ করে ইসলামের অবমাননা সহ্য করাকে ভয়াবহ গোনাহ মনে করে। প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় কর্তব্য। পাশাপাশি তাদের এ কর্তব্য পালনের জন্য আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা করা একান্ত জরুরি। কারণ আল্লাহ সাহায্য ছাড়া যত কিছুই থাক কোনো কাজ হবে না।

মুসলমান কখনো জাগতিক উপায়-উপকরণ কিংবা সম্পদের ওপর ভরসা করে না। তারা সব সময় আল্লাহর ওপর ভরসা করে। তার মানে এ নয় যে, উপায় উপকরণ ব্যবহার করা যাবে না।

বদরের ঘটনায়ও দেখা যায়, মুসলিম সৈন্যবাহিনী কম থাকায় রাসুল (সা.) নানা কৌশল অবলম্বন করেন। রাসুল (সা.) সৈন্যদের বলেন, একদল সৈন্য তীর ছুড়ে পেছনে চলে আসবে। তখন পেছন থেকে আরেক দল সৈন্য সামনে গিয়ে তীর ছুড়বে। যাতে শত্রুপক্ষ বুঝতে পারে একই লোক বার বার তীর ছুড়ছে না। বরং মুসলিম মুজাহিদের সংখ্যা অনেক বেশি। তারা একদলের পর একদল এসে তীর ছুড়ে যাচ্ছে।

যুদ্ধের আগে রাসুল (সা.) বলেন, আমরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আলাদা আলাদা রান্না করব। আলাদা তাঁবু খাটাবো। অনেক বেশি টয়লেট বানাবো। যেন শত্রু পক্ষ দূর থেকে দেখে বুঝতে পারে সংখ্যায় আমরা অনেকজন।

একদিকে রাসুল (সা.) কান্নায় বিগলিত হয়ে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেছেন, অন্যদিকে সমসাময়িক সব ধরনের যুদ্ধ কৌশলও তিনি (সা.) প্রয়োগ করেছেন। আফসোস! আজ একদল মুসলমান শুধু মোনাজাত করে বিশ্ব বদলাতে চায়। আরেকদল মুসলমান মোনাজাত ছাড়া পৃথিবীতে নেতৃত্ব করতে চায়। ফলে কেউই সফলতার মুখ দেখছে না। 

মুসলমানরা যদি আবার তাদের হারানো দিন ফিরিয়ে আনতে চায়, তাহলে দোয়া এবং দাওয়া দুটোই সঙ্গে করে এগুতে হবে। হে আল্লাহ! বদরের চেতনায় মুসলমানদের জেগে উঠার তাওফিক দিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর