আপনি পড়ছেন

হে আল্লাহ! করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে মুসলমান তথা ঈমানদারা রোজা পালন করছেন। ভয়ংকর এই মহামারিতে তোমার বান্দারা আজ ভীত, আতঙ্কিত। তোমার গড়া সুন্দর পৃথিবীতে নেই আজ মানুষের কোলাহল। দিন শেষে জন্তু-জানোয়ার যেমন গর্তে লুকিয়ে থাকে, আজ পুরো পৃথিবীর মানুষও ঘরে বন্দি। জানি, আমাদের কারণেই আজ এই মহামারি আমাদের ঘিরে ধরেছে। জানি, এ থেকে মুক্তির উপায় হলো কোরআনের পথে ফেরা। 

taraweeh namaz

মানুষ এখন আর মানুষ নেই। উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন করে মানুষ আজ জন্তু-জানোয়ারের চেয়েও খারাপ হয়ে গেছে। তাই এই ধরনের দুর্যোগ আসা যেন অবধারিত হয়েছিল। মানুষ যাতে ভুল বুঝতে পেরে নিজেদের সংশোধন করে- এই মহামারি সে শিক্ষাই দিচ্ছে। 

মানুষ কখন মনুষত্ব হারিয়ে জন্তু-জানোয়ারের পর্যায়ে পৌঁছে- কোরআনেই তুমি তা বলে দিয়েছো। যখন মানুষ তোমার দেয়া চোখ দিয়ে তোমার সৌন্দর্য দেখে শোকরিয়া আদায় করে না, তোমার দেয়া কান দিয়ে তোমার মায়াবি সুর শোনে না, তোমার দেয়া হৃদয় দিয়ে সৃষ্টিরহস্য গভীরভাবে উপলদ্ধি করে না, তাদের সম্পর্কে তুমি বলেছো- ‘উলাইকা কাল আনআম। বালহুম আদল্ল। ওইসব মানুষ হলো- চারপেয়ে জানোয়ারের মতো। না তার চেয়েও বেশি নিকৃষ্ট।’

মানুষ যখন কোরাআন ছেড়ে দেয় তখন সে তার আপন সত্তাকে হারিয়ে ফেলে। কোরআন মূলত মানুষের জন্য একটি এলার্ম বা মনে করিয়ে দেয়ার মেশিন। এ জন্য কোরআনের এক নাম জিকির। জিকির মানে হলো বার বার মনে করা। কোরআন মানুষকে মনে করাতে চায়- হে মানুষ! তোমার একজন স্রষ্টা আছে। এ দুনিয়ার জীবনেই তোমার জন্য শেষ নয়। পরকালে তোমাকে জবাব দিতে হবে। তাই জীবনের সবক্ষেত্রে সতর্ক-সংযত থাকো। দমে দমে প্রভুর স্মরণে বিভোর থাকো।

কোরআন-ভোলা মানুষ আল্লাহ-পরকাল ভুলে জন্তু-জানোয়ারে পরিণত হয়। হায়! আজ আমরা কোরআন ছেড়ে দিয়েছি। তাই আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর করোনার গজব নাজিল করেছেন। এ গজব থেকে বাঁচতে চাইলে আবার আমাদেরকে কোরআনের আলোয় ফিরে আসতে হবে। কোরআনের আলোয় ফিরে আসার জন্য রমজান মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কোনো মাস নেই।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘শাহরু রামাদান আল্লাজি উনজিলা ফিহিল কোরআন। হুদাল্লিন্নাসি ওয়া বায়্যিনাতিম মিনাল হুদা ওয়াল ফোরকান। রমজান মাস সে মহিমান্বিত মাস, যে মাসে নাজিল করা হয়েছে পবিত্র কোরআন। আর কোরআন এমন একটি গ্রন্থ, যেখানে সত্য মিথ্যার পার্থক্য করা হয়েছে সুস্পষ্টভাবে।’

হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেছেন, কোরআন এবং রোজা বান্দার পক্ষ নিয়ে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। কোরআন বলবে, হে আল্লাহ! আপনার বান্দা সারারাত আমাকে নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করেছে, তাকে আমি ঘুমুতে দেইনি। আজ তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন।

রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আপনার বান্দাকে সারাদিন আমি খাওয়া ও কামনা থেকে বিরত রেখেছি। তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। রাসুল (সা.) বলেন, সেদিন আল্লাহ তায়ালা রোজা এবং কোরআনের সুপারিশ কবুল করে ওই বান্দাকে জান্নাত উপহার দেবেন।

পৃথিবীজুড়ে আজ যে ভয়াবহ আজাব চলছে, এ আজাব থেকে বাঁচতে হলে কোরআনে ফিরে আসা ছাড়া বিশ্ববাসীর আর কোনো দ্বিতীয় পথ নেই। তাই আসুন! বিবেকহীন পশুত্বের জীবন থেকে আমরা আলোকিত কোরআনের জীবনে ফিরে আসি। জীবনের প্রতি মুহুর্তে কোরআনের দেখানো পথে চলি।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের তাওফিক দিন। আপনি আমাদের করোনামুক্ত পৃথিবী দান করুন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসি কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর