আপনি পড়ছেন

আত্মশুদ্ধি অর্জন ও পরিশুদ্ধ জীবন পরিচালনার মাস হচ্ছে মাহে রমাদান। পবিত্র এ মাসে ধর্মপ্রাণ মানুষেরা যেন পরিশুদ্ধ জীবন গড়তে পারে সেজন্য মাসব্যাপী মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন। তাইতো এ মাসের বরকতে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের দুয়ার খুলে দেন জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন। এমনকি মানুষের প্রকাশ্য শত্রু  শয়তানকেও শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখেন।

diet in ramadan

আরবিতে বলা হয় সিয়াম, অর্থ ‘বিরত থাকা, ‘আত্মসংযম করা ইত্যাদি। অর্থ্যাৎ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পানাহার, দাম্পত্য মিলন ও রোজা ভঙ্গ হওয়ার সকল বিষয়াদি থেকে বিরত থাকার নামই হচ্ছে সিয়াম। মুমিনের আত্মশুদ্ধির বিশেষ মাধ্যম হচ্ছে ‘সাওম বা রোজা পালন করা। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মার আধ্যাত্মিক শক্তি বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়, যার ফলে কুপ্রবৃত্তি, কুবাসনা দমন হয়।

অপরদিকে ‘রমজ শব্দ থেকে এসেছে ‘রমজান। ‘রমজ শব্দের অর্থ হলো জ্বালিয়ে দেয়া, পুড়িয়ে দেয়া। পবিত্র রমজান মাসের রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষ পরস্পরের মধ্যকার হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা ও গুনাহসমূহকে জ্বালিয়ে দেয়, পুড়িয়ে দিয়ে এবং পাপমুক্ত করে। পাশাপাশি মানুষের মনকে করে তোলে নির্মল, কোমল ও পবিত্র। আল্লাহ তাআলার করুনায় নিজেকে ক্ষমা লাভের যোগ্য করে তোলে। শুধু তাই নয়, সিয়াম সাধনার দহনে মানুষের সমস্ত পাপ-পঙ্কিলতা পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

বলা হয় হিংসা পতনের মূল। আর রোজা মানুষকে হিংসা বিদ্বেষ থেকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। সেজন্যই তো রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সবরের মাস অর্থাৎ রমজান মাসের রোজা এবং প্রতি মাসের তিন দিনের আইয়্যামে বীজের রোজা অন্তরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেয়।’ মুসনাদে আহমদ ও ইবনে হিববান।

ইসলাম অন্যের প্রতি হিংসা করা বা প্রতিহিংসাপরায়ণ হওয়াকে সম্পূর্ণরূপে হারাম বা নিষিদ্ধ করেছে। হিংসা-বিদ্বেষ মানুষের শান্তিপূর্ণ ব্যাক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে অত্যন্ত বিষময় করে তোলে। আর সিয়ামের মাধ্যমে মানুষ তার নফস ও শরীরকে পাপমুক্ত রাখতে সক্ষম হয়। দীর্ঘ এগারো মাসের পাপ পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি লাভের অপূর্ব সুযোগ এ রমজান মাস।

আমাদেরকে হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, অশান্তি প্রভৃতি সামাজিক অনাচারের পথ পরিহার করে পরিশীলিত এবং পারস্পরিক ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে হবে। সেজন্যই তো রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকবে। হিংসা মানুষের নেক আমল বা পুণ্য এমনভাবে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন লাকড়িকে জ্বালিয়ে নিঃশেষ করে দেয়।’ আবু দাউদ।

নিজের যতটুকু আছে, ততটুকু নিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কেননা অন্যের দিকে তাকিয়ে বিদ্বেষ পোষণ করে হিংসার আগুনে জ্বলেপুড়ে ক্ষতি হওয়া ছাড়া আর কোনো লাভ নেই। সুতরাং আমরা যদি আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে চাই তাহলে অবশ্যই সর্বাবস্থায় হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে চলতে হবে। আর পবিত্র রমাদান মাস আত্মশুদ্ধি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। আসুন আমরা পবিত্র এ মাহে রমাদানের সিয়াম সাধনার মধ্যদিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ, পাপচার, কামাচারমুক্ত সুন্দর জীবন পরিচালনা করি।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর