আপনি পড়ছেন

কে কে শৈলজা, ভারতের কেরালা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। রাজনীতিতে আসার আগে তিনি স্থানীয় একটি হাইস্কুলে বিজ্ঞান পড়াতেন। মরণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় তার প্রশংসাবাণী ভারতের বাইরে অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।

kerala health minister k k shailazaভারতের কেরালা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজা

ঘটনার শুরু ২০ জানুয়ারি। চীনে সে সময় ভাইরাসটি খুব ভালোভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে। অনলাইনে বিভিন্ন সংবাদ পড়ে এর ভয়াবহতা আঁচ করতে পারেন শৈলজা। সংশ্লিষ্ট এক অধীনস্থ সহকর্মীকে ফোন করলেন তিনি। প্রশ্ন করলেন, ভাইরাসটি কি আমাদের দেশেও আসবে?

জবাবে জানতে পারলেন, আসবে অবশ্যই। আর তাই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেরি করেননি কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেদিন থেকেই ব্যবস্থা নিতে শুর করে দেন রাজ্যে।

সেই ঘটনার পর চার মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। ভাইরাসটি গ্রাস করেছে বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রকে। কেড়ে নিয়েছে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ। এমনকি ভারতেও প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। অথচ কেরালায় ৫২৪ জন আক্রান্ত ও ৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে। পূর্ব থেকে পদক্ষেপ নেওয়ায় রাজ্যটিতে বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে পড়েনি ভাইরাসটি।

জানা যায়, কেরালার মোট জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন কোটি। রাজ্যের মানুষের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৬৮৪ ডলার। যুক্তরাজ্যের মোট জনসংখ্যা কেরালার দ্বিগুণ অথচ মাথাপিছু আয় ২০ গুণেরও বেশি। ৪৯ হাজার ডলার। কেরালার চেয়ে দশগুণ বেশি জনসংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। মাথাপিছু আয় ৬২ হাজার ডলার। করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুতেও শীর্ষে দেশটি।

অথচ বিশ্বের এই দুই শক্তিশালী রাষ্ট্র থেকেও অনেক সফলতার পরিচয় দিয়েছে কেরালা। এর জন্য বেশ প্রশংসিত হয়েছেন শৈলজা। ইতোমধ্যেই অনেকে তাকে করোনাভাইরাসের ঘাতক ও রকস্টার স্বাস্থ্যমন্ত্রী নামে ডাকতে শুরু করেছেন।

চলুন জেনে নেই, ভাইরাসটি দমাতে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে কেরালা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

কেরালায় করোনাভাইরাসে রোগী শনাক্ত হওয়ার আগেই অনেকগুলো বৈঠক সেরে ফেলেছিলেন শৈলজা। ২৪ জানুয়ারির এক মিটিংয়ে তারা একটি কন্ট্রোল রুম প্রতিষ্ঠা করেন এবং রাজ্যের ১৪টি জেলার প্রত্যেকটিতেই নিজেদের পর্যায় থেকে একই কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয় চিকিৎসা কর্মকর্তাদের।

পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেখানো পথে, ২৭ জানুয়ারি উহান থেকে আসা একটি বিমানে তারা প্রথম করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সন্ধান পায়। গোটা ভারতেই তা প্রথম ঘটনা ছিল।

সেই সময়ে কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আমাদের কানে ভাইরাসটির বিষয়ে খাবর আসার পর থেকেই আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছিলাম। এর আগে নিপা ভাইরাস আমাদের এখানে ছড়িয়ে পড়েছিল। আমরা সেই অভিজ্ঞতাই এখানে কাজে লাগাতে চাই।

এরপর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকের ঘটনা। ইতালি থেকে গোটা এক সংক্রমিত পরিবার নিজেদের পরিচয় গোপন করে ভাইরাস শনাক্তের কাজে নিয়োজিত থাকাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ি চলে আসে। নজরদারি দলের একজন আন্দাজ করতে পারেন যে, ওই পরিবারের একজন ভাইরাসে সংক্রমিত। পরে তাদের খুঁজে বের করতে বিশেষ টিম গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

অনলাইন ও অফলাইনে বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করে পরে খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।

মার্চে আরো একটি ধকলে পড়ে কেরালা। মধ্যপ্রাচ্য থেকে শ্রমিকরা ফিরতে শুরু করলে নতুন শঙ্কা দেখা দেয়। পরে শৈলজা রাজ্যটির সঙ্গে চারটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ করে দেন। এ সিদ্ধান্ত জারি করে নিজের দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি।

রাজ্যে ভাইরাসটি মহামারিতে রূপ নেয়ার হুমকি তৈরি হলে তিনি ১ লাখ ৭০ হাজার অধিবাসীকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার নির্দেশনা দেন। এ সময় স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত পরিদর্শনের মাধ্যমে কঠোর নজরদারি করতে থাকেন। যাদের বাড়িতে টয়লেট নেই তাদের বিশেষভাবে তৈরি এক আইসোলেশন সেন্টারে রাখার ব্যবস্থা করে দেয় রাজ্য সরকার। ধীরে ধীরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা নাগরিকদের সংখ্যা ২১ হাজারে নামিয়ে আনেন তারা।

জানা যায়, কেরালায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগেই রাজ্যের প্রতিটি জেলায় সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসার জন্য দুটি করে ডেডিকেটেড হাসপাতাল এবং প্রতিটি মেডিকেল কলেজে ৫০০টি করে বেড প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেন শৈলজা।

এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় বড় একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে জনগণ। এ রাজ্যে স্বাক্ষরতার হার যথেষ্ট ভালো হওয়ায় জনগণকে বোঝানো সহজ হয়েছে। কেন বাড়ি থাকতে হবে, লোকে তা ভালোভাবেই বোঝেন। তাদের বোঝানো সহজ।

কেরালা রাজ্য কর্তৃপক্ষ ভাইরাসটি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের অবস্থা নাজেহাল। দেশটিতে কোনোভাবেই ভাইরাসটির সংক্রমণ থামানো যাচ্ছে না। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে ৭৯ হাজার ৩৩৩ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে দুই হাজার ৫৬৪ জন।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.