আপনি পড়ছেন

গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের তাণ্ডব শেষ হতে আরো অনেক সময় বাকি আছে। বিশ্বব্যাপী এ সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই এমন কথা বলছেন তারা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাইরাসটি যে পরিমাণ সংক্রমণ ঘটিয়েছে তা নির্দিষ্ট দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশেরও কম। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের হার্ড ইমিউনিটি পেতে হলে অন্তত দেশের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ সংক্রমিত হতে হবে।

coronavirus china 1গত জানুয়ারি মাসে চীনের উহানের একটি ছবি

ভাইরাসটি সবচেয়ে ভয়াবহ সংক্রমণ ঘটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে। মে মাসের শুরুর দিকে সেখানে মোট ২০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। এর মানে এখনো অধিকাংশ মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। সে তুলনায় ইউরোপের দেশগুলো বিশেষ করে সুইডেন ও ব্রিটেনে সংক্রমণ কম হয়েছে। দুই দেশের বিভিন্ন শহরে সাত থেকে ১৭ শতাংশ সংক্রমণ হয়েছে।

চীনে এ বিষয়ে এখনো পরিসংখ্যান কার্যক্রম চলছে। বিস্তারিত কিছু তারা জানায়নি। তবে ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ নিজেদের কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে চাইছে।

coronavirus picপ্রতীকী ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ডে অবস্থিত টি এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের সংক্রামক বিশেষজ্ঞ মাইকেল মিনা বলেন, শীগগিরই করোনাভাইরাসের হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হচ্ছে না। অনেক সংক্রামক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, একটি জনসংখ্যার ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ একটি মাহামারিতে সংক্রমিত হওয়ার পর হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়। বিষয়টি এমন যে, সংক্রমণের পরিমাণ এমন আকারে পৌঁছে যাবে যে তা আর নতুন করে মহামারিতে রূপ নিতে পারবে না।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে এই মুহূর্তে সেদিকে ধাবিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর সংক্ষিপ্ত সময়ে সে লক্ষ্যে পৌঁছানোও যাবে না। হার্ড ইমিউনিটির দিকে একটি রাষ্ট্র ধাবিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার প্রথমদিকে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল তার থেকেও মারাত্মক পরিস্থিতির তৈরি হবে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, করোনাভাইরাস থেকে যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের রক্তের নমুনা নিয়েও চলছে গবেষণা। একজন মানুষ দ্বিতীয়বার সংকমিত হলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ঠিক কীভাবে প্রতিক্রিয়া করে তা এখনো অজানা।

ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের বায়োলজির অধ্যাপক কার্ল বার্গস্ট্রম বলেন, করোনাকালে বিশ্বব্যাপী শনাক্তকরণ টেস্টের ফলাফল নিয়ে গবেষণা হয়েছে। এই ধরনের গবেষণাকে বলা সেরিওলজিক্যাল গবেষণা। বড় বড় গবেষণায় এসব গবেষণার তথ্য বেশ কাজে দেয়। সেরিওলজিক্যাল গবেষণা অনুধাবন করে জানা যায়, ভাইরাসটি কতদূর অবধি পৌঁছেছে।

তিনি বলেন, হার্ড ইমিউনিটি বিষয়টি স্থান ভেদে একেক রকমের হবে। কারণ বিশ্বের সব স্থানে জনসংখ্যার ঘনত্ব এক না। তবে গড়ে ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ সংক্রমিত হলে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই সিস্টেমে সবাই বিশ্বাস করে যে, নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর তা নতুন করে মহামারিতে রূপ নেবে না। তাছাড়া মানুষের দেহে এর বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রাকৃতিক উপায়ে গড়ে উঠবে। যার কারণে ফের সংক্রমিত হলে ঝুঁকিও কম থাকবে। কিন্তু সে প্রক্রিয়া ঠিক কতদিনে কার্যকর হবে তা নিশ্চিত নয়।

এ প্রসঙ্গে মাইকেল মিনা বলেন, মনে করেন আপনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর একটি রুমে প্রবেশ করলেন। সেখানে ১০ জন সুস্থ মানুষ আগে থেকেই অবস্থান করছিল। আপনার মাধ্যমে তাদের তিন থেকে চারজন সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে এই রোগ থেকে সুস্থ হওয়া কিছু মানুষ থাকলে আপনার মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ কমে যায়। হার্ড ইমিউনিটিও এইভাবে কাজ করে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, যদি ৬০ শতাংশের বেশি মানুষের সংক্রমণেই হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয় তাহলে বিশ্ব এখনো অনেক দূরে সেই সিস্টেম থেকে। কারণ সবচেয়ে ক্ষতিতে পড়া নিউ ইয়র্কে হার্ড ইমিউনিটির মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। রাজ্যটির প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ২৫০ জন মারা গেছে। এখনো কোটি খানেক মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।

ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার সহকারী অধ্যাপক নাটালি ডিন বলেন, হার্ড ইমিউনিটির কথা বলা হলে সবাইকেই নিউ ইয়র্কের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হবে। সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সামর্থ্য কারো আছে?

সেরিওলজিক্যাল গবেষণার তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলগুলোতে এখনো সাত থেকে ১০ গুণ বেশি সংক্রমণের প্রয়োজন যদি তারা হার্ড ইমিউনিটির দিকে অগ্রসর হতে চায়। এতে মৃত্যুর সংখ্যাও আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যাবে।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.